লেখকঃ পাষ্টর জনসন সরকার।
সমালোচকের দাবিঃ
মথি (১২/৩৯-৪০, মো.-১৩) বলেন: ‘‘জবাবে তিনি তাদেরকে বললেন, এই কালের দুষ্ট ও জেনাকারী লোকে চিহ্নের খোজ করে, কিন্তু ইউনুস নবীর চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্ন এদেরকে দেওয়া যাবে না। কারণ ইউনুস যেমন তিন দিন তিন রাত (three days and three nights) মাছের পেটে ছিলেন, তেমনি ইবনুল ইনসানও (কেরি: মনুষ্যপুত্রও) তিন দিন ও তিন রাত (three days and three nights) দুনিয়ার গর্ভে থাকবেন।’’ আরো দেখুন মথি ১৬/৪; ২৭/৬৩ এবং যোনা/ ইউনুস ১/১৭।
বাইবেল সমালোচকরা বলেন, যীশু কখনোই ‘ইউনুস নবীর মত’ ‘তিন দিন ও তিন রাত’ পৃথিবীর গর্ভে থাকেননি। এ জন্য উপরের বক্তব্যগুলো ভুল ও অসত্য। নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষ করুন:
প্রথমত: ইউনুস নবী বা যোনা ভাববাদী জীবিত অবস্থায় মাছের পেটে প্রবেশ করেন, অবস্থান করেন এবং বেরিয়ে আসেন। পক্ষান্তরে বাইবেলের বর্ণনায় যীশু মৃত অবস্থায় মাটির গর্ভে প্রবেশ করেন ও অবস্থান করেন। পরে তিনি জীবিত হয়ে বেরিয়ে আসেন।
দ্বিতীয়ত: ইউনুস (আ.) তিন দিন ও তিন রাত্রি মাছের পেটে ছিলেন। যীশু সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, তিনিও তিন দিন ও তিন রাত্র মাটির গর্ভে থাকবেন। কিন্তু তিনি তা থাকেননি। তিনি মাত্র এক দিন ও দু’ রাত মাটির গর্ভে ছিলেন।
শুক্রবার দুপুর ১২টা বা তার পরে যীশুকে ক্রুশে দেওয়া হয়। সন্ধ্যার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সন্ধ্যা হলে অরিমাথিয়ার যোষেফ/ ইউসুফ গভর্নর পীলাতের নিকট যেয়ে যীশুর দেহ প্রার্থনা করেন (মথি ২৭/৪৫-৬১; মার্ক ১৫/৩৩-৪৭; লূক ২৩/৪৪-৫৬; যোহন ১৯/২৫-৪২)। এ থেকে আমরা জানতে পারছি যে, শুক্রবার দিবাগত রাতে যীশুকে কবরস্থ করা হয। এরপর রবিবার প্রত্যূষে সূর্যোদয়ের পূর্বেই দেহটা কবর থেকে অদৃশ্য হয় (যোহন ২০/১-১৮; মথি ২৮/১-১০; মার্ক ১৬/১-১১; লূক ২৪/১-১২)।
এভাবে আমরা দেখছি যে, যীশুর দেহ কোনো অবস্থাতেই পৃথিবীর গর্ভে তিন দিন ও তিন রাত (three days and three nights) থাকেনি; বরং এক দিন ও দুই রাত তা পৃথিবীর গর্ভে ছিল।
তৃতীয়ত: যাদেরকে এ চিহ্ন দেখানোর প্রতিশ্রুতি যীশু দিয়েছিলেন সে সকল পুরোহিত ও ধর্মগুরুদেরকে তিনি তা দেখাননি। কবর থেকে বের হওয়ার পর তিনি তাদেরকে সাক্ষাৎ দেননি।
জবাবঃ
১ দাবি খন্ডনঃ “যোনা নবী যেহেতু মাছের পেটে জীবিত ছিলেন তেমনি প্রভু যীশু খ্রীষ্ট [ইয়েশুয়া হা মাসিয়াঁক] কবরে জীবিত ছিলেন তিনি মরে নি।”
এই দাবিটি সত্যই খুবই দূর্বল এবং ভিত্তিহীন। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যোনা নবীর সাথে কি বিষয়ে সাদৃশ্য করেছেন সেটা প্রথমে দেখুনঃ “কারণ যোনা যেমন তিন দিবারাত্র বৃহৎ মৎস্যের উদরে ছিলেন, তেমনি মনুষ্যপুত্রও তিন দিবারাত্র পৃথিবীর গর্ভে থাকিবেন। নীনবীর লোকেরা বিচারে এই কালের লোকদের সহিত দাঁড়াইয়া ইহাদিগকে দোষী করিবে, কেননা তাহারা যোনার প্রচারে মন ফিরাইয়াছিল, আর দেখ, যোনা হইতে মহান এক ব্যক্তি এখানে আছেন।”[1]
এখানে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট [ইয়েশুয়া হা মাসিয়াঁক] যোনা নবীর সাথে ৩দিনের বিষয়ে সাদৃশ্য দিয়েছেন। এখানে তিনি এটা ত বলেন নাই “যোনা নবী যেমন কবরে জীবিত ছিল আমিও জীবিত থাকব।” এটা পথভ্রষ্টদের তৈরি করা মিথ্যাচার। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট এখানে যোনা নবীর সাথে দিনের সাদৃশ্য দিয়েছেন আর এই পথভ্রষ্টরা দাবি করছে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট নাকি বলেছেন, তিনি যোনা নবীর মতন কবরে জীবিত থাকবেন। তারা সাদৃশ্য কি তাই জানে না। তবে তাদের আমি দেখাই, সাদৃশ্য কি? তবে আসুন একি যুক্তির দাড়িপাল্লা ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করিঃ
জামে' আত-তিরমিজি ৩১৬৭ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়াজ-নসীহত করতে দাঁড়িয়ে বললেনঃ "হে লোকেরা! কিয়ামাতের দিন তোমারা নগ্ন ও খতনাহীন অবস্থায় আল্লাহ্র নিকট সমবেত হবে। (বর্ণনাকারী বলেন,) তারপর তিনি পড়লেনঃ "যেভাবে প্রথম আমরা সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবেই তার পুনরাবৃত্তি করবো। এটা একটা ওয়াদাহ। যা পূরণ করার দায়িত্ব আমার। আর এ কাজ আমি অবশ্যই করবো"- (সূরা আম্বিয়া ১০৪)। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন "কিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পরানো হবে তিনি হচ্ছেন ইব্রাহীম (আঃ)। আমার উম্মতের কিছু সংখ্যক ব্যাক্তিকে নিয়ে আসা হবে এবং তাদের কে ধরে বাঁ দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি তখন বলবোঃ হে আমার সৃষ্টিকর্তা! এরা আমার অনুসারি। তখন বলা হবে, আপনি জানেন না, এরা আপনার বিদায়ের পর কি ধরনের বিদ'আত এর উদ্ভব ঘটিয়েছিল। আমি সে সময় একজন সৎকর্মশীল বান্দার [(ঈসা (আঃ)] মত বলবো (কুরআনের ভাষায়) "আমি যতক্ষন পর্যন্ত তাদের মধ্যে ছিলাম, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের পরিচালক ছিলাম। কিন্তু আপনি যখন আমাকে তুলে নিলেন, তখন আপনিই ছিলেন তাদের তত্ত্বাবধায়ক। আর আপনি তো সকল বিষয়ের সাক্ষী। আপনি যদি তাদের আযাব দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা, আর যদি ক্ষমা করে দেন তাহলে আপনি তো পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময় "-(সূরা আল-মায়িদাহ ১১৭-১১৮)। তখন বলা হবে, আপনি যখন তাদের কে রেখে এসেছেন তখন হতে এরা অনবরত মন্দ পথেই চলেছে।[2]
এখানে হযরত মুহাম্মদ কুরআনের ঈসা মসীহের সাথে নিজের তুলনা দিয়েছেন তার মানে তিনি মরেন নি যেহেতু দুজনে কুরআনের একি দলিল ব্যবহার করেছেন(সূরা৫:১১৭-১১৮) আর এই দলিল দিয়ে মুসলিমরা প্রমান করার চেষ্টা করে ঈসা মসীহ মরেননি তবে সেই একি আয়াত হযরত মুহাম্মদের বেলায় প্রয়োগ করলে তিনি মরেন নি। (সমালোচকের যুক্তির দাড়িপাল্লার ব্যবহার)
প্রকৃত ব্যাখ্যাঃ এখানে হযরত মুহাম্মদ প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সাথে তার মৃত্যুর বিষয়ে সাদৃশ্য করেছেন এবং কুরআন হতে সুরা ৫মায়িদা:১১৭-১১৮; উল্লেখ করে বুঝিয়েছেন যে এই আয়াতে তুলে নেওয়ার অর্থ হচ্ছে “মৃত্যু ঘটানো।” এটাকে বলে সাদৃশ্য ।
প্রভু যীশু খ্রীষ্ট মথি ১২:৪১ পদে বলেছেন তিনি যোনা নবী হতে শ্রেষ্ট [আর দেখ, যোনা হইতে মহান এক ব্যক্তি এখানে আছেন।] তাই এখান থেকে সুস্পষ্ট ভাবে প্রমানিত হয় এখানে Context অনুসারে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট [ইয়েশুয়া হা মাসিয়াঁক] যোনা নবীর সাথে শুধুমাত্র দিনের সাদৃশ্য করেছিলেন আর অন্য কোন বিষয়ে নয়।
যোনা নবী কি সত্যই মাছের পেটে জীবিত ছিলেন?
“আমি সঙ্কট প্রযুক্ত সদাপ্রভুকে ডাকিলাম, আর তিনি আমাকে উত্তর দিলেন; আমি পাতালের উদর হইতে আর্তনাদ করিলাম, তুমি আমার রব শ্রবণ করিলে।”[3]
New International Version
He said: “In my distress I called to the LORD, and he answered me. From deep in the realm of the dead I called for help, and you listened to my cry.
New Living Translation
He said, “I cried out to the LORD in my great trouble, and he answered me. I called to you from the land of the dead, and LORD, you heard me!
New King James Version
And he said: “I cried out to the LORD because of my affliction, And He answered me. “Out of the belly of Sheol I cried, And You heard my voice.
যোনা নবী বলেছেন তিনি (šə·’ō·wl) গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে তিনি ইয়াওয়ে এলোহীমকে আহব্বান করেছিলেন। (šə·’ō·wl) শব্দের অর্থ হলো সেই স্থান যেখানে মৃত্যুর পরে মানুষের আত্মা স্থান পায়।
ইহুদি তাফসীরকারী রাব্বি রাশি তিনিও বলেছেন, from the belly of the grave—From the belly of the fish, which is to me as the grave.- Rashi[4]
ইহুদিদের ধর্ম গ্রন্থে মিদ্রাসেও বলা হয়েছে, Out of the depth of the grave have I cried, and Thou hast heard my voice. In Jerusalem, as it is written (Is. 31, 9.)[5]
সমস্ত দলিল প্রামানিত করে যখন নবী মাছের পেটে ছিলেন তখন তিনি মারা গিয়েছিলেন, তিনি সিওলে চলে গিয়েছিলেন যেখানে মৃত্যুর পরে মানুষ স্থান পায় এবং সেখান থেকে তিনি ইয়াওয়ে এলোহীমকে আহব্বান করেছিলেন আর তিনি তার আহব্বানের সাড়া পেয়েছিলেন। ইয়াওয়ে এলোহীম তার প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। যেমন ইয়াওয়ে এলোহীম প্রভু যীশু খ্রীষ্টের [ইয়েশুয়া হা মাসিয়াঁক] সময়েও করেছিলেন, “কারণ তুমি আমার প্রাণ পাতালে পরিত্যাগ করিবে না, তুমি নিজ সাধুকে ক্ষয় দেখিতে দিবে না।”[6]
New King James Version
For You will not leave my soul in Sheol, Nor will You allow Your Holy One to see corruption.
প্রভু যীশু খ্রীষ্টের [ইয়েশুয়া হা মাসিয়াঁক] দেহ নষ্ট হাওয়ার আগেই তিনি পুনরুত্থান করেছিলেন তেমনি নবী যোনার দেহ নষ্ট হওয়ার আগেই ইয়াওয়ে এলোহীম তার প্রান তার দেহে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টভঙ্গী অনুসারেও কোন মানুষ মাছের পেটে ৩দিন জীবিত থাকতে পারে না।
২দাবি খন্ডনঃ “৩দিন ৩ রাত”
যীশু খ্রীষ্ট [ইয়েশুয়া হা মাসিয়াঁক] নিজেই ৩দিন এবং ৩ রাতের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন প্রথমে তিনি যোনা নবীর চিহ্নের কথা ঘোষনা করেছিলেনঃ এই কালের দুষ্ট ও ব্যভিচারী লোকেরা চিহ্নের অন্বেষণ করে, কিন্তু যোনার চিহ্ন ব্যতিরেকে আর কোন চিহ্ন তাহাদিগকে দেওয়া যাইবে না।[7]
প্রভু যীশু খ্রীষ্ট নিজেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন ৩দিন এবং ৩ রাতের বিষয়ে সেই অধ্যায়েই! যে তিনি তৃতীয় দিবসে জীবিত হবেনঃ
সেই সময় অবধি যীশু আপন শিষ্যদিগকে স্পষ্টই বলিতে লাগিলেন যে, তাঁহাকে যিরূশালেমে যাইতে হইবে, এবং প্রাচীনবর্গের, প্রধান যাজকদের ও অধ্যাপকদের হইতে অনেক দুঃখ ভোগ করিতে হইবে, ও হত হইতে হইবে, আর তৃতীয় দিবসে উঠিতে হইবে।[8]
এখন কি সৈনরাও তার কথাটি মনে রেখেছিল,
মহাশয়, আমাদের মনে পড়িতেছে, সেই প্রবঞ্চক জীবিত থাকিতে বলিয়াছিল, তিন দিনের পরে আমি উঠিব। অতএব তৃতীয় দিবস পর্যন্ত তাহার কবর চৌকি দিতে আজ্ঞা করুন; পাছে তাহার শিষ্যেরা আসিয়া তাহাকে চুরি করিয়া লইয়া যায়, আর লোকদিগকে বলে, তিনি মৃতগণের মধ্য হইতে জীবিত হইয়া উঠিয়াছেন; তাহা হইলে প্রথম ভ্রান্তি অপেক্ষা শেষ ভ্রান্তি আরও মন্দ হইবে।[9]
পবিত্র বাইবেলে অনুসারে ৩ দিন বলতে কি বোঝায়?
তখন ইষ্টের মর্দখয়কে এই উত্তর দিতে আজ্ঞা করিলেন, তুমি যাও, শূশনে উপস্থিত সমস্ত যিহূদীকে একত্র কর, এবং সকলে আমার নিমিত্ত উপবাস কর, তিন দিবস, দিনে কি রাত্রিতে কিছু আহার করিও না, কিছু পানও করিও না, আর আমি ও আমার দাসীরাও তদ্রূপ উপবাস করিব; এইরূপে আমি রাজার নিকটে যাইব, তাহা ব্যবস্থাবিরুদ্ধ হইলেও যাইব, আর যদি বিনষ্ট হইতে হয়, হইব।
আর তৃতীয় দিনে ইষ্টের রাজকীয় পরিচ্ছদ পরিধান করিয়া রাজার গৃহের ভিতরে প্রাঙ্গণে রাজার গৃহের সম্মুখে দাঁড়াইলেন; তৎকালে রাজা রাজবাটীতে গৃহদ্বারের সম্মুখে রাজ-সিংহাসনে উপবিষ্ট ছিলেন। আর রাজা যখন দেখিলেন যে ইষ্টের রাণী প্রাঙ্গণে দাঁড়াইয়া আছেন, তখন রাজার দৃষ্টিতে ইষ্টের অনুগ্রহ পাইলেন, রাজা ইষ্টেরের প্রতি আপন হস্তস্থিত স্বর্ণময় রাজদণ্ড বিস্তার করিলেন; তাহাতে ইষ্টের নিকটে আসিয়া রাজদণ্ডের অগ্রভাগ স্পর্শ করিলেন। পরে রাজা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ইষ্টের রাণী, তুমি কি চাও? তোমার অনুরোধ কি? রাজ্যের অর্ধেক পর্যন্ত হইলেও তাহা তোমাকে দেওয়া যাইবে। ইষ্টের উত্তর করিলেন, যদি মহারাজের ভাল বোধ হয়, তবে আমি আপনার জন্য যে ভোজ প্রস্তুত করিয়াছি, মহারাজ ও হামন সেই ভোজে অদ্য আগমন করুন।[10]এখানে দেখা যাচ্ছে রানী ইষ্টের লোকেদের আদেশ দিয়েছিলেন যে তারা “তিন দিবস[দিন]” উপবাস [রোজা] করে কিন্তু তারপরের অধ্যায়ে সুস্পষ্টভাবে বোঝান হয়েছে যে ইহুদিরা “তিন দিন” বলতে আসলে কি বুঝত! রণী ৩য় দিনে উপবাস ভেঙ্গে রাজকিয় পোষাক পরিধান করেন এবং সকলে ভোজের আয়োজন করেন।
“আর তাহারা সাত দিন পর্যন্ত সম্মুখাসম্মুখি হইয়া শিবিরে রহিল, পরে সপ্তম দিবসে যুদ্ধ বাধিয়া গেল; তাহাতে ইস্রায়েল-সন্তানগণ এক দিনে অরামের এক লক্ষ পদাতিক সৈন্যকে সংহার করিল।”[11]
এখানে দেখা যাচ্ছে যে সাত দিন শত্রুর সামনাসামনি শিবির স্থানপ করেছিলেন কিন্তু সাত দিনের দিনে তারা যুদ্ধ করল।
আর তাহারা ডুমুরচাকের এক খণ্ড ও দুই থলুয়া শুষ্ক দ্রাক্ষাফল তাহাকে দিল; তাহা খাইলে পর তাহার প্রাণ সতেজ হইল, কেননা তিন দিবারাত্র সে রুটি ভোজন কি জল পান করে নাই। পরে দায়ূদ তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কাহার লোক? কোথা হইতে আসিলে? সে কহিল, আমি একজন মিসরীয় যুবক, একজন অমালেকীয়ের দাস; অদ্য তিন দিন হইল, আমি পীড়িত হইয়াছিলাম বলিয়া আমার কর্তা আমাকে ত্যাগ করিয়া গেলেন।[12]
এখানে দেখা যাচ্ছে একজন মিশরীয় যুবক তিনি ৩দিন এবং ৩রাত কিছু খাওয়া দাওয়া করেন নাই, কিন্তু তিনি তৃতীয় দিনে তিনি বলেছেন আজ ৩দিন হয়ে গেছে। তাই আমারা যখন বাইবেল পড়ব এবং সেটা বোঝার চেষ্টা করব তখন সেটা বাইবেলের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা নিতে হবে।
৩য় দাবি খন্ডনঃ “প্রভু যীশু মৃত থেকে জীবিত হওয়ার পরে কাউকে দেখা দেন নি”
পবিত্র বাইবেলে অনুসারে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট [ইয়েশুয়া হা মাসিয়াঁক] মৃত থেকে জীবিত হওয়ার পরে ৫০০ জনের বেশি তাঁকে দেখেছিলঃ
ফলতঃ প্রথম স্থলে আমি তোমাদের কাছে এই শিক্ষা সমর্পণ করিয়াছি, এবং ইহা আপনিও পাইয়াছি যে, শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন, ও কবর প্রাপ্ত হইলেন, আর শাস্ত্রানুসারে তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হইয়াছেন; আর তিনি কৈফাকে, পরে সেই বারো জনকে দেখা দিলেন; তাহার পরে একেবারে পাঁচ শতের অধিক ভ্রাতাকে দেখা দিলেন, তাহাদের অধিকাংশ লোক অদ্যাপি বর্তমান রহিয়াছে, কিন্তু কেহ কেহ নিদ্রাগত হইয়াছে।[13]
প্রভু যীশু খ্রীষ্টের [ইয়েশুয়া হা মাসিয়াঁক] মৃত থেকে জীবিত হওয়ার বিষয়ে সেই যুগের অ-খ্রীষ্টান ঐতিহাসিকরা লিখেছেন
অ-খ্রীষ্টান ঐতিহাসিক যোসেফাস এর দলিলঃ
About this time there lived Jesus, a wise man, if indeed one ought to call him a man. For he ... wrought surprising feats.... He was the Christ. When Pilate ...condemned him to be crucified, those who had . . . come to love him did not give up their affection for him. On the third day he appeared ... restored to life.... And the tribe of Christians ... has ... not disappeared.[14]
মসীহের মৃত থেকে জীবিত হয়ে ওঠার বিষয়ে শুধু খ্রীষ্টান নয় বরং অ-খ্রীষ্টান সাক্ষীও আছে তাই সমালোচকের দাবি খুবই দূর্বল এবং ভিত্তিহীন তা প্রমানিত।
কুরআনের মধ্যে যোনা নবীর বর্ণনাঃ
আর নিশ্চয় ইউনুসও ছিল রাসূলদের একজন। যখন সে একটি বোঝাই নৌযানের দিকে পালিয়ে গিয়েছিল। অতঃপর সে লটারীতে অংশগ্রহণ করল এবং তাতে সে হেরে গেল। তারপর বড় মাছ তাকে গিলে ফেলল। আর সে (নিজেকে) ধিক্কার দিচ্ছিল।আর সে যদি (আল্লাহর) তাসবীহ পাঠকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হত, তাহলে সে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত তার পেটেই থেকে যেত। অতঃপর আমি তাকে তৃণলতাহীন প্রান্তরে নিক্ষেপ করলাম এবং সে ছিল অসুস্থ। আর আমি একটি ইয়াকতীন* গাছ তার উপর উদগত করলাম। এবং তাকে আমি এক লক্ষ বা তার চেয়েও বেশী লোকের কাছে পাঠালাম। আল-বায়ান[15]
এখানে লেখা আছে, “ইউনূস[যোনা] নবী হঠাৎ করে নৌযানের দিকে পালিয়ে গিয়েছিল” কি জন্য পালিয়ে গিয়েছিলেন তার বর্ণনা কুরআনে নাই। তারপরে সে “লটারীতে অংশগ্রহণ করল এবং তাতে সে হেরে গেল। তারপর বড় মাছ তাকে গিলে ফেলল।” এটা কেমন ঘটনা? যোনা নবী লটারীতে হেরে যাওয়ার কারনে তাকে একটা মাছ গিলে ফেলল!!! কিন্তু কিভাবে? তার সাথিরা যে তাকে নৌযান থেকে ফেলে দিয়েছিল তার বর্ণনা ত নেই। তবে নৌযান থাকা অবস্থায় তাকে কিভাবে খেয়ে ফেলল!!!
আবার লেখা আছে, “যদি সে আল্লাহর তাসবীহ পাঠকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হত তবে নাকি সে মাছের পেটেই কিয়ামত পর্যন্ত থেকে যেত।” এখন একটা মাছের পেটে কিয়ামত পর্যন্ত কোন মানুষের দেহ থাকতে পারে? আর সেই মাছটি কি অমর? যে সে কিয়ামত পর্যন্ত একটা না খেয়ে একটা মৃতদেহ বহন করে বেড়াবে, যে দেহটি সে কোন দিনই হজম করতে পারত না। এখানে আল্লাহর কথায় বৈপরীত্য আছে, “যদি তার রবের অনুগ্রহ তার কাছে না পৌঁছত, তাহলে সে নিন্দিত অবস্থায় উন্মুক্ত প্রান্তরে নিক্ষিপ্ত হত।”[16]
আল্লাহ বক্তব্য কি ছিল?
“তাহলে সে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত তার পেটেই থেকে যেত।”-সূরা ৩৭:১৪৪;
নাকি
যদি তার রবের অনুগ্রহ তার কাছে না পৌঁছত, তাহলে সে নিন্দিত অবস্থায় উন্মুক্ত প্রান্তরে নিক্ষিপ্ত হত।– সূরা৬৮:৪৯;
এখানে আল্লাহর কথায় বৈপরীত্য রয়েছে!!! এক জায়গায় বলেছেন, যোনা নবী যদি মন না ফেরাতেন তবে আল্লাহ তাকে কিয়ামত পর্যন্ত মাছের পেটের ভিতরে রেখে দিতেন আবার অন্য জায়াগায় লেখা আছে উলঙ্গ[17] অবস্থায় প্রান্তরে নিক্ষিপ্ত করতেন। একি সাথে নিশ্চয়ই আল্লাহর দুটি পরস্পরবিরোধী বক্তব্য সঠিক হতে পারে না।
তারপরে আল্লাহ বলেছেন, “এবং তাকে আমি এক লক্ষ বা তার চেয়েও বেশী লোকের কাছে পাঠালাম।”-সূরা৩৭:১৪৭;
অর্থাৎ কতজন লোকের কাছে যোনা নবীকে পাঠিয়ে ছিলেন সেই বিষয়ে তিনি জানতেন না যার জন্য তিনি বলেছেন “১ লাখ বা তার থেকে বেশি”। সর্বশক্তিমানের সাথে এমন মন্তব্য বড়ই বেমানান।
কুরআনের মধ্যে দিনের হিসাব নিয়ে বৈপরীত্য রয়েছে, সূরা৩:৪১ এখানে বলা হয়েছে যাকারিয়া৩ দিন নিরব থাকবেঃ
সে বলল, ‘হে আমার রব, আমাকে দেন একটি নিদর্শন’। তিনি বললেন, ‘তোমার নিদর্শন হল, তুমি তিন দিন পর্যন্ত মানুষের সাথে ইশারা ছাড়া কথা বলবে না। আর তোমার রবকে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যা তার তাসবীহ পাঠ কর’। আল-বায়ান
আবার সূরা ১৯ মারঈয়াম আয়াত১০ এখানে বলা আছে যাকারিয়া ৩ রাত নিরব থাকবেঃ
সে বলল, ‘হে আমার রব, আমার জন্য একটি নিদর্শন ঠিক করে দিন’। তিনি বললেন, ‘তোমার জন্য এটাই নিদর্শন যে, তুমি সুস্থ থেকেও তিন রাত কারো সাথে কথা বলবে না’। আল-বায়ান
এখান কোনটা সত্যি?
৩ দিন [৭২ ঘন্টা] নিরব থাকবেঃ সূরা৩:৪১;
সে বলল, ‘হে আমার রব, আমাকে দেন একটি নিদর্শন’। তিনি বললেন, ‘তোমার নিদর্শন হল, তুমি তিন দিন পর্যন্ত মানুষের সাথে ইশারা ছাড়া কথা বলবে না। আর তোমার রবকে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যা তার তাসবীহ পাঠ কর’। আল-বায়ান
নাকি
৩ রাত [৩৬ ঘন্টা] নিরব থাকবেঃ সূরা ১৯:১০;
সে বলল, ‘হে আমার রব, আমার জন্য একটি নিদর্শন ঠিক করে দিন’। তিনি বললেন, ‘তোমার জন্য এটাই নিদর্শন যে, তুমি সুস্থ থেকেও তিন রাত কারো সাথে কথা বলবে না’। আল-বায়ান
[1] মথি১২:৪০-৪১;
[3] যোনা২:২;
[4] https://www.sefaria.org/Jonah.2.3?ven=Tanakh:_The_Holy_Scriptures,_published_by_JPS&vhe=Miqra_according_to_the_Masorah&lang=bi&with=Rashi&lang2=en
[5] https://www.sefaria.org/Jonah.2.3?ven=Tanakh:_The_Holy_Scriptures,_published_by_JPS&vhe=Miqra_according_to_the_Masorah&lang=bi&with=Ein%20Yaakov%20(Glick%20Edition)&lang2=en
[6] গীতসংহিতা১৬:১০;
[7] মথি ১৬:৪;
[8] মথি১৬:২১;
[9] মথি২৭:৬৩-৬৪;
[10] ইষ্টের৪:১৫-১৬; ৫:১-৪
[11] ১রাজাবলী২০:২৯;
[12] ১শমূয়েল৩০:১২-১৩;
[13] ১করিন্থীয়১৫:৩-৬;
[14] Josephus, Antiquities 18.63-64, cited in Yamauchi, "Jesus Outside the New Testament", 212.
[15] সূরা৩৭:১৩৯-১৪৭;
[16] সূরা ৬৮:৫৯;
[17] Sahih International:
If not that a favor [i.e., mercy] from his Lord overtook him, he would have been thrown onto the naked shore while he was censured.
0 coment rios: