বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়াতে, টিভি চ্যানেলে বিভিন্ন হিন্দুরা দাবি করে যে তাদের ভগবদ্গীতা নামক গ্রন্থটি নাকি সমগ্র মানবজাতির জন্য মানবতার গ্রন্থ, তাই সবারই নাকি এটি পড়া উচিৎ।
বর্তমানে বেশিরভাগ হিন্দুর বিশ্বাস হলো তাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হলো গীতা। মোটামুটি এমন কোনো হিন্দু বাড়ি পাওয়া যাবে না যে তাদের বাড়িতে গীতা নেই। আমরা যখন বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দেই তখন বেশ কিছু হিন্দু দাবি করে সেসব তাদের ধর্মগ্রন্থ নয়, তাদের ধর্মগ্রন্থ গীতা, গীতা সমগ্র মানবজাতির জন্য। তাদের ধর্মগ্রন্থ কি না সেটা নিয়ে আজকে কোনোকিছু বলবো না। শুধু দেখি গীতা কি সবার জন্য?
গীতা নিজেই এই দাবি খণ্ডন করে,[1]
গীতা কি সর্বজনীন মানবতার গ্রন্থ?
ইদন্তে নাতপস্কায় নাভক্তায় কদাচন।
ন চাশুশ্রূষবে বাচ্যং ন চ মাং যোহভ্যসূয়তি।।
কৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেঃ এই গীতাশাস্ত্র তপস্যাহীন ব্যক্তিকে বলবে না, ভক্তিরহিত ব্যক্তিকে কখনো বলবে না, যে শ্রবণেচ্ছু নয় তাকে বলবে না, ও আমাকে নিন্দা করে যারা– এই দোষ আমাতে, ঐ দোষ আমাতে এই প্রকার মিথ্যা সমালোচনা করে যারা, তাদেরও বলবে না।[2]
আমরা এখান থেকে পাচ্ছি গীতা যাদের জন্য নয়ঃ
যারা তপস্যা করে নাঃ যেহেতু নন-হিন্দুরা তপস্যা করে না তাহলে গীতা তাদের জন্য না।
যাদের ভক্তি নেইঃ যারা হিন্দু না তাদের কেন কৃষ্ণভক্তি থাকবে?
যারা শোনার ইচ্ছা নেইঃ এটা যার যার চয়েস, আমার তো শোনার ইচ্ছা নেই যেখানে কৃষ্ণ মহাপুরুষ মতান্তরে ঈশ্বর হয়ে ফ্যামিলির মধ্যে অন্যায় যুদ্ধ লাগায় স্বর্গের লোভ দেখিয়ে।
যারা কৃষ্ণের নিন্দা ও সমালোচনা করেঃ আমরা তো বহুত সমালোচনা করি অবশ্যই কৃষ্ণ নামক এই চরিত্রটির নামে, যেই চরিত্রটি ছোটবেলায় (হিন্দুদের মতে ৯-১০ বছর বয়সে) গোসলরত মেয়েদের পোশাক ছিনতাই করে, রুক্মিণী নামক এক মেয়েকে কিডন্যাপ করে বিয়ে করে, খোলা পাহাড়ে রাধা নামক চরিত্রের সাথে সেক্স করে বেড়ায় যে কিনা নিজের মামী ছিলো, আর সাথে গোপীদের সাথে মাস্তি তো আছেই। এসবকিছুই হিন্দুধর্মগ্রন্থে লেখা আছে, আর তার সমালোচনা করার কারণে গীতা আমাদের জন্য নয়।
এই লিস্টের কাউকে যদি গীতা শেখানো হয় কিংবা গীতার বাণী শোনানো হয় সেটা অনেক পাপের কাজঃ[3]
গীতা কি সর্বজনীন মানবতার গ্রন্থ?
গীতার সকল অনুবাদক ও ভাষ্যকার এই কথাগুলোর সাথে একমত যে উপরে যেকোনো একটি জিনিস পাওয়া গেলেই তাকে আর গীতার বাণী শোনানো যাবে না। উদাহরণস্বরূপঃ
শাঙ্করভাষ্য।[4]
রামানুজ ভাষ্য।[5]
শ্রীধর স্বামী ভাষ্য।[7]
ভক্তিবিনোদ ঠাকুর ভাষ্য, বলদেব বিদ্যাভূষণ ভাষ্য[8] ইত্যাদি।
ইন্ডিয়ান মুভি দেখে ধর্ম না শিখে বরং আপনাদের খুঁজতে হবে কোন কিতাব আল্লাহ্ তা’আলা সকল মানুষের জন্যই দিয়েছেন, বুদ্ধিমানরাই সেখান থেকে উপদেশ গ্রহণ করবে।
Reference ↑
⇧2 যথার্থ গীতা (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা), ১৮/৬৭, অনুবাদঃ স্বামী অড়গড়ানন্দ, পৃষ্ঠা ৩৪১
⇧3 শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, ভক্তিবিবেক ভারতী গোস্বামিনা সম্পাদিত, সংস্করণ-২, পৃ ৮৯৫
⇧4 Bhagavad-Gita with the Commentary of Sri Shankaracharya, translated to English by Alladi Mahadeva Sastri, page 517 https://archive.org/details/Bhagavad-Gita.with.the.Commentary.of.Sri.Shankaracharya/page/516/mode/2up
⇧5 GITABHASYA OF RAMANUJA English Translated By M R Sampatkumaran, page 476 https://archive.org/details/gitabhasya-of-ramanuja-english-translated-by-m-r-sampatkumaran-1985/page/476/mode/1up
⇧6 Bhagavad Gita With Gudharth Deepika By Madhusudan Sarasvati Translated By Swami Gambhiranand Advait Ashram, page 992 https://archive.org/details/tDyP_bhagavad-gita-with-gudharth-deepika-by-madhusudan-sarasvati-translated-by-swami-/page/992/mode/1up
⇧7 ভগবদ্গীতা বাঙ্গালা, অনুবাদঃ গৌরিশঙ্কর তর্কবাগীশ ভট্টাচার্য, পৃ ১৮৯
⇧8 শ্রীশ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, শ্রীসারস্বত গৌড়ীয় সনমিশন প্রকাশিত, পৃ ১৩৭৭
#গীতা
0 coment rios: