সংবাদ শিরোনাম
লোডিং...
Menu

Monday, March 17, 2025

নারীকে পুরুষের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে বাইবেল কি শিক্ষা দেয়?


ভূমিকাঃবাইবেলে সৃষ্টিতত্ত্বের বর্ণনার মধ্যে নারী ও পুরুষের সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকেই মনে করেন, বাইবেল শুধুমাত্র পুরুষের জন্য নারীকে সৃষ্টি করেছে। তবে প্রকৃতপক্ষে, বাইবেল নারী ও পুরুষকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে দেখায়। সৃষ্টি কাহিনীতে দেখা যায়, ঈশ্বর প্রথমে আদমকে সৃষ্টি করেন এবং পরে তার একাকীত্ব দূর করার জন্য হাওয়াকে সৃষ্টি করেন (আদিপুস্তক ২:১৮)। এই প্রসঙ্গ থেকে বোঝা যায়, নারী ও পুরুষের সম্পর্ক পারস্পরিক সহায়তা ও পরিপূরকের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। নতুন নিয়মেও (New Testament) নারী ও পুরুষের সমান মর্যাদা ও নির্ভরশীলতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে (১ করিন্থীয় ১১:১১-১২)। তাই বাইবেলের দৃষ্টিকোণ থেকে নারীর সৃষ্টির উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পুরুষের জন্য নয়, বরং ঈশ্বরের পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ

বাইবেলের শিক্ষা অনুসারে, ঈশ্বর প্রথমে আদমকে সৃষ্টি করেন, তারপর তার জন্য একজন সহচর বা সহকারী হিসেবে হাওয়া (ইভ) কে সৃষ্টি করেন। আদিপুস্তক ২:১৮ পদে বলা হয়েছে:

"সদাপ্রভু ঈশ্বর বলিলেন, মানুষের পক্ষে একা থাকা ভাল নয়; আমি তাহার যোগ্য এক সাহায্যকারিণী করিয়া দিব।"

এই পদে  থেকে বোঝা যায় যে, নারীকে পুরুষের সহকারী বা সঙ্গী হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছিল, তবে তা মানে এই নয় যে তিনি পুরুষের চেয়ে নিম্নতর। বরং, তিনি একে অপরের পরিপূরক।

নতুন নিয়মেও (New Testament) এই সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। ১ করিন্থীয় ১১:১১-১২ তে পল বলেন:

"তথাপি, প্রভুর মধ্যে স্ত্রী পুরুষ ব্যতীত নহে, পুরুষও স্ত্রী ব্যতীত নহে। কারণ স্ত্রী যেহেতু পুরুষের দ্বারা, পুরুষও স্ত্রী দ্বারা; কিন্তু সমস্তই ঈশ্বরের দ্বারা।"

এখানে বোঝানো হয়েছে যে, পুরুষ ও নারী একে অপরের উপর নির্ভরশীল এবং ঈশ্বরের পরিকল্পনার মধ্যে সমান গুরুত্ব বহন করেন।

অতএব, বাইবেল নারীর মর্যাদা ও গুরুত্বকে খাটো করেনি; বরং পুরুষ ও নারীকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে শিক্ষা দেয়।

নাস্তিক আসিফ মঈনউদ্দীন এর দাবি গুলো দেখি ও খন্ডন করি, 

১ করিন্থীয় ১১:৮-১০ পদগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা বোঝার জন্য, প্রথমে পদগুলো দেখে নিই:

১ করিন্থীয় ১১:৮-১০ (বাংলা অনুবাদ)

"৮. কেননা পুরুষ স্ত্রীলোকের মধ্য হইতে জন্মে নাই, কিন্তু স্ত্রীলোক পুরুষের মধ্য হইতে জন্মিয়াছে।
৯. এবং পুরুষের নিমিত্ত স্ত্রীলোক সৃষ্টি হয় নাই, কিন্তু স্ত্রীলোক পুরুষের নিমিত্ত সৃষ্টি হইয়াছে।
১০. এইজন্য স্ত্রীলোকের কর্তৃত্বের চিহ্ন তাহার মস্তকে থাকা উচিত, স্বর্গদূতদের কারণে।"

ব্যাখ্যা:

১. নারী পুরুষ থেকে সৃষ্টি হয়েছে (পদ ৮)
→ এখানে পল সেই সৃষ্টি বৃত্তান্তের কথা স্মরণ করাচ্ছেন, যেখানে হাওয়া (ইভ) আদমের শরীর থেকে সৃষ্টি হয় (আদিপুস্তক ২:২১-22)। অর্থাৎ, নারীর উৎপত্তি পুরুষের মধ্য দিয়ে হয়েছে। তবে এটি নারীর অবমূল্যায়ন নয়, বরং বাইবেলের অন্যান্য অংশে পুরুষ ও নারী একে অপরের পরিপূরক হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে (যেমন, ১ করিন্থীয় ১১:১১-১২)।

  1. নারী পুরুষের জন্য সৃষ্টি হয়েছে (পদ ৯)
    → এই বক্তব্যও আদিপুস্তক গ্রন্থের ভিত্তিতে বলা হয়েছে (আদিপুস্তক ২:১৮), যেখানে ঈশ্বর বলেন যে, আদমের জন্য একজন "সহযোগী" প্রয়োজন। তবে এখানে "পুরুষের নিমিত্ত" মানে এই নয় যে নারী শুধুই পুরুষের অধীন; বরং নারী ও পুরুষের সম্পর্ক পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে গঠিত। নতুন নিয়মে পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে যে, পুরুষও নারীর ওপর নির্ভরশীল (১ করিন্থীয় ১১:১১-১২)

  2. নারীর মাথার ওপর কর্তৃত্বের চিহ্ন থাকা উচিত (পদ ১০)
    → এখানে "কর্তৃত্বের চিহ্ন" বলতে নারীদের মাথা ঢেকে রাখা বা পর্দা পরিধানের বিষয়ে বলা হয়েছে, যা প্রাচীন ইহুদি ও গ্রিক সমাজে শালীনতার প্রতীক ছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এটি কেবল সামাজিক বা সাংস্কৃতিক রীতি নয়, বরং এর একটি আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণও রয়েছে।

    "স্বর্গদূতদের কারণে" – এই বাক্যটির বিভিন্ন ব্যাখ্যা আছে:

    • কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, স্বর্গদূতেরা ঈশ্বরের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার পর্যবেক্ষক, তাই নারীর উচিত উপযুক্ত শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
    • অন্য ব্যাখ্যায় বলা হয়, যেহেতু ফেরেশতারা পবিত্র ও কর্তৃত্বশীল সত্তা, তাই নারীদের উচিত শালীনতা ও আনুগত্য প্রদর্শন করা।
    • এছাড়াও, "স্বর্গদূতদের কারণে" বলতে ফেরেশতাদের উপস্থিতির কথা বোঝানো হতে পারে, যারা উপাসনার সময়ে উপস্থিত থাকেন (যেমন যিশাইয় ৬:২-৩ তে ফেরেশতাদের উপাসনা করার দৃশ্য দেখা যায়)।

সারসংক্ষেপ:

এই পদগুলো সৃষ্টি বৃত্তান্তের ভিত্তিতে পুরুষ ও নারীর সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে। এখানে নারীকে ছোট করে দেখা হয়নি, বরং বলা হয়েছে যে, নারী ও পুরুষের মধ্যে একটি সুশৃঙ্খল সম্পর্ক থাকা উচিত, যা ঈশ্বরের পরিকল্পনার অংশ। নারীর মাথা ঢেকে রাখার প্রসঙ্গটি সেই সময়ের সাংস্কৃতিক রীতি ছিল, তবে এর মূল শিক্ষা হলো সম্মান, শৃঙ্খলা ও কর্তৃত্বের অধীনে থাকা। একইসঙ্গে পরবর্তী আয়াতগুলোতে (১ করিন্থীয় ১১:১১-১২) পল পরিষ্কারভাবে বলেন যে, পুরুষ ও নারী একে অপরের ওপর নির্ভরশীল এবং ঈশ্বরের সামনে সমান মর্যাদাসম্পন্ন

আসিফ মঈনউদ্দীন নাস্তিক একজন বক্তা ও লেখক, যিনি বিভিন্ন ধর্মতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি প্রায়ই খ্রিস্টধর্মের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে থাকেন, বিশেষ করে বাইবেলের প্রসঙ্গে। তার দাবিগুলোর মধ্যে একটি সাধারণ অভিযোগ হলো—বাইবেল নারীকে পুরুষের জন্য সৃষ্টি করেছে এবং তাকে অধীনস্থ করেছে। তবে, বাইবেলের শিক্ষার সঠিক ব্যাখ্যা দিলে এই দাবি টেকে না।


আসিফ মঈনউদ্দীনের দাবির খণ্ডন (বাইবেলের ভিত্তিতে)

১. নারী শুধুই পুরুষের জন্য সৃষ্টি হয়েছে—এই দাবি অসত্য

আসিফের দাবি:

  • বাইবেল নাকি বলে, ঈশ্বর কেবল পুরুষের জন্য নারীকে সৃষ্টি করেছেন এবং নারীর অস্তিত্বের মূল উদ্দেশ্য পুরুষের সেবা করা।

খণ্ডন (বাইবেল অনুযায়ী):

  • আদিপুস্তক ১:২৭

    "তাহাতে ঈশ্বর নিজ স্বরূপে মানুষকে সৃষ্টি করিলেন; ঈশ্বরের স্বরূপে তাহাকে সৃষ্টি করিলেন; তিনি তাহাদের পুরুষ ও স্ত্রীলোক করিয়া সৃষ্টি করিলেন।"

    • এখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর মানুষকে পুরুষ ও নারী উভয় হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন, যা তাদের সমান মর্যাদার প্রতিফলন।
  • ১ করিন্থীয় ১১:১১-১২

    "তথাপি, প্রভুর মধ্যে স্ত্রী পুরুষ ব্যতীত নহে, পুরুষও স্ত্রী ব্যতীত নহে। কারণ স্ত্রী যেহেতু পুরুষের দ্বারা, পুরুষও স্ত্রী দ্বারা; কিন্তু সমস্তই ঈশ্বরের দ্বারা।"

    • এখানে পল বলেছেন যে, নারী ও পুরুষ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল এবং ঈশ্বরের পরিকল্পনার সমান অংশ

অর্থাৎ, নারী কেবল পুরুষের জন্য সৃষ্টি হয়নি, বরং নারী ও পুরুষ পরস্পরের জন্য সৃষ্টি হয়েছে।


২. বাইবেল নারীকে পুরুষের অধীনস্থ করেছে—এই দাবি আংশিক সত্য, তবে ভুলভাবে উপস্থাপিত

আসিফের দাবি:

  • বাইবেল নাকি নারীকে পুরুষের অধীনে থাকতে বলে, যা নারীর অধিকার খর্ব করে।

খণ্ডন (বাইবেল অনুযায়ী):

  • ইফিষীয় ৫:২২-২৫

    "হে স্ত্রীলোকগণ, প্রভুর ন্যায় আপন আপন স্বামীর আধীনে থাক। কেননা খ্রিস্ট যেরূপ মণ্ডলীর মস্তক, স্বামীও সেইরূপ স্ত্রীর মস্তক; এবং তিনিই মণ্ডলীর ত্রাণকর্তা। কিন্তু মণ্ডলী যেরূপ খ্রিস্টের অধীনে, স্ত্রীলোকগণও সেইরূপ সমস্ত বিষয়ে আপন স্বামীর অধীনে থাকুক।"
    "হে স্বামীগণ, খ্রিস্ট যেরূপ মণ্ডলীকে প্রেম করিয়াছেন ও তাহার জন্য আত্মবিসর্জন দিয়াছেন, তোমরাও সেইরূপ স্ত্রীলোকদের প্রেম কর।"

    • এখানে নারীর অধীনস্থতা বলা হয়েছে, তবে পুরুষেরও নারীর প্রতি দায়িত্ব ও আত্মত্যাগের কথা বলা হয়েছে
    • স্বামীকে যিশুর মতো নিঃস্বার্থভাবে স্ত্রীকে ভালোবাসতে বলা হয়েছে, যার মানে নারীর প্রতি সম্মান ও যত্ন নেওয়া।
  • গালাতীয় ৩:২৮

    "ইহুদী বা গ্রীক নাই, দাস বা স্বাধীন নাই, পুরুষ বা স্ত্রী নাই, কারণ তোমরা সকলে খ্রিস্ট যীশুর মধ্যে এক আছ।"

    • এখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, খ্রিস্টের মধ্যে পুরুষ ও নারী সমান মর্যাদার অধিকারী

অতএব, বাইবেল নারীর অধীনস্থতার কথা বলে ঠিকই, তবে তা একপাক্ষিক শাসন বা দাসত্ব নয়; বরং পারস্পরিক প্রেম ও দায়িত্বশীলতার ভিত্তিতে একটি শৃঙ্খলাপূর্ণ সম্পর্ক।


৩. বাইবেল নারীকে অবমাননা করে—এই দাবি অসত্য

আসিফের দাবি:

  • বাইবেল নাকি নারীকে খাটো করে দেখে এবং তাকে সমাজে নিচু স্থানে রাখে।

খণ্ডন (বাইবেল অনুযায়ী):

  • হিতোপদেশ ৩১:১০-৩১

    • এখানে এক গুণবান নারীর প্রশংসা করা হয়েছে, যিনি পরিবারের জন্য দায়িত্বশীল, বুদ্ধিমতী, কর্মঠ এবং স্বামীর সম্মান বৃদ্ধি করেন।
    • বিশেষ করে "স্ত্রীলোকের প্রশংসা করা উচিত" (পদ ৩১) বলা হয়েছে।
  • লূক ৮:১-৩

    • যিশু খ্রিস্ট তাঁর শিষ্যদের মধ্যে নারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, যা তখনকার সমাজে বিপ্লবী ছিল।
  • মার্ক ১৬:৯

    • যিশু পুনরুত্থানের পর প্রথমে একজন নারী, মেরী মাগদালিনাকে দেখা দেন, যা নারীদের প্রতি সম্মান প্রকাশ করে।

অতএব, বাইবেল নারীদের অবমাননা করে না; বরং তাদের উচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের সাথে তুলে ধরে।


উপসংহার

আসিফ মঈনউদ্দীনের দাবি একপাক্ষিক ও বিকৃত ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে তৈরি। বাইবেল স্পষ্টভাবে শিক্ষা দেয় যে:

  1. নারী ও পুরুষ উভয়ই ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং সমান মর্যাদাসম্পন্ন।
  2. নারী শুধুই পুরুষের জন্য সৃষ্টি হয়নি; বরং তারা একে অপরের পরিপূরক।
  3. নারীর অধীনস্থতা মানে দাসত্ব নয়; বরং পারস্পরিক দায়িত্ব ও ভালোবাসার সম্পর্ক।
  4. বাইবেল নারীকে খাটো করে দেখে না; বরং তাদের মর্যাদা, সম্মান ও গুরুত্ব প্রদান করে।

যদি বাইবেলের শিক্ষা সঠিকভাবে বোঝা হয়, তাহলে দেখা যাবে যে খ্রিস্টধর্ম নারীকে অবহেলা করে না; বরং তাকে ঈশ্বরের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেয়। 

১ করিন্থীয় ১১:৮-১০ পদগুলোর ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায় যে, বাইবেল নারী ও পুরুষের সম্পর্ককে সুশৃঙ্খল ও পরিপূরক হিসেবে তুলে ধরে। সৃষ্টি বৃত্তান্ত অনুযায়ী, নারী পুরুষের মধ্য থেকে সৃষ্টি হলেও, পরবর্তী আয়াতগুলো স্পষ্ট করে যে, পুরুষও নারীর ওপর নির্ভরশীল এবং উভয়ই ঈশ্বরের পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে নারীর জন্য "কর্তৃত্বের চিহ্ন" বা মাথা ঢেকে রাখার বিষয়টি তখনকার সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের একটি প্রতীক, যা শৃঙ্খলা ও আনুগত্য প্রকাশ করত।

তবে বাইবেল কখনোই নারীকে অবমূল্যায়ন করেনি; বরং নতুন নিয়মে (১ করিন্থীয় ১১:১১-১২) স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, নারী ও পুরুষ একে অপরের পরিপূরক এবং ঈশ্বরের কাছে সমান মর্যাদাসম্পন্ন। তাই, বাইবেলের শিক্ষা অনুযায়ী, নারী ও পুরুষের সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা, দায়িত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তিতে গঠিত, যা ঈশ্বরের নিখুঁত পরিকল্পনার প্রতিফলন।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: