সংবাদ শিরোনাম
লোডিং...
Menu

Wednesday, July 17, 2024

বাপ্তিস্ম কি?

বাপ্তিস্মের গ্রীক শব্দ হলো  βάπτισμα "baptisma" যা লূক ৩:৩ পদে উল্লেখিত রয়েছে, এই শব্দটির অর্থ হলো “জলে ডুবানো।” বাপ্তিস্ম  খ্রীষ্ট ধর্মের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এটা গ্রহন করা ছাড়া কেউ ঈশ্বরের রাজ্যের অংশীদারি হতে পারে না [যোহন ৩:৩;] পবিত্র বাইবেল আমাদের জানায় “যদি কেউ  ঈশ্বরের পরিবারের যোগদান করে তবে তার নতুন সৃষ্টি হয় , এটাকে নূতন জন্মও বলা হয় “[যোহন ৩:৫; ২করিন্থিয় ৫:১৭; ]। বাপ্তিস্ম অর্থ শুধুমাত্র জলে স্নান নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। জলের নীচে যাওয়া চিত্রিত করে যে, আপনি আপনার পূর্বের জীবনধারা ক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করেছেন, এবং জল থেকে উঠে আসা ইঙ্গিত করে যে, আপনি এখন ইয়াওয়ে এলোহীমের [ সদাপ্রভু ঈশ্বরের] ইচ্ছা পালনের জন্য জীবিত হয়েছেন।

বাপ্তিস্ম রূপক অর্থে অনেক চিহ্ন বহন করে। যেমন: 

“নূতন সৃষ্টি বোঝাতে” [আদিপুস্তক ১:১-২; যোহন ৩:৫; ২করিন্থিয় ৫:১৭;]

পবিত্র আত্মার উপস্থিতি নূতন সৃষ্টিকে চিহ্নিত করে কারন শাস্ত্রে লেখা আছে, “আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করিলেন।পৃথিবী ঘোর ও শূন্য ছিল, এবং অন্ধকার জলধির উপরে ছিল, আর ঈশ্বরের আত্মা জলের উপরে অবস্থিতি করিতেছিলেন“[আদিপুস্তক ১:১-২;]। এখানে আমরা পবিত্র আত্মা এবং জলের উপস্থিতি দেখতে পাচ্ছি যা এক নতুন সৃষ্টির সূচনা করেছিল। ইয়োব ৩৩:৪; পদে লেখা আছে “ঈশ্বরের আত্মা আমাকে রচনা করিয়াছেন, সর্বশক্তিমানের নি:শ্বাস আমাকে জীবন দেন।

নবী যিশাইয়া এর গ্রন্থে ৬৫:১৭; ইয়াওয়ে এলোহীম বলেছেন, “কারন দেখ, আমি নূতন আকাশমন্ডলের ও নূতন পৃথিবীর সৃষ্টি করি; এবং পূর্বে যাহা ছিল, তাহা স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না।“ অর্থাৎ ইয়াওয়ে এলোহীম যখন দ্বিতীয়বার মহাবিশ্বেরগঠন করবেন সেটা হবে সম্পূর্ন পাপ মুক্ত, যেখানে ধর্মিকদের বসতি হবে। [প্রকাশিত বাক্য ২১:১;]। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন, “ধন্য যাহারা মৃদুশীল, কারন তাহারা দেশের অধিকারী হইবে“[মথি ৪:৫;]। 

প্রতিটি মানুষ একবার জন্ম গ্রহন করে, কিন্তু একজন খ্রীষ্টিয়ান দুইবার জন্মগ্রহন করে। এই বিষয়ে শাস্ত্রে উল্লেখিত রয়েছে, যোহন ৩: ১-৭;

“ফরীশীদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিলেন, তাঁহার নাম নীকদীম; তিনি যিহূদীদের একজন অধ্যক্ষ। তিনি রাত্রিকালে যীশুর নিকটে আসিলেন, এবং তাঁহাকে কহিলেন, রব্বি, আমরা জানি, আপনি ঈশ্বরের নিকট হইতে আগত গুরু; কেননা আপনি এই যে সকল চিহ্ন-কার্য সাধন করিতেছেন, ঈশ্বর সহবর্তী না থাকিলে এই সকল কেহ করিতে পারে না। যীশু উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, সত্য সত্য, আমি তোমাকে বলিতেছি, নূতন জন্ম না হইলে কেহ ঈশ্বরের রাজ্য দেখিতে পায় না। নীকদীম তাঁহাকে কহিলেন, মনুষ্য বৃদ্ধ হইলে কেমন করিয়া তাহার জন্ম হইতে পারে? সে কি দ্বিতীয় বার মাতার গর্ভে প্রবেশ করিয়া জন্মিতে পারে? যীশু উত্তর করিলেন, সত্য সত্য, আমি তোমাকে বলিতেছি, যদি কেহ জল এবং আত্মা হইতে না জন্মে, তবে সে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে পারে না। মাংস হইতে যাহা জাত, তাহা মাংসই; আর আত্মা হইতে যাহা জাত, তাহা আত্মাই। আমি যে তোমাকে বলিলাম, তোমাদের নূতন জন্ম হওয়া আবশ্যক, ইহাতে আশ্চর্য জ্ঞান করিও না।“ 

এছাড়াও পবিত্র বাইবলে আরো বলে, “ফলতঃ কেহ যদি খ্রীষ্টে থাকে, তবে নূতন সৃষ্টি হইল; পুরাতন বিষয়গুলি অতীত হইয়াছে, দেখ, সেইগুলি নূতন হইয়া উঠিয়াছে।“[২করিন্থিয় ৫:১৭;]

পবিত্র শাস্ত্র আমাদের কাছে বিষয়টি সুস্পষ্ট করেছে যে, বাপ্তিস্মর অর্থ হচ্ছে “এক নূতন সৃষ্টি”।

“বাপ্তিস্ম সর্বশক্তিমানের বিচারকে এবং তার পবিত্রতাকে চিহ্নিত করে”

প্রথম নবী নূহের সময়ে পৃথিবীর মানুষের পাপে পতীত হয়েছিল তাই ইয়াওয়ে এলোহীম জলের দ্বারা সমগ্র পৃথিবীকে ডুবিয়ে দেন [আদিপুস্তক ৬:১৭;] অর্থাৎ জলে ডোবানোর দ্বারা ইয়াওয়ে এলোহীম সমগ্র পৃথিবীকে সুচি কৃত করেছিলেন।

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট  “আবার আত্মাতে গমন করিয়া কারাবদ্ধ সেই আত্মাদের কাছে ঘোষণা করিলেন, যাহারা পূর্বকালে, নোহের সময়ে, জাহাজ প্রস্তুত হইতে হইতে যখন ঈশ্বরের দীর্ঘসহিষ্ণুতা বিলম্বিত করিতেছিল, তখন তাহারা অবাধ্য ছিল। সেই জাহাজে অল্প লোক অর্থাৎ আটটি প্রাণ, জল দ্বারা রক্ষা পাইয়াছিল।আর এখন উহার প্রতিরূপ বাপ্তিস্ম- অর্থাৎ মাংসের মালিন্যত্যাগ নয়, কিন্তু ঈশ্বরের নিকটে সৎবিবেকের নিবেদন- তাহাই যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা তোমাদিগকে পরিত্রাণ করো”[১পিতর ৩:১৯-২১;]।

নবী ইলিশায় নামাক নামক এক ব্যক্তিকে যর্দন নদীর জলে ৭বার ডুব দিতে বলেন এবং সেই ব্যক্তি যখন নবীর কথামত তা করলেন তখন তিনি সুস্থ হলেন [২রাজাবলী ৫:১-১৪;]


জল অনেক সময়ে মৃত্যুরূপ কে চিহ্নিত করে: যেমন শাস্ত্র বলে, 

““অথবা তোমরা কি জান না যে, আমরা যত লোক খ্রীষ্ট যীশুর উদ্দেশে বাপ্তাইজিত হইয়াছি, সকলে তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তাইজিত হইয়াছি?অতএব আমরা তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তিস্ম দ্বারা তাঁহার সহিত সমাধিপ্রাপ্ত হইয়াছি; যেন, খ্রীষ্ট যেমন পিতার মহিমা দ্বারা মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইলেন, তেমনি আমরাও জীবনের নূতনত্বে চলি। কেননা যখন আমরা তাঁহার মৃত্যুর সাদৃশ্যে তাঁহার সহিত একীভূত হইয়াছি, তখন অবশ্য পুনরুত্থানের সাদৃশ্যেও হইব।আমরা ত ইহা জানি যে, আমাদের পুরাতন মনুষ্য তাঁহার সহিত ক্রুশারোপিত হইয়াছে, যেন পাপদেহ শক্তিহীন হয়, যাহাতে আমরা পাপের দাস আর না থাকি।কেননা যে মরিয়াছে, সে পাপ হইতে ধার্মিক গণিত হইয়াছে। আর আমরা যখন খ্রীষ্টের সহিত মরিয়াছি, তখন বিশ্বাস করি যে, তাঁহার সহিত জীবন প্রাপ্তও হইব“[রোমীয় ৬:৩-৮;]। 

পবিত্র শাস্ত্রে মতে, আমরা যখন জলে ডুবি তখন আমাদের পূর্বের পাপময় জীবনের মৃত্যু হয়, আমরা তখন আর পাপের দাসত্বে থাকি না বরং ঈশ্বরের সন্তান হবার সুযোগ পাই, আমাদের এই দেহ এক সময়ে ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু যারা খ্রীষ্টের নামে বাপ্তিস্ম নিয়েছে তারা সকলে জীবন প্রাপ্ত হবে। এর পাশাপাশি পবিত্র শাস্ত্র আমাদের এটিও বলে আমরা যেন আমাদের ভালো কর্মের দ্বারা পরিত্রাণ সম্পন্ন করি [ফিলিপীয় ২:১২;]।


প্রভু যীশু খ্রীষ্ট পৃথিবীতে আসবার আগে কি বাপ্তিস্ম ছিল?

অনেকেই মনে করেন মসীহের আগমের পূর্বে বাপ্তিস্ম ছিলনা, যদিও ধারনাটি সত্য নয়,কারন পবিত্র শাস্ত্রে এ কথা লেখা আছে, “কারণ, হে ভ্রাতৃগণ, আমার ইচ্ছা নয়, তোমরা অজ্ঞাত থাক যে, আমাদের পিতৃপুরুষেরা সকলে সেই মেঘের নিচে ছিলেন, ও সকলে সমুদ্রের মধ্য দিয়া গমন করিয়াছিলেন; এবং সকলে মোশির উদ্দেশে মেঘে ও সমুদ্রে বাপ্তাইজিত হইয়াছিলেন” [১করিন্থিয় ১০:১-২;]। অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়রা নবী মোশীর সময়ে জলে বাপ্তিস্ম গ্রহন করেছিলেন।

মাথায় জল ছিটিয়ে কি বাপ্তিস্ম দেওয়া উচিত?

অনেকে মনে করেন যে, মাথায় অল্প জল ছিটিয়ে বাপ্তিস্ম দেওয়া যায়। আমাদের প্রথমে এটি বিবেচনা করতে হবে আমরা কোন মানব রচীত নিয়ম কানুনের অনুসারী নই, আমরা পবিত্র শাস্ত্রের [পবিত্র বাইবেলের] অনুসারী। পবিত্র শাস্ত্রে কোর জায়গায় এমন কোন বিবরন পাওয়া যায় না যেখানে মাথায় জল ছিটিয়ে বাপ্তিস্ম দেওয়া হয়েছে, বরং পবিত্র শাস্ত্র যখনই বাপ্তিস্মের কথা বর্ণনা করে সেখানে সম্পূর্ন জলে ডোবানোকে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে।

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট নিজো পূর্ন জলে ডুবে বাপ্তিস্ম গ্রহন করে আমাদের দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা আমাদের দিয়ে গেছেন [মথি ৩:১৬;], তাঁর শিষ্য ফিলিপ ইথিওপিয়ার একজন ব্যক্তিকে জলাশয়ে নামিয়ে সেই ব্যক্তিকে জলে ডুবিয়ে বাপ্তিস্ম দিয়েছিলেন [প্রেরিত ৮:৩৬-৩৯;]। তাই বর্তমানে যদি কোন ব্যক্তি এর বিপরীত শিক্ষা দেয় তবে আপনার এটা বুঝে নিতে হবে সে মিথ্যাচারী।


লেখক: P. Johnson Sarkar







শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: