সংবাদ শিরোনাম
লোডিং...
Menu

Wednesday, March 12, 2025

গাধার খাওয়া সম্পর্কে হাদিসের বৈপরীত্য

ভূমিকা: হাদিসের বৈপরীত্য এবং সত্যের অনুসন্ধান

সত্যের অনুসন্ধান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা মানুষের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।

মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী, তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে পার্থিব জীবনে এবং পরকালেও। আল্লাহর বাক্যসমূহে কোন পরিবর্তন হয়না; এটা হচ্ছে বিরাট সফলতা। মুজিবুর রহমান
১০ সূরাঃ ইউনুস | Yunus | سورة يونس - আয়াত নং -৬৪ -  মাক্কী এই দৃষ্টিকোণ থেকে, যদি কোনো ধর্মগ্রন্থ বা ঐতিহ্য পরস্পরবিরোধী বক্তব্য প্রদান করে, তবে তার ব্যাখ্যা খোঁজা প্রয়োজন।

ইসলামের হাদিস গ্রন্থগুলোর মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পারস্পরিক বৈপরীত্য দেখা যায়, যেমন গাধার মাংস সংক্রান্ত বিধান। সহিহ বুখারি ও মুসলিমের কিছু বর্ণনায় গৃহপালিত গাধার মাংস হারাম বলা হয়েছে, আবার অন্য একটি হাদিসে বন্য গাধার মাংস হালাল বলা হয়েছে। এই ধরনের পার্থক্য কীভাবে বোঝা উচিত?

মুসলিম দৃষ্টিকোণ থেকে, সুরা আন-নাহল (১৬:৮৯):

"আর আমরা তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যা প্রত্যেক বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা, পথনির্দেশ, রহমত এবং মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ।" তাই কোনো ধর্মীয় শিক্ষায় যদি দ্বৈততা বা অস্পষ্টতা দেখা দেয়, তবে সেটির সত্যতা যাচাই করা এবং গভীরভাবে অধ্যয়ন করা জরুরি। এই আলোচনায়, আমরা হাদিসের এই দ্বৈততার কারণ এবং এর অর্থ বোঝার চেষ্টা করব।

গাধার মাংস সংক্রান্ত হাদিসের বৈপরীত্য

ইসলামিক হাদিসে আমরা দুটি বিপরীতমুখী বক্তব্য দেখতে পাই:

গৃহপালিত গাধার মাংস হারাম: নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, "আমার কাছে জানানো হয়েছে যে গাধার মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।" (সহিহ মুসলিম ২২৭৫, সহিহ বুখারি ৫৫৫৩)।

বন্য গাধার মাংস হালাল: অন্য হাদিসে দেখা যায়, সাহাবিরা বন্য গাধার মাংস খেয়েছেন এবং নবী (সা.) সেটিকে বৈধ বলেছেন (সহিহ মুসলিম ১৯৪০)।

এই দুই হাদিস একই সময়ে বিদ্যমান, যা একটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে: একই প্রাণী কীভাবে একদিকে হারাম আবার অন্যদিকে হালাল হতে পারে?

খচ্চর ও গাধার মাংস সম্পর্কে হাদিস

তবে খচ্চর ও গাধার মাংস হারাম বলে নির্ধারিত হয়েছে:

১. আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত:

"রাসুলুল্লাহ (সা.) খচ্চরের মাংস খেতে নিষেধ করেছেন।"

(তিরমিজি, হাদিস: ১৭৯২)

২. আনাস (রা.) বলেন:

"খায়বার যুদ্ধের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) গাধার মাংস খেতে নিষেধ করেছেন।"

(বুখারি, হাদিস: ৫৫২৮; মুসলিম, হাদিস: ১৯৪০)

তবে ইসলামিক হাদিসে আমরা প্রায়ই দেখি, নবীর সময় কোনো কিছু নিষিদ্ধ বা অনুমোদিত হয়েছিল, পরে সেটি পরিবর্তন হয়েছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে দ্বৈততা থেকেই গেছে।

মুসলিম দৃষ্টিকোণ থেকে, আল্লাহর প্রকৃত বাক্য কখনো পরিবর্তনশীল বা পরস্পরবিরোধী হতে পারে না। কিন্তু ইসলামিক হাদিসের মধ্যে পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া যায়, যা চিন্তার বিষয়।

সহিহ হাদিসগুলোর মধ্যেই অনেকবার পরস্পরবিরোধিতা দেখা যায় (যেমন: গাধার মাংস, দুধ পান, সালাতের নিয়ম ইত্যাদি)।

এই কারণে, মুসলিম দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় যে, সত্যিকারের ঐশ্বরিক নির্দেশনা কখনোই এমন বিভ্রান্তিকর হতে পারে না। যদি কোনো ধর্মগ্রন্থ বা শিক্ষা নিজেই পরস্পরবিরোধী হয়, তবে সেটি আল্লাহ -প্রেরিত কিনা তা যাচাই করা প্রয়োজন।

মুসলিম যুক্তি অনুসারে, আল্লাহর বাণী নির্ভুল ও দ্ব্যর্থহীন হতে হবে। কিন্তু ইসলামিক হাদিসগুলোর মধ্যে পরস্পরবিরোধিতা পাওয়া যায়, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে: আল্লাহর প্রকৃত বাণী কি সত্যিই পরিবর্তনশীল বা অস্পষ্ট হতে পারে?

পরিশেষে,হাদিসে গাধার মাংস সংক্রান্ত বিধানের দ্বৈততা এটি স্পষ্ট করে যে, ইসলামিক গ্রন্থগুলোতে কিছু বিধান সময় ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু ইসলাম ধর্মে, আল্লাহর পরিকল্পনা  ধাপে ধাপে প্রকাশ পেলেও তা কখনো পরস্পরবিরোধী হয়।




শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: