সংবাদ শিরোনাম
লোডিং...
Menu

Friday, May 16, 2025

ধর্ম না সম্পর্ক: ঈশ্বরের সঙ্গে জীবন্ত সম্পর্ক কেমন হয়?

ধর্ম — এই শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে আসে কিছু নিয়ম, রীতিনীতি, আচার, উপাসনা-পদ্ধতির কথা। কিন্তু যীশু খ্রিস্ট যখন এই পৃথিবীতে এলেন, তখন তিনি কী এনেছিলেন? আরেকটি ধর্ম? না। তিনি এনেছিলেন একটি সম্পর্কের আহ্বান।

ধর্ম কি, সম্পর্কই বা কী?
ধর্ম মূলত মানুষ তৈরি করা একগুচ্ছ নিয়মের কাঠামো, যার মাধ্যমে মানুষ ঈশ্বরের কাছে পৌঁছাতে চায়। প্রতিদিন প্রার্থনা করতে হবে, উপবাস রাখতে হবে, বিশেষ পোশাক পরতে হবে—এসব নিয়ম ঠিক করে দেয় কে ঈশ্বরের কাছাকাছি আর কে দূরে।

কিন্তু সম্পর্ক? সেটি এমন কিছু যা হৃদয় থেকে জন্ম নেয়। একটি শিশু যেমন তার বাবার সঙ্গে নির্ভরতায়, ভালোবাসায়, প্রশ্ন ও উত্তর–সব মিলিয়ে বেড়ে ওঠে, তেমনি এক জীবন্ত সম্পর্ক গড়ে ওঠে ঈশ্বরের সঙ্গে। এখানে ভয় নয়, আছে বিশ্বাস। এখানে প্রথা নয়, আছে প্রেম।

যীশু কী বলেছিলেন?
যোহন ১৫:১৫-তে যীশু বলছেন:
আর আমি তোমাদিগকে দাস বলি না... বন্ধু বলি।”
তিনি চান আমরা যেন তাঁকে শুধু প্রভু হিসেবে না দেখি, বরং একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, একজন প্রেমময় পিতা, একজন নির্ভরযোগ্য সহচর হিসেবে জানি।

তিনি নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে বললেন,
আত্মা জীবিত করে, নিয়ম তো মৃত্যু ঘটায়।” (২ করিন্থীয় ৩:৬)

জীবন্ত সম্পর্কের চিহ্ন কী কী?
১. প্রার্থনা নয়, কথোপকথন:
জীবন্ত সম্পর্ক মানে শুধুই মুখস্থ প্রার্থনা নয়। মানে নিজের মনের কথা বলা, কান্না, হাসি, দ্বিধা—সবকিছু তাঁর সামনে খোলাখুলি প্রকাশ করা।

2. নিয়ম নয়, প্রেমের টান:
আমি বাইবেল পড়ি কারণ আমি তাঁকে ভালোবাসি, তাঁর কণ্ঠ শুনতে চাই। এটা কোনো চাপ নয়, এটা অন্তর থেকে ওঠা আগ্রহ।

3. পাপ করলে পালানো নয়, ফিরে আসা:
ধর্ম পাপ করলে লজ্জা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সম্পর্ক বলে, “ফিরে এসো। আমি অপেক্ষা করছি।”

4. পরিবর্তন বাইরের নয়, ভেতরের:
ধর্ম চায় চেহারা বদলাতে। সম্পর্ক চায় হৃদয় বদলাতে। যীশুর সঙ্গে সময় কাটালে আমি ধীরে ধীরে যেমন আচরণ করতাম, তেমন আচরণ করি না। তিনি আমাকে ভেতর থেকে পাল্টে দেন।

বাইবেল কী বলে — ধর্ম নয়, সম্পর্কঃআমরা অনেকেই ভাবি, খ্রিস্টীয় বিশ্বাস মানেই হয়তো গির্জা যাওয়া, বাইবেল পড়া, প্রার্থনা করা আর কিছু নিয়ম মানা। কিন্তু বাইবেল যখন ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলে, তখন সেটি কোনো ধর্মীয় কাঠামোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং এটি হয় একটি অন্তরঙ্গ, জীবন্ত, ব্যক্তিগত সম্পর্ক — একজন পিতা ও সন্তানের, একজন প্রেমিক ও প্রেমিকার, একজন বন্ধু ও সহচরের মতো।

ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মানুষ: ধর্মীয় কর্মকার নাকি সম্পর্কিত সন্তান?বাইবেল জুড়ে দেখা যায়, ঈশ্বর মানুষকে শুধুই নিয়ম মানা প্রজাদের মতো দেখেননি। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন নিজের ছায়া-প্রতিমা হিসেবে, যাতে তারা তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারে (আদিপুস্তক ১:২৬)। তিনি কখনও বলেননি, “তোমরা আমার ধর্ম পালন করো”; বরং বলেন,

“আমি তাদের ঈশ্বর হব, তারা আমার জাতি হবে” (যিরমিয় ৩১:৩৩)

এটি একটি আত্মিক বন্ধন — যেখানে ভয় নয়, প্রেম কাজ করে।

যীশু কী এনেছিলেন — ধর্ম না সম্পর্ক?

যীশু খ্রিস্ট যখন দুনিয়ায় আসেন, তখন ইহুদি সমাজে শত শত ধর্মীয় নিয়ম ছিল। অথচ তিনি সেই নিয়মের পাহাড় ডিঙিয়ে মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করতে চাইলেন। তিনি ফারিসিদের বলেছিলেন:

“এই প্রজন্মের লোকেরা শুধু মুখে আমাকে সম্মান করে, কিন্তু তাদের হৃদয় আমার থেকে অনেক দূরে।” (মথি ১৫:৮)

যীশু কারো ‘ধর্ম’ যাচাই করেননি — তিনি তার হৃদয় দেখেছেন।

তিনি এমন কিছু বলেছিলেন, যা ধর্মীয় কাঠামোকে ভেঙে দিয়ে নতুন একটা পথে ডেকে এনেছে:

“আর আমি তোমাদের দাস বলি না... বন্ধু বলি।” (যোহন ১৫:১৫)

বন্ধু? ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্ব? এটা কোনো ধর্ম শেখায় না, কিন্তু বাইবেল শেখায়।

ধর্ম পালন বনাম জীবন্ত সম্পর্ক: কী পার্থক্য?

বিষয় ধর্ম সম্পর্ক
প্রেরণা কর্তব্য প্রেম
মনোভাব “করতেই হবে” “আমি চাই করি”
ঈশ্বরের ভাবমূর্তি কঠোর বিচারক প্রেমময় পিতা
যখন পাপ করি লুকাতে চাই ফিরতে চাই
বাহ্যিক আচরণ মুখস্থ প্রার্থনা অন্তরের কথাবার্তা

পবিত্র শাস্ত্র যা বলে, তা হলো সম্পর্কই মুখ্য

  • রোমীয় ৮:১৫
    “তোমরা দাসত্বের আত্মা পাওনি... বরং পুত্রত্বের আত্মা পেয়েছো, যেহেতু আমরা 'আব্বা, পিতা' বলি।”

  • প্রকাশিত বাক্য ৩:২০
    “দেখ, আমি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি... কেউ যদি খুলে দেয়, আমি তার সঙ্গে আহার করব।”

  • ১ শমূয়েল ১৬:৭
    “মানুষ চেহারা দেখে, কিন্তু প্রভু হৃদয় দেখেন।”

এসব পদতেই প্রমাণিত হয় — বাইবেল নিয়ম নয়, হৃদয়ের সম্পর্ক চায়।

আজকের ডাক: নিয়ম না, অন্তর দাও প্রভু যীশু আজও প্রতিটি হৃদয়ের দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি তোমার পূজো চান না, তোমার প্রোগ্রাম চান না — তোমার হৃদয় চান।

তুমি কি শুধু বাইবেল পড়ে যাচ্ছো নিয়ম করে? না কি তুমি সেই জীবন্ত ঈশ্বরের সঙ্গে প্রতিদিন হাঁটছো, কথা বলছো, সময় কাটাচ্ছো?

ধর্ম মানুষকে ব্যস্ত করে তোলে।
সম্পর্ক মানুষকে বদলে দেয়।

শেষ কথায় বলি:বাইবেল কখনো ধর্ম তৈরি করতে আসেনি। এটি একটি সম্পর্কের কাহিনি — একটি প্রেমপত্র, যেখানে সৃষ্টিকর্তা নিজেই বলছেন,

আমি তোমাকে চিরন্তন প্রেমে প্রেম করেছি।” (যিরমিয় ৩১:৩)

তাহলে ধর্ম কি একেবারে অপ্রয়োজনীয়?

না, ধর্ম বা নিয়মের একটি কাঠামো থাকতেই পারে—কিন্তু তা যেন সম্পর্কের ফল হয়, উৎস না হয়। ঠিক যেমন একটি প্রেমের সম্পর্কে নিয়ম তৈরি হয় বিশ্বাস ও সম্মান থেকে, তেমনি ঈশ্বরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে কিছু অভ্যাস গড়ে ওঠে—বাইবেল পাঠ, প্রার্থনা, উপাসনা—যা আমরা করি প্রেম থেকে, দায়িত্ববোধ থেকে নয়।

এই সম্পর্কের পথ খোলা আছে আজও। যীশু ডেকে বলছেন, “এসো, আমার সঙ্গে থেকো।” এই ডাক নিয়মে নয়, প্রেমে—আপনি কি সাড়া দেবেন?

উপসংহারঃ-ঈশ্বর আমাদের দাস বানাতে চান না—তিনি চান আমরা তাঁর সন্তান হই, বন্ধু হই, প্রেমিক হই। খ্রিস্টীয় বিশ্বাস মানে আরেকটি ধর্ম নয়—এটি একটি জীবন্ত, ব্যক্তিগত, প্রতিদিনের সম্পর্ক সেই একজন ঈশ্বরের সঙ্গে যিনি আমাদের জন্য প্রাণ দিলেন।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: