সংবাদ শিরোনাম
লোডিং...
Menu

Sunday, July 28, 2024

খ্রীষ্টানরা ত্বকসেদ বা খৎনা কেন করে না? তার ধর্মীয় ব্যাখ্যা কি?

কারণ খৎনা এখন বাস্তবিক প্রচুর বটে, কিন্তু ঈশ্বরের পুত্র যীশুতে সর্বদা ঈশ্বরের গৌরব প্রকাশ করি। কারণ তিনিই পাপিদের জন্য ঈশ্বরের বিশেষ রহমত। যে যীশুকে পেয়েছেন সে ঈশ্বরকে পেয়েছে, যে যীশুকে পায় নি সে ঈশ্বরকে পায় নি। বর্তমান এখন মুসলিমরা খৎনা সম্পর্কে আজ খ্রীষ্টানদের প্রশ্ন করছেন, এর কারণ তারা খৎনা করার পরে নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করে। কিন্তু প্রশ্ন হল খৎনার সংগে মুসলিমদের কি সম্পর্ক? খৎনা করার অর্থই বা কি? কে খৎনার এই চিহ্ন বহন করতে পারে? খ্রীষ্টানরা কেন খৎনা করে না? আসুন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বাইবেল হতে দেখি -


১। ঈশ্বর ইবরাহিমের সংগে একটি সম্পর্কে প্রবেশ করেন। ইবরাহিমের বংশের সংগে ঈশ্বরের সম্পর্ক চিরকালীন, তাই ঈশ্বর এই সম্পর্ককে চিরস্থায়ী রুপ দিতে ইবরাহিম এর ভাবি বংশের পুরুষদের খৎনার চিহ্ন দেন।


ক. আদিপুস্তক ১৭:৪-৬ এখানে বর্ণিত ইবরাহিম বহুজাতির আদি পিতা হবেন।

খ.১৭: ৭ পদ - চুক্তিটি ঈশ্বর ও ইবরাহিমের এবং তোমার ভাবি বংশের প্রতি প্রসারিত।

গ. ৭ পদ : সদাপ্রভু " তোমার ঈশ্বর ও তোমার ভাবি বংশের ঈশ্বর " হওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন।


২। আদিপুস্তক ১৭:৯-১৪ - এ ঈশ্বর ইবরাহিম ও তার বংশের জন্য শর্তাবলী আরোপ করেন।


ঈশ্বর সদাপ্রভু দ্বিমুখী উপায়ে ইবরাহিমের নিকট সম্পর্কে বাধ্যবাধকতা তুলে ধরেন।

ক. ২ পদ :  আমি তোমার সহিত আপন নিয়ম স্থির করিব।

খ. ৪ পদ : দেখ, আমিই তোমার সহিত আপন নিয়ম করিতেছি।


ঈশ্বরের সংগে ইবরাহিমের সম্পর্কে বাধ্যবাধকতার দুটি সূত্র আমরা পাই।

ক. ৯ পদ : তুমি আমার নিয়ম পালন করিবে।

খ. ১০ পদ : এ আমার নিয়ম, যা তোমরা পালন করিবে।


ঈশ্বর ইবরাহিমের নিকট বাধ্যবাধকতা চান যেন তিনি চুক্তির শর্ত খৎনা মেনে চলেন।


চুক্তির বাধ্যবাধকতাঃ ১০ পদ : তোমাদের সহিত ও তোমার ভাবী বংশের সহিত কৃত আমার যে নিয়ম তোমরা পালন করিবে, তাহা এই, তোমাদের প্রত্যেক পুরুষের ত্বক্‌ছেদ হইবে।


১৩ পদ : তোমার গৃহজাত কিম্বা মূল্য দ্বারা ক্রীত লোকের ত্বক্‌ছেদ অবশ্য কর্ত্তব্য; আর তোমাদের মাংসে বিদ্যমান আমার নিয়ম চিরকালের নিয়ম হইবে।


ঈশ্বর বলেন, " তোমাদের প্রত্যেক পুরুষের খৎনা করাতে হবে, কাউকেই বাদ দেওয়া যাবে না।


১২ পদ : পুরুষানুক্রমে তোমাদের প্রত্যেক পুত্রসন্তানের আট দিন বয়সে ত্বক্‌ছেদ হইবে, এবং যাহারা তোমার বংশ নয়, এমন পরজাতীয়দের মধ্যে তোমাদের গৃহে জাত কিম্বা মূল্য দ্বারা ক্রীত লোকেরও ত্বক্‌ছেদ হইবে।


ঈশ্বরের হুকুম প্রত্যেক পুরুষ সন্তানকে ৮ দিনের দিন খৎনা করাতে হবে। এখানে দুরকম শিশুর কথা বলা হয়েছে।


১। যারা স্বাভাবিক বংশের গৃহ জাত,অর্থাৎ ইবরাহিমের বংশের উত্তরসূরী।

২। এবং গৃহে বসবাসরত দাসের সন্তানদের কথা বলেছেন। যেন কোন ভুল বোঝাবুঝি না হয়, তা নিশ্চিত করতে " যাহারা তোমার বংশ নয় " কথাগুলো ঈশ্বর পরিস্কার করেছেন।


১৩ পদ : তোমার গৃহজাত কিম্বা মূল্য দ্বারা ক্রীত লোকের ত্বক্‌ছেদ অবশ্য কর্ত্তব্য; আর তোমাদের মাংসে বিদ্যমান আমার নিয়ম চিরকালের নিয়ম হইবে।


বর্তমানে বাংলাদেশের মুসলিমরা ইবরাহিমের দৈহিক বংশ নয় এবং কৃত দাসও নয় তাহলে তারা খৎনা করছেন কিসের আশায়? এতে তাদের কি লাভ আছে? ঈশ্বর কতৃক খৎনার আওতায় তারা পরে না। যে কেউ খৎনা করে ইবরাহিমের বংশের লোক হবে এমন শিক্ষা ঈশ্বরের আদেশে নেই।


খৎনার অর্থঃ ১১ পদে খৎনাকে এভাবে বলা হয়েছে: তাহাই তোমার সহিত আমার নিয়মের চিহ্ন হইবে। সুতরাং খৎনা চুক্তির সার বিষয় নয়, এটি চুক্তির সারের চিহ্ন। এটি নিঃসন্দেহে চুক্তির দিকে ইংগিত দেয় কেননা ঈশ্বর তাঁর প্রত্যাদেশে চিহ্নের অর্থ দিয়েছেন। প্রকৃত পক্ষে খৎনার অনুষ্ঠান যা ইবরাহিমের সংগে ঈশ্বরের কৃত চুক্তির প্রতিজ্ঞের দিকে ইংগিত দেয়। মথি ২৬:২৬-২৮ পদে - এ প্রভুর ভোজ প্রচলনের ক্ষেত্রে আমরা উত্তম উদাহরণ দেখতে পাই।যীশু শিষ্যদের রুটি দিয়ে বলেন " লও, ভোজন কর, ইহা আমার শরীর।" তারপর তিনি আঙ্গুর রস নিলেন এবং তাদের দিয়ে বললেন " তোমরা সকলেই ইহাতে পান কর, কারণ ইহা আমার রক্ত, নতুন নিয়মের রক্ত, যা অনেকের জন্য, পাপ মোচনের জন্য পাতিত হয়। সে পরিস্তিতিতে এটি স্পষ্ট হওয়া উচিত যে রুটি ও আঙ্গুর রস কেবল দেহ ও রক্তের প্রতিনিধিত্ব করে যা যীশু তাঁর লোকদের পাপের জন্য শীঘ্রই দিতে যাচ্ছেন।


রোমীয় ৪:৯-১১ ভাল, এই ‘ধন্য’ শব্দ কি ছিন্নত্বক্‌ লোকেই বর্ত্তে, না অচ্ছিন্নত্বক্‌ লোকেও বর্ত্তে? কারণ আমরা বলি, অব্রাহামের পক্ষে তাঁহার বিশ্বাস ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণিত হইয়াছিল।কোন্‌ অবস্থায় গণিত হইয়াছিল? ছিন্নত্বক্‌ অবস্থায়, না অচ্ছিন্নত্বক্‌ অবস্থায়? ছিন্নত্বক্‌ অবস্থায় নয়, কিন্তু অচ্ছিন্নত্বক্‌ অবস্থায়। আর তিনি ত্বকছেদচিহ্ন পাইয়াছিলেন; ইহা সেই বিশ্বাসের ধার্ম্মিকতার মুদ্রাঙ্ক ছিল, যে বিশ্বাস অচ্ছিন্নত্বক্‌ থাকিতে তাঁহার ছিল; উদ্দেশ্য এই, যেন অচ্ছিন্নত্বক্‌ অবস্থায় যাহারা বিশ্বাস করে, তিনি তাহাদের সকলের পিতা হন, যেন তাহাদের পক্ষে সেই ধার্ম্মিকতা গণিত হয়;


যাত্রা ৬:৩০ আর মোশি সদাপ্রভুর সাক্ষাতে বলিলেন, দেখ, আমি অচ্ছিন্নত্বক-ওষ্ঠ, ফরৌণ কি প্রকারে আমার কথা শুনিবেন?


লেবীয় ২৬:৪১-৪২ এবং আমিও তাহাদের বিপরীত আচরণ করিয়াছি, আর তাহাদিগকে শত্রুদেশে আনিয়াছি। তখন যদি তাহাদের অচ্ছিন্নত্বক হৃদয় নম্র হয়, ও তাহারা আপন আপন অপরাধের দণ্ড গ্রাহ্য করে, তবে আমি যাকোবের সহিত কৃত আমার নিয়ম স্মরণ করিব, এবং ইস্‌হাকের সহিত কৃত আমার নিয়ম ও অব্রাহামের সহিত কৃত আমার নিয়মও স্মরণ করিব, আর দেশকেও স্মরণ করিব।


দ্বিবি ১০:১৬ অতএব তোমরা আপন আপন হৃদয়ের ত্বগগ্র ছেদন কর, এবং আর শক্তগ্রীব হইও না।


দ্বিবি ৩০:৬  আর তুমি যেন সমস্ত হৃদয় ও সমস্ত প্রাণের সহিত আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিয়া জীবন লাভ কর, এই জন্য তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার হৃদয় ও তোমার বংশের হৃদয় ছিন্নত্বক্‌ করিবেন।


খৎনা ঈশ্বরের অনুগ্রহের চিহ্নের মুদ্রাঙ্ক যার অর্থ সব চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় " আমি তোমাদের ঈশ্বর হইব এবং এবং তোমরা আমার প্রজা হইবে, লেবিয় ২৬:১২ সুতরাং খৎনার তিনটি অর্থ আছে -


১। ঈশ্বরের সহিত একতা ও মিলন।

২। নোংরামি থেকে দূরে থাকা।

৩। বিশ্বাসের ধার্মিকতা।


এই তিনটি পরস্পর বিরোধী নয়, কিন্তু পরস্পর সম্পূরক। খৎনা হল চিহ্ন যে গ্রহীতা ঈশ্বরের সহিত চুক্তির সম্পর্কে রয়েছে। এটি ঈশ্বরের সহিত মিলনের ও জগৎ থেকে আলাদা হওয়ার চিহ্ন।


খৎনা পুরাতন নিয়মে ঈশ্বরের লোকদের চিহ্ন যা শরিয়তের বাদ্ধতায় নিজেকে আবদ্ধ করে। কিন্তু নতুন নিয়মে প্রভু যীশু আমাদের পক্ষে সকল শরীত পালন করে, আমাদের শরীয়তের দোষ হইতে উদ্ধার করেছেন। হ্যা যীশু অষ্টম দিনে খৎনা করেছেন, সকল শরীয়ত নিজ দেহে পালন করেছেন, শরীয়তের শর্ত পূর্ণ করতে নিজ রক্ত ক্রুশে ঢেলে দিয়ে পাপের কাফফারা বহন করেছেন, মৃত্যুকে পরাজিত করে শয়তানের শক্তিকে খর্ব করেছেন এবং নতুন চুক্তির চিহ্ন হৃদয়ে বিশ্বাসের চিহ্ন বাপ্তিস্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন।


মথি ২৮:১৯  অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর


খৎনার সহিত বাপ্তিস্মের সম্পর্কঃ


ক. আদিপুস্তক ১৭:৭ এ ঈশ্বর বলেন, " আমি তোমার ঈশ্বর হইব ও তোমার ভাবি বংশের ঈশ্বর হইব " এ কথার দ্বারা তাঁর চুক্তির সম্পর্কে চিহ্নিত করেন। ঈশ্বর আরো প্রতিজ্ঞা করেন যে চুক্তিটি হবে " এক চিরকালের নিয়ম "। এ প্রসঙ্গে আমরা লেবীয় ২৬:১২ এর অর্থ দেখতে পারি-


ঈশ্বর বলেন -


১। আমি তোমাদের মধ্যে গমনাগমন করিব।

২। আমি তোমাদের ঈশ্বর হইব।

৩। তোমরা আমার প্রজা হইবে।


আমাদের আলোচনায় উপরোক্ত এই তিনটি বিষয় এই শিক্ষা দেয় যে এ দুটো কিতাবের অংশ আলোচিত চুক্তির সম্পর্কে [ আদিপুস্তক ১৭:৭ এবং লেবিয় ২৬:১২ ] ঈশ্বরের সহিদ মিলনের কম কিছু বুঝায় না। যে চুক্তির চিহ্ন ও মুদ্রাঙ্ক ছিল ত্বকচ্ছেদ।


খ. এখন নতুন নিয়মে মথি ২৮:১৯ এ যীশুর মহান আদেশ অধ্যায় করলে, আমরা পরিস্কার দেখতে পাই, আমরা দেখি যে বাপ্তিস্মের সূত্র ত্রিত্ব ঈশ্বরের সহিদ আমাদের একতা ও মিলনের তাৎপর্য বহণ করে।


মথি ২৮:১৯ পদে -  অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর;


এখন বলা উচিত যে ত্বকচ্ছেদ ও বাপ্তিস্মের স্পষ্টতঃ একই অর্থ। চুক্তির চিহ্ন রুপে যে ঈশ্বর ইবরাহিমকে আদিপুস্তক ১৭ তে ত্বকচ্ছেদের আচার অনুষ্ঠান করতে আদেশ করেন, সে একই ঈশ্বরের চুক্তির সম্পর্কের নতুন চিহ্নরুপে বাপ্তিস্মের আচার সম্পন্ন করতে তাঁর প্রেরিতদের আদেশ করেছেন।


গালাতীয় ৬:১৫-১৬ কারণ ত্বক্‌ছেদ কিছুই নয়, অত্বক্‌ছেদও নয়, কিন্তু নূতন সৃষ্টিই সার। আর যে সকল লোক এই সূত্রানুসারে চলিবে, তাহাদের উপরে “শান্তি” ও দয়া বর্ত্তুক, ঈশ্বরের “ইস্রায়েলের উপরে বর্ত্তুক”।


২ করিন্থী ৫: ১৭ ফলতঃ কেহ যদি খ্রীষ্টে থাকে, তবে নূতন সৃষ্টি হইল; পুরাতন বিষয়গুলি অতীত হইয়াছে, দেখ, সেগুলি নূতন হইয়া উঠিয়াছে।


এখন খ্রিস্টানরা চার্চে দুটি আচার অনুষ্ঠান পালন করেন -


১। বাপ্তিস্ম [ নতুন চুক্তির চিহ্ন আর পুরাতন নিয়মের চুক্তির চিহ্ন খৎনা ]।

২। ও প্রভুর ভোজ/ মিশা


অতএব - আপনার অভিযোগ খ্রিস্টানরা কেন খৎনা করে না এটি সম্পূর্ণরূপে খারিজ করা হইলো যেহেতু খ্রিষ্টানরা বাপ্তিস্মের মাধ্যমে পূর্ণ খৎনার নিয়ম পালন করছেন।


#বিঃদ্রঃ খ্রীষ্টান পুরুষ সন্তানরা খৎনা করেন স্বাস্থ্যগত কথা চিন্তা করে তবে এখানে ধর্মীয় কোন কারণ নেই।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: