ভিত্তিক প্রশ্নটি হল: প্রকাশিত বাক্য প্রকৃতভাবে কাদের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে? যারা লোকদেরকে উত্তেজিত করে তোলার মত শিক্ষা দেয় তারা সবাই দাবি করে যে প্রকাশিত বাক্য শেষ কালের লোকদের উদ্দেশ্যে, অর্থাৎ আমাদেরই উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। এটি বলে তারা এও দাবি করে যে বিগত দুই হাজার বছর পুস্তকটির পাঠকেরা আসলে কিছু বুঝে নি – কারণ তা বুঝা সম্ভব ছিল না। তারা মনে করে প্রকাশিত বাক্য হল ‘সীলমোহর করে রাখা পুস্তক’, অর্থাৎ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কেউ পুস্তকটি বুঝে নি।
কিন্তু আমরা শেষ কালে আছি বলে এখন আমরাই বুঝি। তা-ই যদি মনে করি তবে এও বলতে হয় যে লেখক যোহন নিজের কথা নিজেই বোঝেন নি, এশিয়ার সাতটি মণ্ডলী যাদের কাছে তিনি লেখেন (প্রকাশিত ১:১১), তারাও কিছু বোঝে নি। কিন্তু কিছু না বুঝে কেন তারা এই লেখা কষ্ট করে সংরক্ষিত করে রেখেছে? কেন যীশু তাদের জন্য এমন একটি লেখা পাঠিয়েছেন যা তাদের কাছে কোন অর্থ প্রকাশ করে না এবং কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্যও করে না?
যারা প্রকাশিত বাক্য এভাবে ব্যাখ্যা করে তারা পুস্তকে এমন একটি কথা বা বিষয় খুঁজে বের করে, যা বর্তমান পৃথিবীর একটি ঘটনার সাথে মিল থাকে। যেমন তারা দাবি করে যে বাইবেলের এই কথা অমুখ আধুনিক রাজনৈতিক নেতাকে বুঝায় অথবা তমুখ জাতি বা বর্তমান ঘটনা বুঝায়। এভাবে যদি একটি পদ ব্যাখ্যা করি তবে আমরা এও দাবি করি যে আগের পাঠকেরা (যারা এই বর্তমান রাজনৈথিক নেতা সম্বন্ধে জানত না) তাদের জন্য পদটি ঠিকমত বুঝা সম্ভব ছিল না। তাই দুই হাজার বছর ধরে পাঠকেরা সব ভুল বুঝছে কিন্তু আমরা – এবং শুধুমাত্র আমরাই! – তা এখন ঠিকমত বুঝি। এই ধরণের কথায় অহংকার প্রকাশ পায় এবং তা উপযক্ত মতবাদ নয়।কেন অনেকে প্রকাশিত বাক্য এভাবে ব্যাখ্যা করে? কারণ হল যে তারা মনে করে বাইবেলে এমন পদ আছে যা তাদের এই ব্যাখ্যা সমর্থন করে, যেমন দানিয়েল ১২:৮-৯: “এই সবের শেষ ফল কি হবে?” উত্তরে তিনি বললেন, “দানিয়েল, তুমি এই বিষয় নিয়ে আর চিন্তা কোরো না, কারণ শেষ সময় না আসা পর্যন্ত এই সব কথা বন্ধ করে সীলমোহর করে রাখা হয়েছে”। এই ধরণের পদ পড়ে তারা মনে করে যে প্রকাশিত বাক্য হল একটি “সীলমোহর করে রাখা পুস্তক” যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কেউ বুঝে নি। কিন্তু আমরা এখন শেষ কালে আছি বলেই আমরা তা বুঝতে পারি।যদি প্রকাশিত বাক্য এভাবে ‘সীলমোহর করে রাখা পুস্তক’ হিসাবে বোঝানো হয় তাহলে অনেক সমস্যা সৃষ্টি: বিভিন্ন ব্যক্তি এই চিন্তার ভিত্তিতে অংক করে যীশুর দ্বিতীয় আগমনের তারিখ ঘোষণা করেছেন অথবা “খ্রীষ্টারী” কাকে বুঝায়, তা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এই পর্যন্ত প্রত্যেকটি ব্যাখ্যা ভুল হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। ভুল ঘোষণার তালিকা বেশ লম্বা: “খ্রীষ্টারী” হিসাবে ঘোষিত হয়েছে: সম্রাট নীরো, সম্রাট ডোমিটিয়ান, মুহাম্মাদ, মার্টিন লুথার, ক্যাথলিক পোপ, হিটলার, স্টালীন, ব্রেষ্নেভ, সাদ্দাম হোসেন ইত্যাদি।
যীশুর দ্বিতীয় আগমনের ভুল তারিখের তালিকাও বেশ লম্বা: ১৮৪৩ খ্রীষ্টাব্দ, ১৮৪৪ খ্রীষ্টাব্দ, আমাদের যুগে ৮ আগষ্ট ১৯৮৮, ২০০০ সাল, ২০১২ সাল … প্রত্যেকবার বিশ্বাসীদের মধ্যে উত্তেজনা ও ভয়ের একটি ঢেউ সৃষ্টি হয়েছে, প্রত্যেক ঘোষিত তারিখের পিছনের বাইবেল থেকে প্রমাণ দেখানো হয়েছে – কিন্তু প্রত্যেক তারিখ মিথ্যা হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে প্রকাশিত বাক্য ‘সীলমোহর করে রাখা পুস্তক’ মনে করে ভাল কোন মতবাদ তৈরি হয় নি!আসলে “সীলহোমর করে রাখা পুস্তক” হল এমন একটি চিন্তা যা দাবি করে যে বিশ্বাসীদের ‘বিশেষ জ্ঞান বা প্রকাশ’ দরকার, তাই শুধুমাত্র কিছু বিশ্বাসীরা এটা বুঝে।
কিন্তু অন্যদের নিয়ে কি হবে? নতুন নিয়ম আমাদের এই ধরণের শিক্ষা নিয়ে সাবধান করেন। বিশেষভাবে পৌল প্রায়ই জোর দিয়ে বলেন যে বিশ্বাসীদের যা জানা দরকার তা সবার কাছে প্রকাশিত হয়েছে, অল্প মাত্র বিশ্বাসীদের বিশেষ জ্ঞান থাকবে, তা নয় (ইফিষীয়, কলসীয়)।তা ছাড়া লক্ষ্য করুন যে প্রকাশিত বাক্য পুস্তক নিজের সম্বন্ধে নির্দিষ্টভাবে বলে যে পুস্তকটি সীলমোহর করে রাখা চলবে না:
“এই বইয়ের সমস্ত কথা, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য তুমি গোপন রেখো না, কারণ সময় কাছে এসে গেছে” (প্রকা ২২:১০)। যোহনের এই কথায় প্রকাশ পায় যে তিনি মনে করতেন তার পাঠকেরা পুস্তকটি অবশ্যই বুঝবে। পুস্তকটি তাদের হাতে থাকুক, খোলা থাকুক কারণ “সময় কাছে এসে গেছে”।
0 coment rios: