বড়দিন (Christmas) খ্রিস্টধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় উৎসবগুলোর মধ্যে একটি। এটি যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে পালিত হয় এবং প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এবং অনেক অখ্রিস্টান মানুষও উদযাপন করেন।
উৎসবের উৎপত্তি
বড়দিন উদযাপনের শুরু হয়েছিল খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে। যদিও বাইবেলে যিশু খ্রিস্টের জন্মতারিখ উল্লেখ নেই, তবে ২৫ ডিসেম্বরকে তাঁর জন্মদিন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ঐতিহাসিকভাবে, এই দিনটি রোমানদের প্যাগান উৎসব 'সোল ইনভিক্টাস' বা "অজেয় সূর্যদেবতা"র সঙ্গে যুক্ত ছিল, যা পরে খ্রিস্টধর্মের প্রভাবের ফলে যিশুর জন্মোৎসব হিসেবে পালিত হতে শুরু করে।
বড়দিনের মূল অর্থ
খ্রিস্টানদের কাছে বড়দিন কেবল একটি উৎসব নয়, এটি একটি ধর্মীয় আধ্যাত্মিক বিষয়। এটি পৃথিবীতে যিশু খ্রিস্টের আগমনকে স্মরণ করায়, যাঁকে খ্রিস্টানরা তাঁদের ত্রাণকর্তা এবং ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে মানেন। যিশুর জন্ম মানবজাতির জন্য প্রেম, শান্তি, ক্ষমা এবং মুক্তির বার্তা বহন করে।
বড়দিনের উদযাপন
বিশ্বজুড়ে বড়দিন বিভিন্ন রকমভাবে উদযাপিত হয়। এর মধ্যে কিছু সাধারণ ঐতিহ্য হলো:
1. গির্জায় প্রার্থনা: বড়দিনের দিন বিশেষ প্রার্থনা বা মিসা অনুষ্ঠিত হয়। এটি যিশুর জন্ম উপলক্ষে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো এবং তাঁর শিক্ষার স্মরণে উদযাপন করা হয়।
2. ক্রিসমাস ট্রি সাজানো: ক্রিসমাস ট্রি বড়দিনের অন্যতম প্রধান প্রতীক। এটি আলো, সজ্জা এবং তারা দিয়ে সাজানো হয়, যা খ্রিস্টের আলো ও জীবনের প্রতীক।
3. উপহার বিনিময়: যিশুর প্রতি জ্ঞানের উপহারস্বরূপ মাঘীদের (Magi) উপহার দেয়ার কাহিনির স্মরণে বড়দিনে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের মধ্যে উপহার বিনিময় করা হয়।
4. গান ও ক্যারল: বড়দিনে বিশেষ গান বা ক্যারল গাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে, যা যিশুর জন্ম এবং তাঁর শিক্ষা নিয়ে রচিত।
5. খাবার ও ভোজ: বড়দিনে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন দেশে এর ধরণ ভিন্ন হলেও, এটি পরিবারের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার একটি বিশেষ মুহূর্ত।
বড়দিনের প্রতীক
বড়দিনে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রতীক রয়েছে, যেগুলোর ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে:
ক্রিসমাস ট্রি: চিরসবুজ গাছ, যা জীবনের চিরন্তনত্বের প্রতীক।
স্টার (তারা): বেতলেহেমের তারা, যা জ্ঞানীদের যিশুর জন্মস্থানে পথ দেখিয়েছিল।
জিংগেল বেলস: আনন্দ এবং উৎসবের সুরের প্রতীক।
সান্তা ক্লজ: মূলত সেন্ট নিকোলাসের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, যিনি দরিদ্র শিশুদের জন্য উপহার দিয়ে তাদের মুখে হাসি এনে দিতেন।
পরিশেষে
বড়দিন কেবল যিশুর জন্ম উদযাপনের দিন নয়, এটি প্রেম, আশা এবং শান্তির বার্তা বহন করে। এটি মানুষকে অন্যের প্রতি দয়া, সহানুভূতি এবং ঐক্যবদ্ধতার শিক্ষা দেয়। ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক উৎসবের সমন্বয়ে বড়দিন একটি বৈশ্বিক উৎসবে পরিণত হয়েছে, যা প্রতিটি মানুষের জন্য আনন্দ ও ভালোবাসার প্রতীক।
0 coment rios: