আমাদের চার্চের মধ্যে খ্রীষ্টানরা প্রায়ই বলে থকেন যে, ত্রিত্ত্ব বুঝা ও ব্যাখ্যা করা কঠিন। তবে আমি বলি যারা ত্রিত্ত্বকে বিশ্বাস করে যেভাবে বাইবেলের অনেক বিষয়কে তারা না বুঝে বিশ্বাস ও গ্রহণ করেন। তবে ত্রিত্ত্ব যেহেতু আমাদের বিশ্বাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ও অপরিত্যাজ্য উপাদান, এ বিষয়টি আমাদের বুঝা অথবা বুঝার জন্য অন্ততঃচেষ্টা করা দরকার। ত্রিত্ত্ব না বুঝার কারণে আমরা যেমন নিজেরা সন্দেহের মধ্যে থাকি, আবার অন্যদেরকে বুঝাতেও পারি না। আর সে কারণে কোন কোন ধর্মের অনুসারীরা ত্রিত্ত্ব সম্পর্কে আমাদেরকে প্রশ্ন করে জর্জরিত করেন।
এই লেখার মধ্যে বাইবেলের পদ খুব কম ব্যবহারের চেষ্টা করবো, কেননা এ লেখাটি মূলতঃ নন- খ্রীষ্টানদের উদ্দেশ্য লেখা যারা এমনকি বাইবেলকেও বিশ্বাস করতে পারেন না। তবে এখানে যে যুক্তির অবতারণা করা হয়েছে, তা বাইবেলের পদের আলোকে উঠে আসা শিক্ষা। এখানে বাইবেল বিশ্বাসী ব্যক্তির অন্তঃদৃষ্টি তুলে ধরবো, কোন মানুষিক চিন্তা যুক্ত করা হবে না। এ লেখায় যার অন্তঃদৃষ্টি ব্যবহার করা হয়েছে, তিনি শুধুমাত্র যে গভীরভাবে ত্রিত্ত্বকে বিশ্বাস করেন, তা নয়; কিন্তু মনে করেন যে, ত্রিত্ত্বকে বিশ্বাস না করলে কেউ খ্রীষ্টান ত দূরের কথা, তিনি আস্তিকও হতে পারেন না, আস্তিক বলে দাবীও করতে পারে না। প্রথমে আস্তিক, তার পরে ত খ্রীষ্টান হওয়ার প্রশ্ন আসবে, তাই নয় কি?
খ্রীষ্টান ধর্মের মধ্যে ত্রিত্ত্ব মতবাদ ও বিশ্বাস এক অবহেলিত মতবাদ। আমরা এ ধর্মের আরও অনেক বিষয় নিয়ে কতই না তর্ক করি, এবং অন্যদের শিক্ষা দেই এবং বুঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ত্রিত্ত্বের বিষয়ে আমরা তত স্বরব নই। আমরা যেন হাল ছেড়ে দিয়েছি অথবা এড়িয়ে চলছি।
ত্রিত্ত্ব সম্পর্কে অনেকগুলো ভুল ধারণা আছে। এই ভুল ধারনা শুধু যে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে ভুল ধারনা আছে, তা নয়, আমাদের খ্রীষ্টানদের মাঝেও এ নিয়ে ভুল ধারনা যেমন যতেষ্ট আছে, তেমনি আবার পরস্পরের মাঝে মতবিরোধও আছে। আমি ত্রিত্ত্ব সম্পর্কে ভুল ধারনাগুলো নিয়ে আলোচনা করবো যাতে পাঠক ও শ্রোতা ধারনাগুলোর ভুল দিক বোঝতে পারেন এবং সঠিক ধারণা কি তা খোঁজার জন্য প্রস্তুত হন। ত্রিত্ত্ব কি বা কে নন, তা যদি কেউ বুঝতে পারেন, তাহলে তিনি কে, তা বুঝতে আর কষ্ট হবে না। এ সকল ভুল ধারনা ত আমাদের মাঝেও ত আছে। তাই সেই ভুল ধারনাগুলো নিয়ে আগে আলোচনা করে সেগুলো আমাদের মন থেকে দূর করা দরকার। কেউ বাইবেলের আলোকে ত্রিত্ত্বকে না দেখে নিজের জ্ঞান দিয়ে বুঝা ও বুঝানোর চেষ্টা করেন। তাই ত্রিত্ত্ব নিয়ে বাইবেলের আলোকে অধ্যায়ন ও গবেষণার নিরিখে লেখা দরকার। আমি মনে করি ত্রিত্ত্ব সম্পর্কে বাইবেলে কোন অসম্পূর্ণতা নেই, ত্রিত্ত্ব না বোঝার মত কোন বিষয়ও নয়। বরং পিতা, পুত্র ও পবিত্র সম্পর্কে আমাদের যতটুকু জানা দরকার, যতটুকু বিশ্বাস ও গ্রহণ করা দরকার তা পুরোপুরিভাবেই আছে। আমরা যখন স্বর্গে যাব তখন পিতা পুত্র ও পবিত্র আত্নাকে সামনা সামনি দেখব, কখন আমাদের আর কোন প্রশ্ন থাকবে না। কিন্তু ততক্ষণে বুঝা অনেক দেরি হয়ে যাবে। যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন,
" সকলই আমার পিতাকর্তৃক আমাকে সমর্পিত হইয়াছে; এবং পুত্র কে, তাহা কেহ জানে না, কেবল পিতা জানেন; আর পিতা কে, তাহা কেহ জানে না, কেবল পুত্র জানেন, আর পুত্র যাহার নিকটে তাঁহাকে প্রকাশ করিতে মানস করেন, সে জানে।"
লুক ১০:২২ পদ
ত্রিত্ত্ব সম্পর্কে খ্রীষ্টান ও নন খ্রীষ্টানদের মাঝে যে ভুল ধারণাগুলো দেখা যায়ঃ
১। এক ঈশ্বর তবে তাঁর তিন ব্যক্তিত্ব।
২। এক ঈশ্বর তবে তিনি ভিন্ন ভিন্ন যুগে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে কাজ করেছেন।
৩। এক ঈশ্বর তবে তার ভিন্ন ভিন্ন স্বভাব, গুন ও বৈশিষ্ট্য তিনি বিদ্যামান।
৪। ত্রিত্ত্ব ঈশ্বরের তিন পরিচয় রুপকভাবে বুঝানো হয়।
৫। ত্রিত্ত্বের মধ্যে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্না - কেউ বড় আর কেউ ছোট; কিংবা একজন আরেক জনের অধীন।
৬। ত্রিত্ত্ব এমনকি পরিপক্ক খ্রীষ্টানদের কাছেও সমস্যা, তারাও এর কোন স্পষ্ট ও সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেন না।
৭। কোন কোন ধর্মের অনুসারীগণ এমন অভিযোগ করেন যে, ত্রিত্ত্ব বিষয়ে বাইবেলে তেমন কোন শিক্ষা নেই। এটি খ্রীষ্টান পাদ্রী ও পুরোহিতদের সৃষ্টি করা এক মতবাদ।
৮। খ্রীষ্টানরা এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, তারা তিনজন ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন।
৯। খ্রীষ্টান ধর্মে তিত্ত্ব মতবাদ না থাকলে, এ ধর্ম আরও প্রসারণ লাভ করত, এবং গ্রহণযোগ্য হত।
১০। ঈশ্বর এক, তবে তিনি তিন রুপে প্রকাশিত।
১১। খ্রীষ্টানরা যেহেতু ত্রিত্ত্ব মতবাদকে ব্যাখ্যা করে বুঝাতে পারেন না, তাই তারাও উগ্রবাদী অন্ধত্বের মধ্যে আছেন।
ত্রিত্ত্ব সম্পর্কে এই এগারোটি ভুল ধারনা বাংলাদেশে কিছু মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। তাই আমি এই ভুল ধারণাগুলোর বাইবেল ভিত্তিক ব্যাখ্যা ও তার সমাধানে বাইবেল ভিত্তিক লিখতে চাই। ত্রিত্ত্ব ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও শান্তি সকলের উপর বর্শিত হোক।
Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.
0 coment rios: