লুসিফার নামটা কোথা থেকে পাওয়া গেছে !
যিশাইয় ১৪:১২ পদে "শুকতারা" "ভোরের সন্তান" সম্পর্কিত একটা ঘটনার বর্ণনা রয়েছে, যাকে আজকের দিনে আমরা VENUS বা "শুক্র গ্রহ" বলে থাকি। মূল হিব্রু ভাষায় "প্রভাতি তারা" মানে হেয়লেহ্ (heylah) অর্থাৎ "যে আলো নিয়ে আসে"। ল্যাটিন ভালগেট অনুবাদের সময় এই শব্দ প্রথমবারের মত 'লুসিফার" হিসাবে অনুবাদ করা হয়। ভালগেট হচ্ছে চতুর্থ শতাব্দীতে ঈশ্বতত্ত্ববিদ্ যেরোম (২৬০-৩৪০ খ্রীষ্টাব্দ) কর্তৃক হিব্রু ভাষার পুরাতন নিয়মের ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করা বাইবেল। ১৬১১ খ্রীষ্টাব্দে ইংরেজি কিং জেমস ভার্সনে (King James Version) লুসিফার শব্দ ব্যবহার করা হয় এবং তখন থেকে এই শব্দ সাধারণভাবে প্রচলিত শব্দ হয়ে ওঠে।
একেবারে শুরুতে লুসিফারকে শয়তান হিসাবে সৃষ্টি করা হয় নাই। সে ছিল একজন জাঁকজমকে পূর্ণ, খুবই উঁচু একজন স্বর্গদূত, তার চমৎকার সৌন্দর্যের জন্য খ্যাতিমান এবং রক্ষাকারী করব হিসাবে সে ছিল ঈশ্বর মনোনীত ( যিহিস্কেল ২৮-১২-১৪ পদ দ্রষ্টব্য)। কিন্তু তার পতনের পর তার চমৎকার নাম লুসিফার পরিবর্তন করে শয়তান নাম দেওয়া হয়, যার মানে- "যে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে”। পবিত্র বাইবেলে যিশাইয় ১৪:১২-১৫ ও যিহিস্কেল ২৮:১৫-১৯ পদে লুসিফারের পতনের বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে।
লুসিফারের পতন
ঈশ্বর যখন মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন তখন তিনি স্বর্গদূতদেরও সৃষ্টি করেছিলেন (আদি পুস্তক ১:১: ইয়োব ৩৮:৪-৭ পদ দ্রষ্টব্য)। স্বর্গদূতদের মধ্যে একজন প্রধান স্বর্গদূতের নাম ছিল "লুসিফার"। লুসিফার শব্দের মূল অর্থ হচ্ছে "আলো বহনকারী"। সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের বিশেষ ভালবাসা থাকার কারণে লুসিফারকে শুকতারা বা "ভোরের সন্তান" বলে ডাকা হোত (যিশাইয় ১৪:১২ পদ দ্রষ্টব্য)। সে ছিল করুবদের মধ্যে প্রধান, অভিষেক পাওয়া, সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ, সম্পূর্ণ নিখুঁত, জ্ঞানে ও ক্ষমতায় পূর্ণ, সমস্ত সৃষ্ট স্বর্গদূতদের মধ্যে উঁচু পদমর্যাদার অধিকারী ( যিহিস্কেল ২৮:১২-১৪ পদ দ্রষ্টব্য)।
কিন্তু লুসিফার ঈশ্বরের দেওয়া সব সুযোগ-সুবিধা স্বাধীনভাবে ভোগ করার সুযোগ পেয়ে ভীষণভাবে অহংকারী হয়ে উঠেছিল (যিশাইয় ১৪:১৩-১৪: যিহিস্কেল ২৮:১৫-১৯ পদ দ্রষ্টব্য)। ঈশ্বরের সৃষ্টির উদ্দেশ্য অনুসারে, ঈশ্বরের সৃষ্ট হয়েও সে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও গৌরব দেওয়ার বদলে নিজেকে ঈশ্বরের সমকক্ষ ভেবে গৌরব ও সম্মান নিজেই গ্রহণ করতে শুরু করেছিল।
যেহেতু তার কাজ ছিল ঈশ্বরের সৃষ্টির উদ্দেশ্যের বিপক্ষে (যিশাইয় ৪৩:৭, ২১: রোমীয় ৯:৫; কলসীয় ১:১৬ পদ দ্রষ্টব্য), সেহেতু ঈশ্বরের শাস্তি তার উপরে নেমে এসেছিল। লুসিফারকে তৃতীয় স্বর্গ (স্বর্গের স্বর্গ বা পরমদেশ) থেকে প্রথম স্বর্ণ (বায়ুমন্ডলের স্তরে) এবং দ্বিতীয় স্বর্গে (বিশ্ব ব্রহ্মান্ড, আকাশের বিস্তত স্থানে) ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল 'স্বর্গের কাঠামো: তালিকা-১ দ্রষ্টব্য)। এই সময় লুসিফারের সাথে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ স্বর্গদূতদেরও ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল (২ পিতর ২:৪: যিহূদা ১:৬: প্রকাশিত বাক্য ১২:৪ পদ দ্রষ্টব্য)।
আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, সর্বজ্ঞ ঈশ্বর কি (প্রেরিত ২:২৩। রোমীয় ৮-২৯-৩০। গালাতীয় ৩:৮: ১ পিতর ১:২, ২০ পদ দ্রষ্টব্য) সৃষ্টির আগেই লুসিফারের পতনের কথা জানতেন? নিশ্চয়ই তিনি জানতেন। তাহলে আমরা একথা ভেবে অবাক হতে বাধ্য, কেন সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ ঈশ্বর (আদি পুস্তক ১৭:১। যিরমিয় ৩২:১৭, ২৭; প্রকাশিত বাক্য ১৫:৩) ১৯:৬ পদ দ্রষ্টব্য) লুসিফারকে পতনের হাত থেকে রক্ষা না করে পতনের অনুমোদন দিয়েছিলেন। অথবা কেন সাথে সাথে নরকে পাঠিয়ে দেন নাই? সাথে সাথে নরকে দিলে তো এই পৃথিবীতে পাপের অস্তিত্ব থাকত না, আদমও পাপে পতিত হোত না এবং যীশুও এই পৃথিবীতে এসে আমাদের পাপের জন্য মরতেন না।
0 coment rios: