কুরআনের সূরা নাহলের ১১ আয়াত। এই আয়াতে খেজুর ও আঙ্গুরের উল্লেখ করে আল্লাহ তা'আলা মানুষকে তাঁর নিদর্শন দেখতে বলছেন।
আপনি হয়তো এই আয়াতের ভিত্তিতে মদকে হালাল মনে করতে পারছেন। কিন্তু এই ধারণা সঠিক।
এই আয়াতে মদকে হালাল বলা হয়।
বরং, এই আয়াতে খেজুর ও আঙ্গুর থেকে যে মাদক এবং উত্তম রিজিক পাওয়া যায়, তার উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে মাদক শব্দটি দিয়ে মদকে বোঝানো হয়। বরং, এখানে মাদক দিয়ে খেজুর ও আঙ্গুর থেকে পাওয়া যে মিষ্টি রস, তাকে বোঝানো হয়েছে।
কুরআনের সূরা নাহলের ১১ আয়াত। এই আয়াতে খেজুর ও আঙ্গুরের উল্লেখ করে আল্লাহ তা'আলা মানুষকে তাঁর নিদর্শন দেখতে বলছেন।
প্রথমে: মদ হালাল:১৬:৬৭
وَ مِنۡ ثَمَرٰتِ النَّخِیۡلِ وَ الۡاَعۡنَابِ تَتَّخِذُوۡنَ مِنۡهُ سَكَرًا وَّ رِزۡقًا حَسَنًا ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِكَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّعۡقِلُوۡنَ ﴿۶۷﴾
و من ثمرت النخیل و الاعناب تتخذون منه سكرا و رزقا حسنا ان فی ذلك لایۃ لقوم یعقلون ﴿۶۷﴾
আর তোমরা খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর থেকে মাদক* ও উত্তম রিয্ক গ্রহণ কর। নিশ্চয় এতে এমন কওমের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা বুঝে। ১৬ সূরাঃ আন-নাহাল | An-Nahl | سورة النحل - আয়াতঃ ১১
হঠাৎ একদিন আয়াত নাজিল হলো, ‘লোকেরা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলো, দুয়ের মধ্যে মহাদোষ, মানুষের জন্য উপকারও আছে; কিন্তু উপকারের চেয়ে ওদের দোষই বেশি। লোকে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা আল্লাহর পথে কী ব্যয় করবে? বলো, যা উদ্বৃত্ত। এভাবে আল্লাহ তাঁর সব নিদর্শন তোমাদের জন্য প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করো ইহকাল ও পরকাল সম্বন্ধে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৯)
হালাল মদ খেয়ে আলীর মাতলামি
সূনান তিরমিজী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫০/ কোরআন তাফসীর
পরিচ্ছদঃ সূরা আন-নিসা
৩০২৬. আবদ হুমায়দ (রহঃ) ……. আলী ইবন আবূ তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবদুর রহমান ইবন আওফ একবার আমাদের জন্য আহারের আয়োজন করেন এবং আমাদের দাওয়াত করলেন। সেখানে আমাদের মদ পান করান (তখনও মদ হারাম হয়নি)। আমাদেরকে মদের নেশায় ধরে। ইতোমধ্যে সালাতের ওয়াক্ত এসে পড়ে। এমতাবস্থায় লোকেরা আমাকেই ইমামত করতে এগিয়ে দেন। আমি (সালাতে) কিরআত করলামঃ (قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ لاَ أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ وَنَحْنُ نَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ) এবং (وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ) এর স্থলে পড়ে পড়লাম (وَنَحْنُ نَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ) তোমরা যাদের ইবাদত কর আমরাও তাদের ইবাদত করি। তখন আল্লাহ্ তা’আলা এই আয়াত নাযিল করেনঃ
হে মুমিনগণ! মদ্যপানোম্মত্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হবে না যতক্ষণ না তোমরা বল তা বুঝতে পার। (৪ঃ ৪৩)। (আবু ঈসা বলেন) হাদীসটি হাসান-গারীব-সহীহ।
সহীহ, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩০২৬ (আল মাদানী প্রকাশনী)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী
অধ্যায়ঃ ২১/ পানীয় দ্রব্য
পরিচ্ছদঃ ১. মদ হারাম হওয়ার বর্ণনা
৩৬৭১। আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা আনসার গোত্রের এক লোক তাকে ও আব্দুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ)-কে দা‘ওয়াত করে উভয়কে মদ পান করালেন তা হারাম হওয়ার পূর্বে। অতঃপর মাগরিবের সালাতে আলী (রাঃ) তাদের ইমামতি করলেন। তিনি সূরা ‘‘কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’’ পাঠ করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। অতঃপর এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন মাতাল অবস্থায় থাকো তখন সালাতের কাছেও যেও না। সালাত তখনই পড়বে, যখন তোমরা কি বলছো তা সঠিকরূাপ বুঝতে পারো।’’ (সূরা আন-নিসাঃ ৪৩)(1)
সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
কোরআন আমাদের শিক্ষা দেয় যে “আল্লাহর কালামের কোনো পরিবর্তন নেই” (সূরা আন’আম ৬:৩৪)
হে তোমরা যারা ইমান এনেছ, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজের ধারেকাছেও যেয়ো না, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যে কী বলছ।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৪৩)
এখানে আল্লাহ দুই ধরনের কথা বলে তোমরা মদ খাও কারণ তোমাদের পক্ষে হালাল (১৬:১৬) (১৬:১১)
আল্লাহ ও ইসলামের নবী নিজের স্বার্থের জন্য বাক্য পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। আল্লাহ কি জানতেন না পরবর্তী সময়ে মদ হালাল থেকে হারাম হবে। তবে কি আল্লাহ অজ্ঞতার প্রকাশ করছেন।
আল্লাহ তা-আলা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় জান্নাতি শারাব বা মদের বিবরণ দিয়েছেন এভাবে:
আল্লাহ বলেন,
يُطَافُ عَلَيْهِم بِكَأْسٍ مِّن مَّعِينٍ – بَيْضَاءَ لَذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ لَا فِيهَا غَوْلٌ وَلَا هُمْ عَنْهَا يُنزَفُونَ
“তাদেরকে ঘুরে ফিরে পরিবেশন করা হবে স্বচ্ছ পানপাত্র। সু শুভ্র, যা পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু। তাতে মাথা ব্যথার উপাদান নেই এবং তারা তা পান করে মাতালও হবে না।” (সূরা সাফফাত: ৪৫-৪৭)
وَأَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ
“পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর।” (সূরা মুহাম্মদ: ১৫)
يَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُونَ- بِأَكْوَابٍ وَأَبَارِيقَ وَكَأْسٍ مِّن مَّعِينٍ – لَّا يُصَدَّعُونَ عَنْهَا وَلَا يُنزِفُونَ
“তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরেরা। পানপাত্র কুঁজা ও খাঁটি সূরা পূর্ণ পেয়ালা হাতে নিয়ে, যা পান করলে তাদের মাথাব্যথা হবে না এবং তারা বিকারগ্রস্তও হবে না।” (সূরা ওয়াকিয়া: ১৭-১৯)
ইবনে আব্বাস রা. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন,
في الخمر أربع خصال: السكر، والصداع، والقيء، والبول، فذكر الله خمر الجنة، ونزهها عن هذه الخصال
“মদের চারটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যথা: মাতলামি, মাথাব্যথা, বমি ও পেশাব। আল্লাহ তাআলা জান্নাতের মদের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তিনি জান্নাতের মদকে এসব বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত করেছেন।” (তাফসিরে ইবনে কাসির)
يُسْقَوْنَ مِن رَّحِيقٍ مَّخْتُومٍ – خِتَامُهُ مِسْكٌ ۚ وَفِي ذَٰلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ – وَمِزَاجُهُ مِن تَسْنِيمٍ
“তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় পান করানো হবে। তার মোহর হবে কস্তূরী। এ বিষয়ে প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত। তার মিশ্রণ হবে তসনীমের পানি।” (সূরা মুতাফফিফীন: ২৫-২৭)
সুতরাং কেউ যদি দুনিয়ার জঘন্য ও ক্ষতিকর মদ, গাজা, ফেন্সিডিল, হেরোইন, কোকেন, ইয়াবা ইত্যাদি নেশাদার বস্তু পরিত্যাগ করে এবং আল্লাহর দেখানে রাস্তায় চলে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে স্বচ্ছ, শ্বেত-শুভ্র, সুস্বাদু, পবিত্র, পরি তৃপ্তিদায়ক, স্বাস্থ্য সম্মত ও সকল প্রকার অনিষ্ট মুক্ত শারাব পান করাবেন।
মদ হালাল
আবার পরে বেহেস্তে গিয়ে সেই মদ আবার হালাল হয়ে গেল:
তাদেরকে ঘুরে ফিরে পরিবেশন করা হবে স্বচ্ছ পানপাত্র। কোরআন ৩৭/৪৫
পানপাত্র, জগ ও বিশুদ্ধ শরাবের পেয়ালা নিয়ে, কোরআন ৫৬/১৮
শরাবে পরিপূর্ণ পেয়ালা। কোরআন ৭৮/৩৪
তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় পান করানো হবে। কোরআন ৮৩/২৫
অতএব আমরা দেখলাম যে, আল কুরআনে ধাপে ধাপে মদপান হালাল করা হয়েছে। সব শেষে চিরতরে হালাল করা হয়েছে। এর মাঝে স্ববিরোধিতার লেশমাত্র বিদ্যমান। এমনকি চিরতরে হালাল হয়ে যাবার আগেও মদের ব্যাপারে যে আয়াতগুলো নাযিল হয়েছিল, সেগুলোও এখনো প্রযোজ্য আছে। কেননা মদের ক্ষতিকর প্রভাব, নেশাগ্রস্থ অবস্থায় নামাযে যাবার নিষেধাজ্ঞা – এগুলো তো চিরতরে মদ হালাল হয়ে যাবার বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক I
0 coment rios: