যখন যীশু খ্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন, তখন তিনি সাতটি গুরুত্বপূর্ণ কথা উচ্চারণ করেন। এই সাত বাণী শুধু মৃত্যুপথযাত্রার অংশ নয়, বরং প্রতিটি বাক্যে রয়েছে গভীর আধ্যাত্মিক বার্তা, যেগুলো খ্রিস্টীয় জীবনচর্চার মূল ভিত্তিগুলোর অন্যতম। এই লেখায় আমরা সংক্ষেপে এই বাণীগুলো পর্যালোচনা করব এবং কীভাবে এগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে, তা জানার চেষ্টা করব।
১. “পিতা, তুমি ওদের ক্ষমা করো, কারণ এরা জানে না, এরা কী করছে।” (লূক ২৩:৩৪)
শিক্ষা: ক্ষমা খ্রিস্টীয় জীবনের মূলস্তম্ভ। যীশু তাঁর শত্রুদের জন্যও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন, এটি আমাদের শেখায়—আমাদেরও অপরাধীদের ক্ষমা করতে হবে, যদিও তা কঠিন।
২. “আজই তুমি আমার সাথে স্বর্গে থাকবে।” (লূক ২৩:৪৩)
শিক্ষা: খ্রিস্টের কাছে আসলেই ত্রাণ পাওয়া যায়—শেষ মুহূর্তেও। এই বাক্যটি আমাদের আশা দেয়, যে কেউ খাঁটি মন নিয়ে অনুতাপ করলে, তার জন্যও মুক্তি আছে।
৩. “নারী, দেখো, এই তোমার পুত্র... এই তোমার জননী।” (যোহন ১৯:২৬-২৭)
শিক্ষা: যীশু পরিবার ও সম্পর্কের গুরুত্ব শিখিয়েছেন। খ্রিস্টীয় সমাজে একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীলতা ও মমত্ববোধ অপরিহার্য।
৪. “আমার ঈশ্বর, আমার ঈশ্বর, তুমি আমাকে কেন পরিত্যাগ করলে?” (মার্ক ১৫:৩৪)
শিক্ষা: যন্ত্রণার সময় ঈশ্বর নীরব মনে হলেও, তিনি ত্যাগ করেন না। এই বাক্যটি আমাদের কষ্টের সময়েও ঈশ্বরে আস্থা রাখতে শেখায়।
৫. “আমি পিপাসিত।” (যোহন ১৯:২৮)
শিক্ষা: যীশু সম্পূর্ণ মানবীয় যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। তিনি আমাদের দুঃখ ও চাহিদা বুঝতে পারেন। এটি আমাদের সাহস দেয়, কারণ তিনি আমাদের কষ্ট ভাগ করে নিয়েছেন।
৬. “শেষ হয়েছে।” (যোহন ১৯:৩০)
শিক্ষা: মুক্তির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। যীশুর আত্মবলি আমাদের পাপের মুক্তি এনে দিয়েছে। এটি বিশ্বাসের ভিত্তি।
৭. “পিতা, আমি আমার আত্মা তোমার হাতে সমর্পণ করছি।” (লূক ২৩:৪৬)
শিক্ষা: আত্মসমর্পণ ও আস্থা। যীশুর মতো আমরাও আমাদের জীবন ও আত্মা ঈশ্বরের হাতে সমর্পণ করতে পারি—পূর্ণ আস্থার সঙ্গে।
উপসংহারঃ-যীশুর এই সাতটি বাণী খ্রিস্টীয় জীবনের গভীর শিক্ষা বহন করে। প্রতিটি বাক্য আমাদের জীবনে প্রেম, ক্ষমা, আত্মসমর্পণ, সহনশীলতা ও আশার বার্তা নিয়ে আসে। এই পবিত্র বাণীগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা এবং তা জীবনে প্রয়োগ করাই প্রকৃত খ্রিস্টীয় অনুশীলনের অংশ।
0 coment rios: