খ্রীষ্টান ধর্মে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম, ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে কোন খাদ্য আহার না করে থাকাকে উপবাস বলে। প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে অনুসরন করে ৪০ দিন উপবাস পালন করা হয়। সময় নয় বরং ঈশ্বরের প্রতি প্রেম, ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রতি গুরুত্ব দেওয়াই উপবাসের প্রধান লক্ষ। তাই কেও চাইলে অর্ধ বেলা পর্যন্ত উপবাস করতে পারেন বা তার সুবিধা মত। সাধারনত সকালে উঠে প্রার্থনা করে হালকা খাবার খেয়ে বা না খেয়ে থাকা, ও সারা দিন কিছু না খেয়ে বিকালে বা সন্ধ্যায় প্রার্থনার পর খাবার খাওয়া হয়। খ্রিস্ট ধর্মের বাইবেল মধ্যে ইসাইয়াহ (৫৮:৬-৭), জাকারিয়াহ (৭:৫-১০), বুক অফ দানিয়েলে উপবাসে কথা বলা হয়েছে। তবে এখানে উপবাসে খাদ্য পানীয় পরিহারের বদলে সৃষ্টিকর্তার আদেশ পূর্ণরূপে প্রতিপালন করতে গরীব এবং দুর্দশাগ্রস্থকে সাহায্যের কথা বলা হয়েছে। বুক অফ দানিয়েলে আংশিক উপবাসের কথা বলা হয়েছে।
খ্রিস্টধর্মের বিভিন্ন শাখা বা চার্চ উপবাস পালন করে থাকে। তবে কিছু শাখা এটাকে পালন করে না। ক্যাথলিক চার্চ এবং ইস্টার্ণ অর্থোডক্স চল্লিশ দিনের আংশিক উপবাস পালন করে থাকে। ইথিওপিয়ান অর্থোডক্স চার্চ বছরে কয়েকবার সপ্তাহব্যাপী আংশিক উপবাস পালন করে। খ্রিস্টধর্মের বিভিন্ন শাখা বা চার্চ উপবাস পালন করে থাকে। এই উপবাসের সময়ে মাছা- মাংস জাতীয় খাবার এবং দুগ্ধ আহার থেকে বিরত থাকা হয়। খ্রিষ্টান ধর্মে বর্তমান সময়েও উপবাস বা ফস্টিং বেশ গুরুত্বপূর্ণ ।
প্রভু যীশুও ঈশ্বরের বানী প্রচারের কাজ শুরু করার আগে চল্লিশ দিন পর্যন্ত উপবাস থেকেছেন।[৭]
মথি ৪ অধ্যায় : ১ থেকে ৪ পদ
" তখন যীশু, দিয়াবল দ্বারা পরীক্ষিত হইবার জন্য, আত্মা দ্বারা প্রান্তরে নীত হইলেন। আর তিনি চল্লিশ দিবারাত্র অনাহারে থাকিয়া শেষে ক্ষুধিত হইলেন। তখন পরীক্ষক নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিল, তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে বল, যেন এই পাথরগুলি রুটি হইয়া যায়। কিন্তু তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, লেখা আছে, ‘‘মনুষ্য কেবল রুটিতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।"
যোহন যিনি যীশুর সমসাময়িক ছিলেন, তিনিও উপবাস রাখতেন এবং তার অনুসারীগণের মাঝেও উপবাস রাখার রীতির প্রচলন ছিল। (মার্ক ২:১৮)[৮]
বাইবেল অনুসারে, যীশুর স্বীয় সময়কালে কিছু সংখ্যক উপবাস রাখার অনুমতি বা অবকাশও ছিল। একবার কতিপয় ইহুদী সমবেত হয়ে যীশুর নিকট এই আপত্তি উত্থাপন করলো যে, তোমার অনুসারীরা কেন উপবাস রাখছে না।
মার্ক ২ অধ্যায়: ১৮ থেকে ২১ পদ
"আর যোহনের শিষ্যেরা ও ফরীশীরা উপবাস করিতেছিল। আর তাহারা যীশুর নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিল, যোহনের শিষ্যেরা ও ফরীশীদের শিষ্যেরা উপবাস করে, কিন্তু আপনার শিষ্যেরা উপবাস করে না, ইহার কারণ কি? যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, বর সঙ্গে থাকিতে কি বাসরঘরের লোকে উপবাস করিতে পারে? যাবৎ তাহাদের সঙ্গে বর থাকেন, তাবৎ তাহারা উপবাস করিতে পারে না। কিন্তু এমন সময় আসিবে, যখন তাহাদের নিকট হইতে বর নীত হইবেন; সেই দিন তাহারা উপবাস করিবে। পুরাতন কাপড়ে কেহ নূতন কাপড়ের তালি দেয় না; দিলে সেই নূতন তালিতে ঐ পুরাতন কাপড় ছিঁড়িয়া যায়, এবং আরও মন্দ ছিদ্র হয়।
যীশু মোশির সময়ের যে উপায়ে উপবাস করা হত সে উপায়ে নয় ; বরং তিনি তার অনুসারীদেরকে পূর্ণ আন্তরিকতা ও বিশুদ্ধচিত্ততার সাথে উপবাস রাখার উপদেশ প্রদান করতেন।
মথি ৬ অধ্যায়: ১৬ থেকে ১৮ পদ :
"যখন তোমরা উপবাস কর, তখন ভণ্ডদের মতো মুখ শুকনো করে রেখো না৷ তারা যে উপবাস করেছে তা লোকেদের দেখাবার জন্য, তারা মুখ শুকনো করে ঘুরে বেড়ায়৷ আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তারা তাদের পুরস্কার পেয়ে গেছে৷ কিন্তু তুমি যখন উপবাস করবে, তোমার মাথায় তেল দিও আর মুখ ধুয়ো৷ যেন অন্য লোকে জানতে না পারে যে তুমি উপবাস করছ৷ তাহলে তোমার পিতা ঈশ্বর, যাঁকে তুমি চোখে দেখতে পাচ্ছ না, তিনি দেখবেন৷ তোমার পিতা ঈশ্বর যিনি গোপন বিষয়ও দেখতে পান, তিনি তোমায় পুরস্কার দেবেন৷"
বর্তমান সময়ে উপবাস সর্ম্পকে প্রভু যীশুর এই বাক্যগুলোর উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। বলা হয় উপবাস হচ্ছে আপনার ও ঈশ্বরের মধ্যকার বিষয়, পিতা ঈশ্বরের প্রতি আপনার ভালবাসা ও কৃতজ্ঞার বিষয়টি আপনাদের দুই জনের মধ্যই সীমাবদ্ধ রাখার জন্য। আপনি যদি মানুষকে দেখিয়ে দেখিয়ে উপবাস করেন তাহলে সেটা ঈশ্বরের জন্য হয় না বরং সেটা আপনার ও আপনার দেখানো মানুষগুলোই হয়। তাই আপনার ভালবাসা ও শ্রদ্ধা শুধু আপনি ও ঈশ্বর জানবে সেই হবে ঈশ্বরপ্রীতি।
বর্তমান সময়ে আরো একটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেটি হল আধ্যাতিক উপবাস। প্রভু যীশু আমাদের মধ্যে যে খাদ্যবানী দিয়েছেন তা আত্বীক, আত্বাকে পরিশুদ্ধ করাই উপবাসের মূল্য লক্ষ্য, তাই আত্বাকে বাদ দিয়ে শুধু জাগতিক বা দেহ কে কষ্ট দিয়ে উপবাস মূল্যহীন। উপবাস শুধু না খেয়ে থাকা নয় বরং মনের মন্দতা ও খারাপ দিকে গুলোকে বর্জন করা। আমি যদি উপবাস থাকি ও মানুষকে ভাল না বাসি, খারপ ব্যবহার করি বা মানুষকে ঠকায় তাহলে সেই উপবাস ঈশ্বরের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না।
আপনি যদি মনে করে, আমি এই উপবাসের মধ্যে আমার একটি খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করবো বা যাদের সাথে বিবাদ তাদের সাথে মীমাংসা করবো বা অসহায় দুঃখী মানুষের সেবা করবো বা অন্য কোন ভাল কাজের করবো তাহলে সেটিও একপ্রকার আত্বীক উপবাস।
উপবাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, আপনি সার বছর যে খাবার খান সেখানে মাছ-মাংস বা দুগ্ধ জাতীয় যে খাবার খান সেই খাবার গুলো উপবাসকালীন সময়ে না খাবার জন্য অনুরোধ করা হয়। এই খাবার গুলো না খেয়ে যে অর্থ জমা হয় তা আলাদা ভাবে জমা রাখুন ও তা চার্চে দান করুন যেন চার্চ সেটা গরীবদের মাঝি দিতে পারে কিংবা আপনি নিজেও তা করতে পারেন। উপবাসের সময়ে বাঁচানো টাকা দিয়ে চিত্তবিনোদন বা আরাম আয়েস উপবাসের মান ক্ষুণ্ণ করে। সেই সাথে উপবাসের সময় অসহায় গরীবদের- দুঃখীদের কষ্ট সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারি ও তাদের নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী সাহায্য করতে পারি
0 coment rios: