বড়দিন হল আনন্দ, ভালোবাসা ও সম্প্রীতির একটি সময়। একই সঙ্গে এই দিনটির বা এটি উদযাপন করার উদ্দেশ্য অনুধাবন করার সময়। দিনটি পালনের উদ্দেশ্য গভীরভাবে উপলব্ধি করার জন্য আমরা আপনাকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। কারণ এই দিনটির তাৎপর্য বিশ্বের সকল মানুষ, ধর্ম, বর্ণ সকলের কাছে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কিভাবে? তা আমরা জানবো হযরত ঈসা মসীহর জীবন পর্যালোচনার মাধ্যমে।
হযরত ঈসা মসীহ (যীশু খ্রীস্ট) আসলে কে?
মুসলিমদের কাছে ঈসা মসীহ একজন সন্মানিত নবী, শিক্ষক এবং পথপ্রদর্শক, যার অতুলনীয় শিক্ষা সারা দুনিয়ায় সকল মানুষের কাছে সমানভাবে সমাদৃত, সন্মানিত, এমনকি আখেরাতেও। কারন কুরআন এই সাক্ষ্য দেয় যে,
যখন ফেরেশতাগণ বললো, হে মারইয়াম আল্লাহ তোমাকে তাঁর এক বানীর সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হলো মসীহ-মারইয়াম-তনয় ঈসা, দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভূক্ত।
তাঁর জীবন সহানূভূতি, প্রজ্ঞা ও ভালোবাসায় পূর্ন ছিল যা দুনিয়াতে আশার বানী নিয়ে এসেছিল। যা এই অন্ধকার ও গুনাহভরা দুনিয়াতে মাবুদের একটি উপহার ছিল, এমন কি পবিত্র কুরআনেও আমরা তা দেখতে পাই।
সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব।
হযরত ঈসা (আঃ) একজন নবী ও মাবুদের বাণী !
হযরত ঈসা (আঃ) ছিলেন একজন নবী ও সেই সাথে আল্লাহর বাণী। কুরআন একথা বলে,
হে আহলে-কিতাবগণ! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর শানে নিতান্ত সঙ্গত বিষয় ছাড়া কোন কথা বলো না। নিঃসন্দেহে মরিয়ম পুত্র মসীহ ঈসা আল্লাহর রসূল এবং তাঁর বাণী যা তিনি প্রেরণ করেছেন মরিয়মের নিকট এবং রূহ-তাঁরই কাছ থেকে আগত। অতএব, তোমরা আল্লাহকে এবং তার রসূলগণকে মান্য কর। আর একথা বলো না যে, আল্লাহ তিনের এক, একথা পরিহার কর; তোমাদের মঙ্গল হবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ একক উপাস্য। সন্তান-সন্ততি হওয়াটা তাঁর যোগ্য বিষয় নয়। যা কিছু আসমান সমূহ ও যমীনে রয়েছে সবই তার। আর কর্মবিধানে আল্লাহই যথেষ্ট।
এখানে ঈসা নবীকে আল্লাহর বাণী বা কালাম বলার কারন কি? এ অর্থে কি এটা বোঝা যায় না যে আল্লাহ্ নিজেকে ঈসা নবীর মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন? কারণ তিনি পবিত্র এবং তাঁর কোনও আকার নাই এবং তিনি কখনই গুনাহর সংস্পর্শে আস্তে পারেন না। তাই নিজেই মানুষে রূপ ধারণ করেন... এখন সময় আরও গভীরভাবে চিন্তা করার।
হযরত ঈসা (আঃ) হলেন মসীহ!
যখন ফেরেশতাগণ বললো, হে মারইয়াম আল্লাহ তোমাকে তাঁর এক বানীর সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হলো মসীহ-মারইয়াম-তনয় ঈসা, দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভূক্ত।
এবং সূরা ৪:১৭১ বলে যে, ঈসা নবী হলেন আল্লাহের অনুগ্রহের দান।
সে বললঃ এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার জন্যে সহজ সাধ্য এবং আমি তাকে মানুষের জন্যে একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ করতে চাই। এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।
ঈসা মসীহ পবিত্র!
সূরা মারইয়াম (১৯:১৯) قَالَ إِنَّمَا أَنَا۠ رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَـٰمًۭا زَكِيًّۭا
সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব।
- ঈসা নবী নাজাতদাতা
- ঈসা নবীই সেই সরল পথ
তাহলে এটি প্রমানিত যে ঈসা মসীহের মধ্য দিয়েই আমরা নাজাত পেতে পারি। কিন্তু কিভাবে? আসুন সেটি নিয়ে আলোচনা করা যাক।
কিভাবে আমি নাজাত পেতে পারি?
নাজাতের কথা চিন্তা করলেই যে বিষয়গুলো মাথায় আসে সেগুলো হল,
- আমল করতে হবে,
- ধর্মীয় নিয়ম কানুন পালন করতে হবে,
- ধর্মীয় ভাবে পোষাক করতে হবে,
- পরিবারের অন্তত একজনকে মাদ্রাসায় পড়াতে হবে,
- অন্তত একজনকে কুরআনে হাফেজ বানাতে হবে,তাহলে সোয়াব হবে,
- তার মৃত্যুর পর তার নামে দোয়া পড়তে হবে,
- মৃত ব্যক্তির নামে টাকা পয়সা দান করার মাধ্যমে সোয়াব পাওয়া যায়,
- মসজিদে দান করতে হবে,
- ৫ বেলা নামাজ পড়তে হবে।
হ্যাঁ সবই বুঝলাম। কিন্তু সত্যিই কি এগুলো করলে নাজাত বা বেহেশত পাওয়া যাবে? কুরআন হাদিসে কি এগুলো একবারো পেয়েছেন? আমরা পাই নি, আমরা যা পেয়েছি তা হল হাদিস নং ৪ ইসলামী ফাউন্ডেশন বলা হয়েছে কোন ব্যক্তিই তার আমলের বিনিময়ে জান্নাতে যেতে পারবেন না, বরং জান্নাতে যাবে আল্লাহের রহমতের মাধ্যমে।
সহিহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)- হাদিস নং: ৪
এর মানে এই নয় আপনি ওগুলো পালন করবেন না, হ্যাঁ করতে পারেন ওগুলো আপনাকে সুন্দর একটা নিয়মের মধ্য রাখবে। কিন্তু আসল যে বিষয় তাহল আল্লাহর “রহমত” । আর সেটি বুঝতে হলে, আপনাকে প্রথমে বুঝতে হবে আল্লাহ এই দুনিয়াকে কিভাবে রহমত করছেন? আর যদি তা জানতে পারেন তাহলেই আপনি রহমতের মাধ্যমে নাজাত পাবেন।
সেই নাজাতের পরিকল্পনা হলেন হযরত ঈসা মসীহ, যা প্রথমে নবী ইব্রাহিমের (আঃ) কাছে প্রকাশিত হয়েছিল।
আসুন ভিডিওটি থেকে আল্লাহর পরিকল্পনা আরেকটিবার বোঝার চেষ্টা করি:
ভিডিওটি আমাদের দেখায় যে, কেন একজন নাজাতদাতা দুনিয়াতে আসার প্রয়োজন ছিল।
সকলের জন্য একটি চুড়ান্ত বার্তা;
হযরত ঈসা মসীহর বার্তা আশা এবং শান্তি নিয়ে আসে, কঠিন সময়ে সান্ত্বনা এবং আশা প্রদান করে। তাঁর শিক্ষা আমাদের একে অপরকে ভালবাসতে, ক্ষমা করতে এবং বিশ্বাসকে ধরে রাখতে উত্সাহিত করে। অনিশ্চয়তায় পূর্ণ বিশ্বে, তাঁর বার্তা অনুধাবন করা, গ্রহন করা সকলের মাঝে গভীর ও সুন্দর মনোভাব তৈরি করতে পারে, যা হবে এই দুনিয়ার আমাদের দেশের জন্য একটি সুন্দর সময়।
আমরা যেহেতু নিজেদের কাজের দ্বারা ও আমলের দ্বারা নাজাত পাই না, তাহলে আমাদের নাজাতের জন্য যে পথ তা হল হযরত ঈসা (আঃ), এবং এটাই আল্লাহর পরিকল্পানা ছিল।
'কিন্তু পাক-কিতাব কি বলে? কিভাবে আমরা সেই নাজাত পেতে পারি? সেটি হল বিশ্বাস কারন বলা হয়েছে ‘সেই বার্তা তোমার কাছে, তোমাদের মুখে ও তোমাদের অন্তরে রয়েছে,’ অর্থাৎ ঈমানেরই সেই বার্তা, যা আমরা তবলিগ করি। কারণ তুমি যদি ‘মুখে’ ঈসাকে প্রভু বলে স্বীকার কর এবং ‘হৃদয়ে’ ঈমান আন যে, আল্লাহ্ তাঁকে মৃতদের মধ্য থেকে উত্থাপন করেছেন, তবেই তুমি নাজাত পাবে। '-রোমীয় 10:8-9
আপনার সঠিক সিন্ধান্ত পদক্ষেপ আজই আপনাকে নাজাত দিতে পারে যা, দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য মহানন্দের, আর এই বার্তাটিই হল বড়দিনের আসল বিষয়।
আপনার যে কোন প্রশ্ন ও মতামতের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন!
(References from the QuranReferences from the Bible- Luke 2:11
- Romans 10:8-9
- John 14:6
- Ephesians 2:8-9
- 1 Peter 1:18-19
- John 8:12)
0 coment rios: