ভূমিকা: অনেক বিশ্বাসী মনে করেন, বাইবেল ঈশ্বর-প্রদত্ত এবং মানবজীবনের জন্য নির্ভুল পথনির্দেশ। অন্যদিকে, কেউ কেউ এটিকে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গ্রন্থ হিসেবে দেখেন, যা মানুষের অভিজ্ঞতা ও ভাবনার প্রতিফলন।আমরা আলোচনা করবো, বাইবেলের ঐশ্বরিক উৎস সম্পর্কে খ্রিস্টান দৃষ্টিভঙ্গি কী, এতে কী ধরনের শিক্ষা রয়েছে, এবং কেন এটি ঈশ্বরের বাণী বলে বিবেচিত হয়।বাইবেল খ্রিস্টান ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ, যা দুই ভাগে বিভক্ত—পুরাতন ও নতুন ম। খ্রিস্টানগণ বিশ্বাস করেন, এটি ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় লিখিত, যা মানবজাতির প্রতি তাঁর ইচ্ছা ও পরিকল্পনা প্রকাশ করে। কিন্তু বাইবেল সত্যিই ঈশ্বরের বাণী কিনা, এ নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে।
বাইবেল কি ঐশী বাণী?
উওরঃহ্যাঁ, খ্রিস্টান বিশ্বাস অনুযায়ী, বাইবেল ঈশ্বরের (সৃষ্টিকর্তার) ঐশী বাণী বা "ঈশ্বর-প্রদত্ত বাক্য" (God-breathed Word)।
বাইবেলের ঐশীত্ব সম্পর্কে কিছু প্রধান ভিত্তি:
-
প্রত্যাদেশ (Divine Revelation):
- ২ তীমথিয় ৩:১৬-১৭:
"সমস্ত ধর্মগ্রন্থই ঈশ্বর-প্রদত্ত এবং তা শিক্ষা, তিরস্কার, সংশোধন এবং ধার্মিকতায় প্রশিক্ষণের জন্য উপকারী, যাতে ঈশ্বরের মানুষ সম্পূর্ণ প্রস্তুত ও সমস্ত শুভকর্মের জন্য উপযুক্ত হয়।"
- ২ তীমথিয় ৩:১৬-১৭:
-
নবী ও প্রেরিতদের মাধ্যমে ঈশ্বরের বাণী:
- ২ পিতর ১:২০-২১:
"প্রথমত তোমরা এই জানিবে, ধর্মগ্রন্থের কোন ভাববাণী ব্যক্তিগত ব্যাখ্যার উপর নির্ভরশীল নহে। কেননা ভবিষ্যদ্বাণী কদাপি মানুষের ইচ্ছায় আসেনি, বরং পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়া লোকেরা ঈশ্বরের পক্ষ হইতে কথা বলিয়াছে।"
- ২ পিতর ১:২০-২১:
-
যীশুর সাক্ষ্য:
- মথি ৫:১৮:
"আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যতক্ষণ না আকাশ ও পৃথিবী বিলীন হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত বিধির একটিও বিন্দুমাত্র পরিবর্তিত হবে না, যতক্ষণ না সমস্ত কিছু পূর্ণ হয়।"
- মথি ৫:১৮:
-
বাইবেলের ক্ষমতা ও কার্যকারিতা:
- হিব্রীয় ৪:১২:
"কারণ ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্যকর, এবং যে কোনো দ্বি-ধারী তলোয়ার অপেক্ষা তীক্ষ্ণ, যা আত্মা ও আত্মার সংযোগস্থলে প্রবেশ করতে সক্ষম, এবং হৃদয়ের চিন্তা ও অভিপ্রায় বিচারের জন্য উপযুক্ত।"
- হিব্রীয় ৪:১২:
ঐশী বাণী হিসেবে বাইবেলের গ্রহণযোগ্যতা
- বাইবেল শুধুমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং খ্রিস্টান বিশ্বাস অনুযায়ী এটি ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ নির্দেশ এবং পথনির্দেশনা।
- বাইবেলের লেখকগণ পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় লিখেছেন, তাই এটি নির্ভরযোগ্য ও চিরন্তন সত্য বলে বিবেচিত হয়।
- ইতিহাস, ভবিষ্যদ্বাণী, নৈতিকতা, আত্মিক জ্ঞান এবং যীশুর শিক্ষা—সবই বাইবেলে রয়েছে, যা ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর বলে খ্রিস্টানগণ বিশ্বাস করেন।
উপসংহার: বাইবেল কি ঐশী বাণী?
বাইবেল সম্পর্কে খ্রিস্টানদের বিশ্বাস হলো এটি ঈশ্বরপ্রদত্ত ও অনুপ্রাণিত পবিত্র গ্রন্থ। এতে পুরাতন ও নতুন নিয়মের মাধ্যমে ঈশ্বরের ইচ্ছা, শিক্ষা ও পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়েছে। বাইবেল নিজেই দাবি করে যে এটি ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা অনুপ্রাণিত (২ তীমথিয় ৩:১৬), এবং বহু শতাব্দী ধরে খ্রিস্টান সম্প্রদায় এটি ঈশ্বরের নির্ভরযোগ্য বাণী হিসেবে গ্রহণ করে আসছে।
তবে বাইবেলের ঐশ্বরিক প্রকৃতি স্বীকার করা বা অস্বীকার করা ব্যক্তির বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। কেউ এটিকে ঐশী বাণী হিসেবে গ্রহণ করে, আবার কেউ একে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় দলিল হিসেবে দেখে। কিন্তু যেহেতু বাইবেল মানবজাতির নৈতিকতা, আত্মিক উন্নতি এবং ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ, তাই একে সর্বদা গুরুত্বের সাথে অধ্যয়ন করা উচিত।
অতএব, বাইবেলকে ঐশী বাণী হিসেবে গ্রহণ করা হলে তা বিশ্বাস, অনুশীলন ও জীবনযাত্রার ভিত্তি হয়ে ওঠে, যা খ্রিস্টানদের জন্য চিরন্তন সত্য ও পথপ্রদর্শক।
0 coment rios: