عيسىٰ إِنّي مُتَوَفّيكَ وَرافِعُكَ إِلَيَّ وَمُطَهالَّذينَ كَفَروا وَجاعِلُ الَّذينَ اتَّبَعوكَ فَوقَ الَّذي كَفَروا إِلىٰ يَومِ القِيامَةِ ۖ ثُمَّ إِلَيَّ مَرجِعُكُم فَأَحكُمُ بَينَكُم فيما كُنتُم فيهِ تَختَلِفونَ
"স্মরণ করো!
আল্লাহ্ বললেন -- ''হে ঈসা, আমি নিশ্চয়ই তোমার মৃত্যু ঘটাব,
এবং আমি তোমাকে আমার দিকে উন্নীত করবো, আর তোমাকে পরিশোধিত করবো যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের থেকে, আর যারা তোমায় অনুসরণ করবে তাদের আমি স্থান দেবো যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের উপরে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত, এরপর আমারই কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন স্থান, আর আমি তোমাদের মধ্যে বিচার করবো যে-বিষয়ে তোমরা মতভেদ করছিলে সেই বিষয়ে।"
(কুরআন, ৩:৫৫, অনুবাদ: জহুরুল হক)
source - https://bit.ly/3o7lFc9
"Lo! God said:
"O Jesus! Verily, I shall cause thee to die,
and shall exalt thee unto Me, and cleanse thee of [the presence of] those who are bent on denying the truth; and I shall place those who follow thee [far] above those who are bent on denying the truth, unto the Day of Resurrection. In the end, unto Me you all must return, and I shall judge between you with regard to all on which you were wont to differ."
(Quran 3:55, translated by Muhammad Asad)
source - https://www.alim.org/quran/translation/asad/surah/3
এখানে, জহুরুল হক এবং মুহাম্মাদ আসাদের অনুবাদে আমরা দেখছি, তারা স্পষ্টই বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদে বলছেন যে, ঈসা অর্থাৎ মাসীহ এর মৃত্যু ঘটানো হয়েছিল!
এখানে উক্ত আয়াতে مُتَوَفّيكَ (মুতাওয়াফ্ফিকা) শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে "তোমার মৃত্যু ঘটাব" এবং ইংরেজিতে "cause thee to die".
কিন্তু মুসলিমরা এখানে এসে বলা শুরু করবে, 'না, না, এটা ভুল অনুবাদ! এখানে মৃত্যুর কোনো কথা বলা হয়নি'! আর তারপর ব্যাকরণের অযুহাত দেখিয়ে ইচ্ছামত অর্থ পাল্টে দেবে!
সেক্ষেত্রে চলুন দেখি, মুসলিমদের নিকট যিনি বিশিষ্ট সুবিজ্ঞ ফকিহ ও কুরআনের তাফসীরের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় মুফাস্সির - মুহাম্মাদের সেই সাহাবী 'আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস' مُتَوَفّيكَ (মুতাওয়াফ্ফিকা) শব্দের ব্যাখ্যায় কী বলেছেন?
তাফসীরে তাবারী গ্রন্থে উল্লিখিত কুরআন ৩:৫৫ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাসের বক্তব্যে আমরা পাই:
عن ابن عبـاس، قوله: { إِنّي مُتَوَفِّيكَ } يقول: إنـي مـميتك
(আন্ ইবনে আব্বাস, ক্বওলুহু: {ইন্নি মুতাওয়াফ্ফিকা} ইয়াক্বুলু: ইন্নি মুমিতুকা)
"ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: {ইন্নি মুতাওয়াফ্ফিকা} তিনি বলেছেন: আমি তোমার মৃত্যু ঘটাব।"
[তাফসীর আত-তাবারী/কুরআন ৩:৫৫ আয়াতের তাফসীর হতে গৃহীত]; source - https://bit.ly/2Zwhz3g
এখানে স্পষ্টই ইবনে আব্বাস مُتَوَفّيكَ (মুতাওয়াফ্ফিকা) শব্দের ব্যাখ্যায় বলেছেন إنـي مـميتك (ইন্নি মুমিতুকা), অর্থাৎ, "আমি তোমার মৃত্যু ঘটাব।"
ইবনে আব্বাসের এই ব্যাখ্যাটি সহীহ বুখারীর মধ্যেও আমরা পাই।
সহীহ বুখারী (তাওহীদ প্রকাশনী) এর ৪৬২৩ নং হাদিসের শুরুর দিকে উদ্ধৃত করা হয়েছে:
وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ مُتَوَفِّيْكَ مُمِيْتُكَ
"ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, مُتَوَفِّيْكَ আমি তোমার মৃত্যু ঘটাব। (সূরা আলে ইমরান ৩/৫৫)"
[উৎস - সহীহ বুখারী (তাওহীদ প্রকাশনী), অধ্যায়ঃ ৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর (كتاب التفسير), হাদিস নম্বরঃ ৪৬২৩]; source - http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=29113
এছাড়াও কুরআন ৩:৫৫ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে তাবারীর মধ্যে অন্য মুফাসসিরদের কথা বলতে গিয়ে مُتَوَفّيكَ (মুতাওয়াফ্ফিকা) শব্দের ব্যাখ্যায় "ওয়াফাত" (وفـاة) এবং "মওত" (موت) দুটি অর্থ করা হয়েছে:
وقال آخرون: معنى ذلك: إنـي متوفـيك وفـاة موت
(ওয়াক্বলা আখারুন: মা'আনা য্বালিকা: ইন্নি মুতাওয়াফ্ফিকা ওয়াফাতু মওত)
"অন্যরা বলেন: এর অর্থ: মুতাওয়াফ্ফিকা (متوفـيك) ওয়াফাত (وفـاة) মওত (موت)"
[তাফসীর আত-তাবারী/কুরআন ৩:৫৫ আয়াতের তাফসীর হতে গৃহীত]; source - https://bit.ly/2Zwhz3g
তাহলে কুরআন ৩:৫৫ আয়াতের مُتَوَفّيكَ (মুতাওয়াফ্ফিকা) শব্দের অর্থের ক্ষেত্রে "ওয়াফাত" (وفـاة) এবং "মওত" (موت) দুটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
আর এটা বলার কারণ হল, মুসলিমরা এই "ওয়াফাত" (وفـاة) শব্দটা নিয়ে ইচ্ছামত অর্থ বিকৃত করে পেশ করে বলে যে, এটা দিয়ে মৃত্যু বোঝাচ্ছে না!
কিন্তু "মওত" (موت) শব্দের বেলায় তারা কী বলবে?
আরবি "মওত" (موت) শব্দের অর্থ "মৃত্যু"; এখানে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে অর্থ বিকৃত করার কোনো চান্স নেই!
অর্থাৎ কুরআন ৩:৫৫ আয়াতের مُتَوَفّيكَ (মুতাওয়াফ্ফিকা) শব্দের মাধ্যমে মাসীহ এর মৃত্যুর স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে!
সুতরাং বলা যায় যে, মুসলিমরা যে দাবি করে, খ্রিস্ট এর ক্রুশে মৃত্যু ঘটেনি, তা সম্পূর্ণ তাদের মিথ্যাচার!
বরং কুরআনের বিভিন্ন আয়াত খ্রিস্টের ক্রুশীয় মৃত্যুকে ইঙ্গিত দিচ্ছে!
মুসলিমদের দাবি হল, খ্রিস্টকে ক্রুশে হত্যা করা হয়নি!
তারা এই দাবির প্রমাণস্বরূপ কুরআনের যে আয়াতটি পেশ করে, তা হল সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াত। কিন্তু সেখানে খ্রিস্ট যে মারা যান নি, এমন কিছু সরাসরি বলা হয়নি। আসুন দেখি সেই আয়াতে আসলে কী বলা হয়েছে?
"এবং ‘‘আল্লাহর রাসূল ও মারইয়াম নন্দন ঈসাকে আমরা হত্যা করেছি’’ বলার জন্য। অথচ তারা না তাকে হত্যা করেছে আর না শুলে চড়িয়েছে; বরং তারা ধাঁধাঁয় পতিত হয়েছিল। তারা তদ্বিষয়ে সন্দেহাচ্ছন্ন ছিল, কল্পনার অনুসরণ ব্যতীত এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান ছিলনা। প্রকৃত পক্ষে তারা তাকে হত্যা করেনি।"
(কুরআন ৪:১৫৭, অনুবাদ: মুজিবুর রহমান)
এই আয়াতে "আমরা হত্যা করেছি", "তারা না তাকে হত্যা করেছে" ইত্যাদি অংশে "আমরা", "তারা" বলতে ইহুদিদেরকে বোঝানো হয়েছে - যার সঙ্গে মুসলিম আলেমরাও একমত, যেমন, তাফসীরে আহসানুল বায়ানে বলা হয়েছে,
"এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইয়াহুদীরা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করতে বা শূলে চড়াতে (ক্রুসবিদ্ধ করতে) কোনটিতেই সফল হয়নি..."
(তাফসীর আহসানুল বায়ান/কুরআন ৪:১৫৭ আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)।
অর্থাৎ, উক্ত আয়াতে যখন বলা হয়েছে যে, "তারা না তাকে হত্যা করেছে আর না শুলে চড়িয়েছে", তখন এটা স্পষ্ট যে, ইহুদিরা না খ্রিস্টকে হত্যা করেছে, না তাকে ক্রুশে চড়িয়েছে; আর এটি ঐতিহাসিকভাবেও সত্য। কারণ ইহুদিদের এমন কোনো ক্ষমতা সে সময় ছিল না, যেহেতু সে সময় শাসক ছিল রোমীয় এবং তাই রোমীয় শাসকের দ্বারা রোমীয় সৈন্যরা খ্রিস্টকে ক্রুশে চড়িয়ে হত্যা করেছে!
তাই যখন ইহুদিরা বলছে, "মারইয়াম নন্দন ঈসাকে আমরা হত্যা করেছি" (কুরআন ৪:১৫৭), তখন "তারা ধাঁধাঁয় পতিত হয়েছিল" (কুরআন ৪:১৫৭); কেননা ইহুদিরা যে খ্রিস্টকে হত্যা করেছে বলে অনুভব করছে, এটা ইহুদিদের বিভ্রান্তি, কারণ ইহুদিরা নয়, রোমীয়দের দ্বারা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা খ্রিস্টের মনুষ্য শরীরকে ক্রুশে চড়িয়েছেন, কারণ কারও প্রাণ নেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র সৃষ্টিকর্তার, যেমনটা বদরের যুদ্ধের ঘটনার ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, "তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন..." (কুরআন ৮:১৭)
অর্থাৎ, যে আয়াতে (কুরআন ৪:১৫৭) বলা হয়েছে যে, 'তারা তাকে ক্রুশে হত্যা করেনি', সেখানে "তারা" বলতে ইহুদিদেরকে বোঝানো হয়েছে। আর ইহুদিরা খ্রিস্টকে ক্রুশে হত্যা করেনি, রোমীয় শাসক ও রোমীয় সৈন্যরা তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করেছিল বিধায় সেটি ছিল ইহুদিদের দাবির বিভ্রান্তি! ক্রুশবিদ্ধের ঘটনার বিভ্রান্তি নয়!
আর তিনিই খ্রিস্ট যিনি ক্রুশে মৃত্যুর তিনদিন পর (ইহুদি গণনা অনুসারে) মৃত থেকে জীবিত হয়েছেন এবং পুনরায় আমাদের সকলের বিচারের জন্য ভবিষ্যতে আগমন করবেন! একারণে কিতাবুল মোকাদ্দস আমাদের জানাচ্ছে,
"ঈসা যখন উপরে উঠে যাচ্ছিলেন তখন সাহাবীরা একদৃষ্টে আসমানের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এমন সময় সাদা কাপড় পরা দু’জন লোক সাহাবীদের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, “গালীলের লোকেরা, এখানে দাঁড়িয়ে আসমানের দিকে তাকিয়ে রয়েছ কেন?
যাঁকে তোমাদের কাছ থেকে তুলে নেওয়া হল সেই ঈসাকে যেভাবে তোমরা বেহেশতে যেতে দেখলে সেইভাবেই তিনি ফিরে আসবেন।”"
(কিতাবুল মোকাদ্দস, প্রেরিত ১:১০-১১)
⚠️ ইবনে কাসীরের তাফসীরে খ্রিস্টের মৃত্যুর সাক্ষ্য!
কুরআন এর সূরা আল-ইমরানের ৫৫ নং আয়াত (৩:৫৫) এর ব্যাখায় ইবনে কাসীরের তাফসীরের এক স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে:
وقال إسحاق بن بشر عن إدريس ، عن وهب : أماته الله ثلاثة أيام ، ثم بعثه ، ثم رفعه
(ওয়া ক্বলা ইসহাক্ব বিন বাশার আন ইদ্রীস, আন ওয়াহাব: আমাতাহু আল্লাহ ছালাছাত আইয়াম, ছুম্মা বা'আছাহু, ছুম্মা রফা'আহু)
অনুবাদ:
"আর ইসহাক বিন বাশার, ইদ্রিসের সূত্রে, (ইদ্রিস) ওয়াহবের সূত্রে বলেছেন: আল্লাহ তাঁর তিন দিনের জন্য মৃত্যু ঘটিয়েছিলেন, তারপর তাঁকে পুনরুত্থিত করেছেন, তারপর তাঁকে তুলে নিয়েছেন।"
(তথ্যসূত্র: তাফসীর ইবনে কাসীর (মূল আরবি ইবারত থেকে সংগৃহীত)/কুরআন ৩:৫৫ আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
মূল আরবি ইবারতের উৎস - https://bit.ly/3kXUVsr
বিকল্প উৎস - https://bit.ly/3HONw8p
এ্যাপস থেকে পড়ুন - https://play.google.com/store/apps/details?id=com.greentech.quran
উক্ত আরবি ইবারতে أماته (আমাতাহ্) শব্দ রয়েছে যার অর্থ "মৃত্যু ঘটানো", ইংরেজিতে "putting to death"; source - https://bit.ly/3nJCVnm
অথবা, "to cause to die"; source - https://bit.ly/3l2Jr6Q
আর মৃত্যুর পর খ্রিস্টকে পুনরায় জীবিত করা হয়, অর্থাৎ, মৃত অবস্থা হতে পুনরুত্থিত করা হয় (بعثه) এবং তারপর তাঁকে তুলে নেওয়া হয় (رفعه)।
অর্থাৎ ইবনে কাসীরের তাফসীরের মধ্যেও খ্রিস্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থানের সমর্থনকারী একটি সাক্ষ্য বিদ্যমান।___________________________________
বিঃদ্রঃ মুসলিমদের মধ্যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারীরা ইবনে আব্বাসের কথাকে কেন্দ্র করে কাদিয়ানিদের জবাব দিয়েছে - যে কাদিয়ানিরা কখনও দাবি করে না যে, মাসীহকে জীবিত অবস্থায় তুলে নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু আমরা খ্রিস্ট বিশ্বাসীরা দাবি করি যে, মাসীহকে জীবিত অবস্থায় তুলে নেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি হল, প্রথমে মাসীহ এর মৃত্যু হয়েছে, তারপর তিনি মৃত থেকে জীবিত হয়েছেন এবং তারপর তাঁকে জীবিত অবস্থায় তুলে নেওয়া হয়েছে।
তাই মাসীহ এর মৃত্যু যদি প্রমাণিত হয়, তবে এর অর্থ এটা হবে না যে, মাসীহকে জীবিত অবস্থায় তুলে নেওয়া হয়নি।
এখানে তাই কুরআন ৩:৫৫ আয়াতের مُتَوَفِّيكَ (মুতাওয়াফ্ফিকা) শব্দের অর্থ কী সেটাই মূল বিবেচ্য বিষয়। আর সেটার অর্থ হল مميتك (মুমিতুকা), যেটা ইবনে আব্বাস স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন।
অর্থাৎ কুরআন ৩:৫৫ আয়াতের مُتَوَفِّيكَ (মুতাওয়াফ্ফিকা) শব্দের অর্থ "মৃত্যু ঘটানো"-কে নির্দেশ করছে - এতে কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু মুসলিমদের আপত্তি হল, এই মৃত্যুটা পরে ঘটানো হবে কিয়ামতের আগে আগে। ইবনে আব্বাস বলার চেষ্টা করেছেন:
يعنى رافعك ثم متوفيك فى آخر الزمان
source - https://bit.ly/3AN6us8
অর্থাৎ, প্রথমে মসীহকে তুলে নেওয়া হবে (رافعك), তারপর (ثم) শেষ জামানায় (فى آخر الزمان) মৃত্যু ঘটানো (متوفيك) হবে।
তাহলে কুরআন ৩:৫৫ আয়াতের مُتَوَفِّيكَ (মুতাওয়াফ্ফিকা) শব্দের অর্থ "মৃত্যু" এটা স্পষ্ট।
এখন, আমাদের এতটুকু দেখানোই উদ্দেশ্য। ইবনে আব্বাসের আকিদা গ্রহণ করা আমাদের উদ্দেশ্য না। কারণ কাদিয়ানিরা ইবনে আব্বাসের আকিদা মানতে বাধ্য। কিন্তু আমরা যেহেতু খ্রিস্ট বিশ্বাসী, তাই ইবনে আব্বাসের আকিদা মানতে আমরা বাধ্য নই।
আর ইবনে আব্বাসের আকিদা হল, এই মৃত্যুটা পরে হবে। অর্থাৎ এটা পরিষ্কার যে, কুরআন ৩:৫৫ আয়াতের مُتَوَفِّيكَ (মুতাওয়াফ্ফিকা) শব্দ দিয়ে মৃত্যুই অর্থ হবে, অন্য কিছু হবে না।
এখানেই আমাদের দাবি হল, এই মৃত্যুটা পরে না, আগেই হয়ে গেছে যা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত।
একারণে কুরআন ১৯:৩৩ আয়াতের বক্তব্যে ঈসা মাসীহ নিজেই বলছেন,
وَٱلسَّلَٰمُ عَلَىَّ يَوْمَ وُلِدتُّ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا
''আর শান্তি আমার উপরে যেদিন আমার জন্ম হয়েছিল, আর যেদিন আমি মারা যাব আর যেদিন আমাকে পুনরুত্থিত করা হবে জীবিত অবস্থায়।"
(কুরআন ১৯:৩৩, অনুবাদ: জহুরুল হক)
এখানে স্পষ্ট এই ক্রম আমরা দেখতে পাইঃ
১) খ্রিস্টের পৃথিবীতে জন্ম (যেদিন আমার জন্ম হয়েছিল)
২) খ্রিস্টের পৃথিবীতে মৃত্যু (আর যেদিন আমি মারা যাব)
৩) খ্রিস্টের পুনরুত্থান এর মাধ্যমে মৃত থেকে জীবিত হয়ে ওঠা (আর যেদিন আমাকে পুনরুত্থিত করা হবে জীবিত অবস্থায়)
আর তারপর খ্রিস্টকে পুনরুত্থানের পর আসমানে তুলে নেওয়া হল।
একই সুরার ১৫ নং আয়াতে ইয়াহিয়া(বাপ্তিস্মদাতা যোহন) সম্পর্কেও একই ভাবে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি মারা গিয়েছেন। সুতরাং ১৯ঃ৩৩ এ যে খ্রীষ্টের পুনরুত্থানের আগে মৃত্যুবরণের কথা বলা হয়েছে বিষয়টি একেবারেই পরিস্কার। আয়াতটি দেখি-
Al-Quran 19:15
وَسَلَٰمٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَمُوتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا
English - Sahih International
And peace be upon him the day he was born and the day he dies and the day he is raised alive.
Bengali - Bayaan Foundation
আর তার উপর শান্তি, যেদিন সে জন্মেছে এবং যেদিন সে মারা যাবে আর যেদিন তাকে জীবিত অবস্থায় উঠানো হবে।
কুরআনের আয়াতেও আগে মৃত্যুর কথা, তারপর উপরে তোলার কথা এসেছে; কুরআন ৩:৫৫ আয়াত বলছে,
إِنِّى مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ
'প্রথমে আমি মৃত্যু ঘটাব (إِنِّى مُتَوَفِّيكَ) এবং (وَ) তারপর উপরে তুলে নেব (رَافِعُكَ)'
তাই ইবনে আব্বাস এসে কুরআনের আয়াতের মৃত্যু আর উপরে তুলে নেওয়ার ক্রম পালটে দিলেই কিছু প্রমাণিত হয়ে যায় না! এটা ইবনে আব্বাসের কেবল ধারণা মাত্র!
খ্রিস্টের যে ক্রুশে মৃত্যু ঘটেছে আর তিনি যে (ইহুদি গণনা অনুসারে) তিন দিন পর জীবিত হয়েছেন, এটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত।
আর তারপর খ্রিস্টকে জীবিত অবস্থায় তুলে নেওয়া হয়েছে।
যদি এই দাবিকে খণ্ডন করতে হয়, তবে মুসলিমদের দাবি অনুযায়ী - খ্রিস্টের পরিবর্তে ক্রুশে যে অন্য এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছিল - এর প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক প্রমাণ পেশ করতে হবে।
খ্যাতনামা সুন্নী ইসলামি স্কলার ইমরান নজর হোসেইন কুরআনের এই সত্যকে উপলব্ধি করে মুসলিম সমাজ যে এতদিন ভ্রান্তিতে আছে তা ব্যক্ত করেছেন-________________________________________
➡️ কুরআন ৫:১১৭ আয়াত কি খ্রিস্টের মৃত্যুকে অস্বীকার করছে?
Al-Ma'idah ৫:১১৭
مَا قُلْتُ لَهُمْ إِلَّا مَآ أَمَرْتَنِى بِهِۦٓ أَنِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ رَبِّى وَرَبَّكُمْۚ وَكُنتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَّا دُمْتُ فِيهِمْۖ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِى كُنتَ أَنتَ ٱلرَّقِيبَ عَلَيْهِمْۚ وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ شَهِيدٌ
Bengali - Mujibur Rahman
আমি তাদেরকে উহা ব্যতীত কিছুই বলিনি যা আপনি আমাকে আদেশ করেছেন যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, যিনি আমার রাব্ব এবং তোমাদেরও রাব্ব। আমি যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন তাদের সম্পর্কে অবগত ছিলাম, অতঃপর আপনি যখন আমাকে তুলে নিলেন তখন আপনিই ছিলেন তাদের রক্ষক, বস্তুতঃ আপনিই সর্ব বিষয়ে পূর্ণ খবর রাখেন।
English - Sahih International
I said not to them except what You commanded me - to worship Allāh, my Lord and your Lord. And I was a witness over them as long as I was among them; but when You took me up, You were the Observer over them, and You are, over all things, Witness.
৫:১১২ থেকে ৫:১১৬ পর্যন্ত পড়লে ইসা যখন হাওয়ারীদের(সাহাবীদের) সাথে ছিলেন তখনকার প্রেক্ষাপটে এই কথাগুলো বলা হচ্ছে। অনেক মুসলিম এই কথাগুলোকে ইসার ভবিষ্যৎ আগমনের পরের ঘটনা বলে গোজামিল দিতে চায়, এজন্যই এই স্পষ্টীকরণ।
কুরআন ৫:১১৭ আয়াতে تَوَفَّيْتَنِى (তাওয়াফ্ফাইতানি) শব্দের "আপনি আমাকে উঠিয়ে নিলেন" অনুবাদ করা হয়েছে। কিন্তু এই অনুবাদ কতটুকু সঠিক?
উল্লেখ্য যে, যদি তর্কের খাতিরে এখানে 'উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে' বলাও হয়, তবুও এটি খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের বিরোধী নয়। কারণ খ্রিস্টকে যে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল, এটি খ্রিস্টীয় মতবাদের স্পষ্ট দাবি। কিন্তু উঠিয়ে নেওয়ার পূর্বে কী ঘটেছিল, সেটিই মূলত বিবেচ্য বিষয়। আর সেটি হল এই যে, খ্রিস্ট মৃত থেকে পুনরায় জীবিত হয়েছিলেন।
এখানে উক্ত কুরআন ৫:১১৭ আয়াতে تَوَفَّيْتَنِى (তাওয়াফ্ফাইতানি) শব্দটি মূল শব্দ تَوَفَّى (তাওয়াফ্ফা) থেকে এসেছে আর কুরআন ২:২৩৪; ২:২৪০; ৩:১৯৩; ৪:৯৭; ৬:৬১; ৭:৩৭; ৭:১২৬; ৮:৫০; ১০:৪৬; ১০:১০৪; ১২:১০১; ১৩:৪০ এবং এরকম অসংখ্য আয়াতে এই تَوَفَّى (তাওয়াফ্ফা) শব্দকে "মৃত্যুবরণ করা" অর্থে অনুবাদ করা হয়েছে।
সেক্ষেত্রে تَوَفَّيْتَنِى (তাওয়াফ্ফাইতানি) এর আক্ষরিক অর্থ "মৃত্যু ঘটানো" নেওয়া হলে এই অর্থ পুরোপুরি যথার্থ। এক্ষেত্রে এর তাৎপর্য হল এই যে, খ্রিস্টকে জীবিত অবস্থায় তুলে নেওয়ার পূর্বে খ্রিস্টের মৃত্যু ঘটেছিল যাতে করে তিনি পুনরুত্থিত হয়ে পুনরায় জীবিত হতে পারেন।
এক্ষেত্রে কুরআন ৩:৫৫ আয়াত বলছে,
إِنِّى مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ
'প্রথমে আমি মৃত্যু ঘটাব (إِنِّى مُتَوَفِّيكَ) এবং (وَ) তারপর উপরে তুলে নেব (رَافِعُكَ)'
তাই 'উঠিয়ে নেব' বললেই খ্রিস্টের মৃত্যুর কথা চাপা দিয়ে দেওয়া যায় না!
আরও উল্লেখ্য যে, কুরআন ৫:১১৭ আয়াতে যে تَوَفَّيْتَنِى (তাওয়াফ্ফাইতানি) শব্দটি আছে, তাকে আরও ক্ষুদ্র ভাগে ভাগ করলে আমরা وفي পাই - যেটি কুরআন ৩:৫৫ আয়াতের مُتَوَفّيكَ (মুতাওয়াফ্ফিকা) শব্দের মূলেও রয়েছে। আর কুরআন ৩:৫৫ আয়াতের مُتَوَفّيكَ (মুতাওয়াফ্ফিকা) শব্দের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস বলেছেন إنـي مـميتك (ইন্নি মুমিতুকা), অর্থাৎ, "আমি তোমার মৃত্যু ঘটাব।" - source - https://bit.ly/2Zwhz3g
তাই মূল وفي থেকে যে تَوَفَّيْتَنِى (তাওয়াফ্ফাইতানি) কুরআন ৫:১১৭ আয়াতে এসেছে, তার অর্থ 'মৃত্যু ঘটানো' নেওয়া হলে তা পুরোপুরি সঠিক অর্থ হিসেবে বিবেচ্য হবে। এতে খ্রিস্টের মৃত্যু, পুনরুত্থান, সশরীরে জীবিত অবস্থায় উত্থিত হওয়া - প্রত্যেকটির অর্থ সঠিক অবস্থাতেই বিরাজ করবে।
এক্ষেত্রে এরপরও যদি কুরআন ৫:১১৭ আয়াতে "মৃত্যু ঘটানো" অর্থকে অস্বীকার করে "উঠিয়ে নেওয়া" বা "তুলে নেওয়া" অর্থ গ্রহণ করা হয়, তবে সত্য অস্বীকারদের জন্য আমরা এখানে একটি সহীহ হাদিস পেশ করছি যেখানে মুহাম্মাদ নিজের ক্ষেত্রেই تَوَفَّيْتَنِى (তাওয়াফ্ফাইতানি) শব্দ ব্যবহার করে একে মৃত্যু বুঝিয়েছেন।
⏩জামে' আত-তিরমিজি ৩১৬৭ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়াজ-নসীহত করতে দাঁড়িয়ে বললেনঃ "হে লোকেরা! কিয়ামাতের দিন তোমারা নগ্ন ও খতনাহীন অবস্থায় আল্লাহ্র নিকট সমবেত হবে। (বর্ণনাকারী বলেন,) তারপর তিনি পড়লেনঃ "যেভাবে প্রথম আমরা সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবেই তার পুনরাবৃত্তি করবো। এটা একটা ওয়াদাহ। যা পূরণ করার দায়িত্ব আমার। আর এ কাজ আমি অবশ্যই করবো"- (সূরা আম্বিয়া ১০৪)। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন "কিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পরানো হবে তিনি হচ্ছেন ইব্রাহীম (আঃ)। আমার উম্মতের কিছু সংখ্যক ব্যাক্তিকে নিয়ে আসা হবে এবং তাদের কে ধরে বাঁ দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি তখন বলবোঃ হে আমার সৃষ্টিকর্তা! এরা আমার অনুসারি। তখন বলা হবে, আপনি জানেন না, এরা আপনার বিদায়ের পর কি ধরনের বিদ'আত এর উদ্ভব ঘটিয়েছিল। আমি সে সময় একজন সৎকর্মশীল বান্দার [(ঈসা (আঃ)] মত বলবো (কুরআনের ভাষায়) "আমি যতক্ষন পর্যন্ত তাদের মধ্যে ছিলাম, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের পরিচালক ছিলাম। কিন্তু আপনি যখন আমাকে তুলে নিলেন, তখন আপনিই ছিলেন তাদের তত্ত্বাবধায়ক। আর আপনি তো সকল বিষয়ের সাক্ষী। আপনি যদি তাদের আযাব দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা, আর যদি ক্ষমা করে দেন তাহলে আপনি তো পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময় "-(সূরা আল-মায়িদাহ ১১৭-১১৮)। তখন বলা হবে, আপনি যখন তাদের কে রেখে এসেছেন তখন হতে এরা অনবরত মন্দ পথেই চলেছে।
এখানে হযরত মুহাম্মদ কুরআনের ঈসা মসীহের সাথে নিজের তুলনা দিয়েছেন তার মানে তিনি মরেন নি যেহেতু দুজনে কুরআনের একই দলিল ব্যবহার করেছেন(সূরা৫:১১৭-১১৮) আর এই দলিল দিয়ে মুসলিমরা প্রমান করার চেষ্টা করে ঈসা মসীহ মরেননি তবে সেই একি আয়াত হযরত মুহাম্মদের বেলায় প্রয়োগ করলে মুসলিমদের বলতে হবে হযরত মুহাম্মদও মরেন নি। (সমালোচকের যুক্তির দাড়িপাল্লার ব্যবহার)
প্রকৃত ব্যাখ্যাঃ এখানে হযরত মুহাম্মদ প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সাথে তার মৃত্যুর বিষয়ে সাদৃশ্য করেছেন এবং কুরআন হতে সুরা ৫মায়িদা:১১৭-১১৮; উল্লেখ করে বুঝিয়েছেন যে এই আয়াতে তুলে নেওয়ার অর্থ হচ্ছে “মৃত্যু ঘটানো।” এটাকে বলে সাদৃশ্য । আমরা আগেই বলেছি ৫:১১৭ আয়াতের প্রেক্ষাপট ইসার সাথে হাওয়ারীদের সময়কার যা ৫:১১২- ৫:১১৭ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং কোন মুসলিম যদি ইসার এই কথাগুলোকে ইসার দ্বিতীয় আগমণের সময়ের ঘটনার প্রেক্ষিতে বলা বলে চালিয়ে দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে চান তাদের জন্যই বলছি এটা স্পষ্টত ইসার প্রথম আগমণের সংক্রান্ত। প্রমাণহীন রেফারেন্স ছাড়া, ঘটনার সূত্র ছাড়া কোন বক্তব্যের কোন ভিত্তি নাই।
source:http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=3462
উক্ত আয়াতে স্পষ্ট মুহাম্মাদ নিজের বেলাতে বলছেন, "আপনি যখন আমাকে উঠিয়ে নিলেন" - যেখানে "উঠিয়ে নিলেন" এর ক্ষেত্রে সেই একই কুরআন ৫:১১৭ আয়াতের تَوَفَّيْتَنِى (তাওয়াফ্ফাইতানি) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।
সেক্ষেত্রে মুহাম্মাদ এর ক্ষেত্রে "উঠিয়ে নিলেন" এর অর্থ স্পষ্টই "মৃত্যু ঘটানো"; কারণ মুহাম্মাদকে জীবিত অবস্থায় তুলে নেওয়া হয়নি, বরং তার মৃত্যু ঘটেছিল। আর তাই تَوَفَّيْتَنِى (তাওয়াফ্ফাইতানি) শব্দের সরাসরি অর্থ হবে "মৃত্যু ঘটানো" যা মুহাম্মাদের নিজের উক্তি দ্বারাই প্রমাণিত। মুসলিমরা অবশ্যই দাবী করবেন না যে তারা কুরআন হযরত মুহাম্মদ থেকে বেশী বুঝেন, সেক্ষেত্রে এ ব্যাপারে মুসলিমদের কোন যুক্তিরই কোন ভিত্তি থাকে না।
_______________________________________________
MyBeloved Yashu
0 coment rios: