আদমের পতনের পর পরই আদি পুস্তক ৩:১৫ পদে ঈশ্বর পরিত্রাণ বা উদ্ধারের মহা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন। সদাপ্রভু ঈশ্বরের বলা এই ভাববাণীতে বলা হয়েছিল যে, স্ত্রীলোকের মধ্য দিয়ে আসা বংশের একজন, অর্থাৎ যীশু মানুষ হয়ে জন্ম নেবেন এবং এই মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন। অন্যদিকে, শয়তান এবং তার বংশ এই মহা পরিকল্পনার অংশ হিসাবে থাকবে।
এই পরিকল্পনা মানবীয় বুদ্ধি-জ্ঞান দিয়ে বোঝা সম্ভব না, কারণ তা ঈশ্বরের গুপ্ত রহস্য। বাস্তবিক, এই বিষয় সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের সার্বভৌম কাজের ক্ষেত্র। যীশু নিজে তাঁর শিষ্যদের কাছে তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতা সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "যা আমার নিজের, তা আমার খুশীমত ব্যবহার করবার অধিকার কি আমার নেই?" (মথি ২০:১৫ পদ)। তিনি আবার প্রেরিত পৌলের কাছে তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতা কুমারের উপমা দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন: "একই মাটি থেকে কি কুমারের ভিন্ন ভিন্ন রকমের পাত্র তৈরী করবার অধিকার নেই- কোনটা সম্মানের (অনুগ্রহের পাত্র) কাজের জন্য বা কোনটা নীচু (অভিশাপের পাত্র) কাজের জন্য?" (রোমীয় ৯:২১-২৩ পদ দ্রষ্টব্য)। এজন্য, পৌল সার্বভৌম ঈশ্বরের কাছে অবনত হয়েছিলেন।
পবিত্র বাইবেল মানবজাতিকে ঈশ্বরের সন্তান (যোহন ১:১২; প্রেরিত্ ১৮:১০; রোমীয় ৯:২৩; ১ যোহন ৩:১০; প্রকাশিত বাক্য ২০:১২ পদ দ্রষ্টব্য) এবং শয়তানের সন্তান (রোমীয় ৯:২২; ২ পিতর ২:১২, ১৪, ১৯; ১ যোহন ৩:১০: প্রকাশিত বাক্য ২০:১২; ২১:৮ পদ দ্রষ্টব্য) এই দুই ভাগে ভাগ করেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকেরাই হচ্ছে শয়তানের সন্তান এবং শুধুমাত্র পূর্ব-নির্দিষ্ট সংখ্যালঘু (স্বল্প সংখ্যক) লোকেরা হচ্ছে ঈশ্বরের সন্তান যারা পরিত্রাণ বা উদ্ধার লাভ করবে (সখরিয় ১৩:৮; লুক ১৩:২৩-২৪; প্রকাশিত বাক্য ২০:১২ পদ দ্রষ্টব্য)। মূলত এটাই বাইবেলের শিক্ষা- যা কি না পৌলের মতবাদ এবং ক্যালভিনের মতবাদের বিষয়বস্তু (Benjamin B. Warfield: Perfectionism, in Biblical Doctrines, Baker, Grand Rapids, MI: 1962. PP. 62-64).
না
ঈশ্বরের সার্বভৌম পরিকল্পনা অনুসারে, প্রভু যীশু আদম ও তার বংশধরদের উদ্ধার বা পরিত্রাণ করতে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন। তাছাড়াও, ঈশ্বরের পূর্ব-নির্দিষ্ট সন্তানেরা (যোহন ৬:৩৯; ১৭:২: রোমীয় ৮:৩০; ২ তীমথিয় ২:১০ পদ দ্রষ্টব্য) সকলেই প্রভু যীশুর মধ্য দিয়ে উদ্ধার না পাওয়া পর্যন্ত (মথি ২৪:১৪ পদ দ্রষ্টব্য) শয়তানকে "এই জগতের দেবতা" (২ করিন্থীয় ৪:৪ পদ) হিসাবে তার ভূমিকা পালনে অনুমোদন করেছে। যখন নির্দিষ্ট সময় আসবে (প্রকাশিত বাক্য ১২:১২ পদ দ্রষ্টব্য), তখন শয়তান ও তার অনুসারীদের এবং তার সন্তানদের অপ্রয়োজনীয় মনে করে পরিকল্পনা মতই নরকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে (প্রকাশিত বাক্য ২০:১০ পদ দ্রষ্টব্য)।
এই পরিকল্পনা জগতের প্রেক্ষাপটে ৭০০০ বছরের জন্য নেওয়া হয়েছে। আদমের পতনের সময় থেকে শুরু (৪০০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) করে নোহ (৩০০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ); অব্রাহাম (২০০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ); দায়ূদ (১০০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ); যীশু (৪ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) পর্যন্ত এবং তারপরে, পূর্ব ও পশ্চিমের খ্রীষ্টিয়ান মন্ডলীগুলোর বিভক্তি (১০০০ খ্রীষ্টাব্দ) ও বর্তমান সময়কাল (২০১৫ খ্রীষ্টাব্দ) থেকে সবশেষে হাজার বছরের রাজত্বকাল না আসা পর্যন্ত চলবে। এই সময়কাল সর্বমোট ৭০০০ বছর। এই ৭০০০ বছর শেষে পরিত্রাণ বা উদ্ধারপ্রাপ্ত ঈশ্বরের সন্তানেরা নতুন মহাকাশ ও নতুন পৃথিবীতে প্রবেশ করবে (প্রকাশিত বাক্য ২১:১ পদ দ্রষ্টব্য)। অন্যভাবে, এটা হচ্ছে নতুন এদন বাগানের পুনঃস্থাপন। শয়তান প্রথম এদন বাগানে ছিল (আদি পুস্তক ৩:১ পদ দ্রষ্টব্য), কিন্তু নতুন এদন বাগানে শয়তান থাকবে না (প্রকাশিত বাকা ২২:১-৫ পদ দ্রষ্টব্য)। যেহেতু এই সময়ে শয়তানের কার্যক্রম শেষ হয়ে যাচ্ছে, সেহেতু তাকে নরকে ফেলে দেওয়া হবে (প্রকাশিত বাক্য ২০:১০ পদ দ্রষ্টব্য)।
বাইবেলে উল্লেখিত ৭ সংখ্যা দিয়ে ঈশ্বরের পূর্ণ বা খাঁটি সংখ্যা বুঝায়। ঈশ্বরের যে সন্তানেরা নতুন এদন বাগানে চিরকালের জন্য থাকবে, যা অবশ্য নতুন মহাকাশ ও নতুন পৃথিবীকে বুঝায় (প্রকাশিত বাক্য ২১:১ পদ দ্রষ্টব্য); ঈশ্বর তাদের প্রশিক্ষণ দিতে ও প্রস্তুত করতে সাত হাজার বছরের পরিকল্পনা তৈরী করেছেন, যেন তারা আর কখনও সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্য হালকাভাবে না নেয়, বরং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্য গুরুত্বপূর্ণভাবে পুরোপুরি বোঝে ও তাঁর বাধ্য থাকে। এই মহা পরিকল্পনা কার্যকর করতে পুত্র ঈশ্বরকে (প্রভু যীশুকে) নিদারুণ আত্মোৎসর্গের পথ গ্রহণ করতে হয়েছিল। ঈশ্বরের ঐকান্তিক প্রত্যাশা, তাঁর পরিকল্পনার মধ্য দিয়েই তাঁর সৃষ্টি তাঁর প্রতি বাধ্যতায় ও ভালবাসায় সৃষ্টির উদ্দেশ্য প্রতিফলিত করবে।
জগতের প্রেক্ষাপটে ৭০০০ বছর এক সুদীর্ঘ সময়, কিন্তু অনন্তকালীন প্রেক্ষাপটে তা এক মুহূর্তের ব্যাপার মাত্র (গীতসংহিতা ৯০:৪; ২ পিতর ৩:৮ পদ দ্রষ্টব্য)। অথবা বলা চলে, ঈশ্বরের অনন্তকালীন প্রেক্ষাপটে তা এমন একটা ছোট বিন্দুর মত যা দৃশ্যমান মনে হবে না।
0 coment rios: