সংবাদ শিরোনাম
লোডিং...
Menu

Friday, January 31, 2025

বাইবেলে নাকি কাবা ও মক্কার কালো পাথর উল্লেখ আছে?

ইদানীং মুসলিমরা ও জাকির নায়েকের মতন কিছু পাবলিক বাইবেলকে নিয়ে মিথ্যাচার করে আসছে, তারা বলে বাইবেলে নাকি মক্কা ও কালো পাথর খুঁজে পেয়েছে তাদের দাবি এটাই। কিন্তু বাইবেল বলে সরাসরি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। তাদের দাবির কিছু অংশ দেখি

দাবি সমূহ গুলো


  1.  আদিপুস্তক ২৮:২২ নিয়ে তারা বলে কাবা ও কালো পাথর। 


  1. গীত সংহিতা ১৩৮:২ পদ কাবা ঘরের পূজা করবে। 


  1. আদিপুস্তক ২৮:১৬-১৮ নিয়ে তারা এটাই সেই মক্কার কাবা ছাড়া কিছুই হতে পারে না।


  1. গীতসংহিতা ৮৪:৫-৭ পদ নিয়ে তাদের দাবি হলো সকলে নাকি উপস্থিত হবে সেই কালো পাথরের সামনে মক্কার কালো পাথরকে ঘিরে প্রদক্ষিন করবে। 


  1. যিশাইয় ১৯:১৯-২২ পদ নিয়ে বলে মিনা প্রান্তরের কথা বলে, কাবার সামনে কান্না-কাটি করবে। একটি বেদি নির্মান করবে সেটাই নাকি কাবা।


আলোচনার পূর্বে মিথ্যাচারীদের সম্পর্কে কোরআনের কিছু আয়াত


1. আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকারকারীদের পরিণতি:

"আর যারা আমার নিদর্শনকে অস্বীকার করেছে, তাদের শাস্তি হবে কঠোর ও যন্ত্রণাদায়ক, কারণ তারা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল।"

— (সুরা আল-বাকারা ২:১৭৪)


2. মিথ্যাবাদীদের ধ্বংস অনিবার্য:

"অতএব, যারা মিথ্যা রচনা করে, তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত! তারা যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত।"

— (সুরা আল-মুতাফফিফিন ৮৩:১০-১১)


3. মিথ্যাচারীদের জন্য কঠোর শাস্তির ঘোষণা:

"অতঃপর সে (অপরাধী) জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আর তাকে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে দেওয়া হবে।"

— (সুরা আল-হাক্কাহ ৬৯:৩১-৩২)


শাস্তির প্রকৃতি:


জাহান্নামের কঠিন শাস্তি: মিথ্যাচারীদের পরিণতি হবে জাহান্নামের আগুনে, যেখানে তারা চিরকাল শাস্তি ভোগ করবে।


বিচারের দিনে অপমান: কেয়ামতের দিন মিথ্যাবাদীদের অপমানিত করা হবে তারা আল্লাহর করুণা থেকে বঞ্চিত হবে।


এ دنیاতেও লাঞ্ছনা: অনেক আয়াতে বলা হয়েছে যে মিথ্যাচারীদের পার্থিব জীবনেও ধ্বংস, অপমান ও শাস্তি হতে পারে।


এখন মূল আলোচনায় ফিরে আসা যাক, 


ভূমিকা


বাইবেলের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পটভূমি প্রধানত প্রাচীন ইসরায়েল, মেসোপটেমিয়া, মিশর এবং আশপাশের অঞ্চলের সাথে সম্পর্কিত। বাইবেল মূলত ঈশ্বরের মন্দির, বিশেষ করে যিরূশালেমে অবস্থিত মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, যেখানে ঈশ্বরের উপাসনা করা হত।


অনেক সময় বাইবেলের প্রাচীন ঘটনাগুলোর সাথে আরব উপদ্বীপের সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু বাইবেল কখনো মক্কার কথা উল্লেখ করেনি, কিংবা কাবাকে কোনোভাবেই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেনি। বরং বাইবেল ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসীদের যাত্রা এবং উপাসনার কেন্দ্র হিসেবে যিরূশালেমের মন্দিরকেই গুরুত্ব দিয়েছে।


এই আলোচনায়, আমরা বাইবেলের পাঠ ও ঐতিহাসিক প্রমাণের আলোকে ব্যাখ্যা করবো কেন কাবা বাইবেলের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ নয় এবং কীভাবে ঈশ্বরের মন্দিরের প্রতি যাত্রা বাইবেলের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা বহন করে।


বাইবেল কি কাবা বা মক্কার উল্লেখ করে?


বাইবেলের ঐতিহাসিক ও ধর্মতাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটে কাবা বা মক্কার কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। বাইবেল মূলত ঈশ্বরের উপাসনার জন্য নির্দিষ্ট স্থান হিসেবে যিরূশালেমের মন্দিরকেই গুরুত্ব দেয়।


১. ঈশ্বরের মন্দির এবং যিরূশালেমের গুরুত্ব


বাইবেলে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে যে ঈশ্বর নিজেকে প্রকাশ করেছেন এবং উপাসনার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন করেছেন, যা হলো যিরূশালেমের মন্দির।


দ্বিতীয় বিবরণ ১২:৫ –

“তবে সেই স্থানটি, যাহা তোমাদের সকল গোত্রের মধ্য হইতে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু উতাঁহার নামে স্থাপন করিবার জন্য বাছিয়া লইবেন, তোমরা কেবল সেইখানেই উপস্থিত হইবে।”

→ এই আয়াত স্পষ্ট করে যে ঈশ্বর নিজেই একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন করেছেন যেখানে তাঁর নামে উপাসনা করা হবে।


২ ইতিহাস ৭:১৬ – ২য় বংশাবলি 

“কারণ এখন আমি এই গৃহটিকে বেছে নিয়েছি এবং পবিত্র করেছি, যেন আমার নাম সেখানে চিরকাল থাকে; আমার চক্ষু ও আমার হৃদয় সদাই সেখানে থাকবে।”

→ ঈশ্বরের স্থায়ী উপাসনালয় হিসেবে কেবল যিরূশালেমকেই নির্ধারণ করা হয়েছে।


২ ইতিহাস বলতে পুরাতন নিয়মের (Old Testament) "২ ইতিহাসের বই" (2 Chronicles) বোঝানো হচ্ছে।


ইতিহাসের বই (১ ও ২ ইতিহাস) মূলত ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস বর্ণনা করে, বিশেষ করে দাউদ ও সলোমনের শাসনকাল এবং পরে যিহূদা রাজ্যের ঘটনাবলি।


২. বাইবেলের ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত


বাইবেলের কাহিনীগুলো প্রধানত ইসরায়েল, মিশর, আসিরিয়া, বাবেল, পারস্য, গ্রিস ও রোমান সাম্রাজ্যের সাথে সম্পর্কিত। এসব অঞ্চলের বাইরে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে বাইবেল বিবেচনা করে না, বিশেষ করে ধর্মীয় উপাসনার কেন্দ্র হিসেবে।


বাইবেলের কোনো নবী বা ঐতিহাসিক চরিত্র মক্কা বা কাবার প্রতি যাত্রা করেছেন এমন কোনো তথ্য নেই।


বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর মধ্যে কাবা বা মক্কার কোনো আধ্যাত্মিক ভূমিকা উল্লেখ নেই।


৩. প্রার্থনা ও তীর্থযাত্রার দিকনির্দেশনা


বাইবেল অনুসারে, ঈশ্বরের উপাসনার জন্য নির্দিষ্ট স্থান ছিল যিরূশালেমের মন্দির।


দানিয়েল ৬:১০ –

“দানিয়েল... দিনে তিনবার সে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করিত এবং যিরূশালেমের দিকে মুখ করিয়া ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিত।”

→ এটি প্রমাণ করে যে বাইবেলের অনুসারীরা যিরূশালেমের মন্দিরের দিকেই প্রার্থনা করতেন, অন্য কোনো স্থান যেমন মক্কা বা কাবা তাদের উপাসনার কেন্দ্র ছিল না।


 মুসলিমদের দাবি খন্ডন পর্ব


১নং দাবি হলো আদিপুস্তক ২৮:২২ নিয়ে তারা বলে কাবা ও কালো পাথর। 


বাইবেল কি বলে উক্ত উল্লেখিত পদে দেখি,এই যে পাথর আমি এখানে থামের মত করে দাঁড় করিয়ে রাখলাম এখানেই হবে ঈশ্বরের ঘর। হে ঈশ্বর, তুমি আমাকে যা কিছু দেবে তার দশ ভাগের এক ভাগ নিশ্চয়ই আমি তোমাকে ফিরিয়ে দেব। 

আদিপুস্তক ২৮:২২ এটা কি কাবা ঘর বus?


উওর, না, আদিপুস্তক ২৮:২২-এ বর্ণিত স্থানটি কাবা ঘর বোঝায় না। এখানে ইয়াকুব (যাকোব) যে পাথরটি থামের মতো দাঁড় করিয়ে রাখলেন, তা ছিল একটি স্মারক স্তম্ভ, যা পরবর্তীতে বেতেল (Bethel) নামে পরিচিত হয়।

প্রেক্ষাপট:

যাকোব যখন হরণ (Haran) যাওয়ার পথে বিশ্রামের জন্য এক জায়গায় রাত কাটান, তখন তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, এক সিঁড়ি স্বর্গ পর্যন্ত উঠে গেছে, আর ঈশ্বরের স্বর্গদূতেরা তাতে উঠানামা করছেন। স্বপ্নে ঈশ্বর তাঁকে আশীর্বাদ করেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে, তাঁর বংশধররা এই দেশ পাবে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে যাকোব সকালে ঘুম থেকে উঠে পাথরটি থামের মতো দাঁড় করিয়ে রাখেন এবং স্থানটির নাম দেন "বেতেল", যার অর্থ "ঈশ্বরের ঘর" (House of God)।

কাবা ঘরের প্রসঙ্গ:

কাবা ঘর ইসলামে মক্কায় অবস্থিত এবং ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী এটি আদম (আ.) প্রথম নির্মাণ করেছিলেন, পরে ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) পুনর্নির্মাণ করেন। কিন্তু আদিপুস্তক ২৮:২২-এ বর্ণিত ঘটনা একেবারেই ভিন্ন। এখানে ইব্রাহিম বা ইসমাইলের কোনো উল্লেখ নেই, বরং এটি যাকোবের ব্যক্তিগত প্রতিজ্ঞা ও ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতির একটি প্রতিফলন মাত্র।

মূল বিষয়:

  • বেতেল ইস্রায়েলের একটি শহর, যা পরবর্তীতে ইস্রায়েলীয়দের ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে ওঠে।

  • কাবা ঘর মক্কায় অবস্থিত এবং ইসলামে এটি আল্লাহর ঘর হিসেবে সম্মানিত।

  • যাকোব যে পাথরটি স্থাপন করেছিলেন, তা কেবল একটি স্মারক হিসেবে ছিল, এটি কোনো স্থায়ী উপাসনালয় ছিল না।

  • যাকোব ঈশ্বরকে দশমাংশ (tithe) দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যা পরবর্তী ইস্রায়েলীয়দের ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

তাই আদিপুস্তক ২৮:২২-এর ঘটনা কাবা ঘরের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।

২য় নং দাবি হলো,গীতসংহিতা ১৩৮:২ পদ কাবা ঘরের পূজা করবে।

উক্ত উল্লেখিত পদে বাইবেল কি বলে, তোমার পবিত্র ঘরের দিকে আমি মাথা নীচু করব, আর তোমার অটল ভালবাসা ও বিশ্বস্ততার জন্য তোমার গৌরব করব; কারণ তোমার প্রতিজ্ঞার পূর্ণতার মধ্য দিয়ে তুমি নিজেকে যেভাবে প্রকাশ করেছ তা তোমার সুনামের চেয়েও মহান। গীতসংহিতা ১৩৮:২ এখানে কি কাবা ঘরের কথা বলা হয়েছে? 

উওর-না,গীতসংহিতা ১৩৮:২-এ যে "পবিত্র ঘর" বা "holy temple"-এর কথা বলা হয়েছে, তা সাধারণত ঈশ্বরের মন্দির বা পবিত্র উপাসনাস্থল বোঝায়। এটি সম্ভবত সালোমনের মন্দির (যেরুজালেমের মন্দির)-এর প্রতি ইঙ্গিত করছে, যেটি ইসরায়েলীয়দের উপাসনার প্রধান কেন্দ্র ছিল।

তবে, ঈশ্বরের পবিত্রতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং তাঁর উপাসনার প্রতি আনুগত্য প্রকাশের অর্থেও এটি ব্যবহৃত হতে পারে। বিশেষ কর, খ্রিস্টান বিশ্বাস অনুসারে, নতুন নিয়মে (New Covenant) খ্রিস্টানদের দেহকেও "পবিত্র মন্দির" হিসেবে বিবেচনা করা হয় (১ করিন্থীয় ৬:১৯), যেখানে ঈশ্বরের আত্মা বাস করেন।

এটা কি কাবার সাথে সম্পৃক্ত,

উত্তর -না, গীতসংহিতা ১৩৮:২-এ যে "পবিত্র ঘর" বা "holy temple"-এর কথা বলা হয়েছে, তা কাবা ঘরের সাথে সম্পর্কিত নয়। এটি মূলত ইসরায়েলীয় উপাসনার স্থান, বিশেষ করে সালোমনের মন্দিরের (Temple of Solomon) প্রতি ইঙ্গিত করে, যা যেরুজালেমে অবস্থিত ছিল এবং ইহুদিদের উপাসনার কেন্দ্র ছিল।

কাবা ঘর ইসলাম ধর্মের একটি পবিত্র স্থান, যা মক্কায় অবস্থিত এবং মুসলিমরা নামাজের সময় এর দিকে মুখ করে প্রার্থনা করে। এটি ইসলামিক ঐতিহ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে গীতসংহিতার প্রসঙ্গ ইহুদিদের বিশ্বাস ও উপাসনার সাথে সম্পর্কিত নয়।

গীতসংহিতা ১৩৮:২-এর প্রসঙ্গে "পবিত্র ঘর" (Holy Temple) বলতে যেরুজালেমের মন্দির বোঝানো হয়েছে, কারণ:

1. বক্তা ও শ্রোতা:গীতসংহিতা (Psalms) লিখেছেন প্রধানত দاؤদ (দাবিদ)। তিনি ছিলেন ইসরায়েলের রাজা এবং ঈশ্বরের মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনাকারী (যদিও মন্দিরটি পরে তার পুত্র সালোমন নির্মাণ করেন, ১ রাজাবলি ৬:১)।

ইহুদিরা তখন যেরুজালেমের মন্দিরকে ঈশ্বরের বাসস্থান হিসেবে দেখত এবং উপাসনা করত।

2. ভাষা ও সংস্কৃতি:হিব্রু বাইবেলে "পবিত্র ঘর" বলতে বাইবেলের মন্দির বোঝানো হয়, যা ইহুদিদের উপাসনার কেন্দ্র ছিল।

গীতসংহিতার ভাষাও ইহুদি ঐতিহ্যের মধ্যে নিহিত, যেখানে কাবার কোনো উল্লেখ নেই।

3. ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ:কাবা তখনও ইহুদিদের উপাসনার স্থান ছিল না।

কাবা ইসলামের আবির্ভাবের অনেক আগে থেকেই আরবদের উপাসনার স্থান ছিল, কিন্তু ইহুদিরা কখনো সেটাকে তাদের ধর্মীয় উপাসনালয় হিসেবে দেখেনি।

কেন এটি কাবার সাথে সম্পর্কিত নয়?

গীতসংহিতা ইহুদি ধর্মগ্রন্থের অংশ, যা ইসরায়েলের ঈশ্বরের উপাসনার ওপর ভিত্তি করে লেখা।

বাইবেলের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পটভূমিতে কাবা কোনোভাবেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।

দাউদের সময় ইহুদিরা যেরুজালেমের মন্দির বা ঈশ্বরের মহিমান্বিত উপাসনালয়ের দিকেই প্রার্থনা করত, কাবার দিকে নয়।


৩য় নং দাবি হলো,আদিপুস্তক ২৮:১৬-১৮ নিয়ে তারা এটাই সেই মক্কার কাবা ছাড়া কিছুই হতে পারে না।

উক্ত উল্লেখিত পদে বাইবেল কি বলে,এই কথা ভেবে তাঁর মনে ভয় হল। তিনি বললেন, “কি ভয়ংকর এই জায়গা! এটা ঈশ্বরের থাকবার জায়গা ছাড়া আর কিছু নয়; স্বর্গের দরজা এখানেই।” যাকোব ভোরে উঠলেন এবং যে পাথরটা তিনি মাথার নীচে দিয়েছিলেন সেটা থামের মত করে দাঁড় করিয়ে তার উপরে তেল ঢেলে দিলেন। তিনি জায়গাটার নাম দিলেন বৈথেল (যার মানে “ঈশ্বরের ঘর”)। এই জায়গাটার কাছের শহরটার আগের নাম ছিল লূস। আদিপুস্তক ২৮:১৭-১৯ এটা মক্কার কাবাকে বোঝায়?


উত্তর-না, আদিপুস্তক ২৮:১৭-১৯-এর এই ঘটনা মক্কার কাবাকে বোঝায় না। বরং এটি বাইবেলের একটি বিশেষ প্রসঙ্গ, যেখানে যাকোব ঈশ্বরের একটি দর্শন (divine vision) পান এবং সেই জায়গার নাম দেন বৈথেল (Bethel), যার অর্থ "ঈশ্বরের ঘর"।


1. বৈথেলের ভৌগোলিক অবস্থান:


বৈথেল প্রাচীন ইসরায়েলের এক শহর, যা বর্তমান পশ্চিম তীরের অঞ্চলে অবস্থিত।


মক্কা সৌদি আরবে অবস্থিত, এবং বাইবেলে কোথাও মক্কার উল্লেখ নেই।


2. যাকোবের স্বপ্ন ও প্রতিজ্ঞা:


যাকোব এক স্বপ্নে দেখেন যে এক সিঁড়ি স্বর্গ পর্যন্ত উঠে গেছে এবং দেবদূতেরা তাতে উঠানামা করছে।


তিনি সেই স্থানকে ঈশ্বরের উপস্থিতির জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করেন।


সেখানে তিনি একটি পাথর দাঁড় করিয়ে তেল ঢেলে তা উৎসর্গ করেন।


কাবার সাথে এমন ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।


3. বৈথেল বনাম কাবা: কাবা ইসলামের একটি পবিত্র স্থান, যা মুসলমানরা বিশ্বাস করেন ইব্রাহিম ও ইসমাইল পুনর্নির্মাণ করেছিলেন।


বৈথেল মূলত ইসরায়েলের প্রাচীন ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যা পরবর্তীকালে ইসরায়েলীয়দের উপাসনার স্থান হয়ে ওঠে।


এছাড়া, আদিপুস্তকের কোথাও মক্কার কাবার কথা বলা হয়নি। এটি বাইবেলের প্রসঙ্গে একটি ভুল ব্যাখ্যা মাত্র।


বৈথেল (Bethel), মানে কি ?


বৈথেল (Bethel) শব্দটি হিব্রু ভাষার בֵּית־אֵל (Beit-El) থেকে এসেছে, যার অর্থ "ঈশ্বরের গৃহ" (House of God)।


বাইবেলের প্রেক্ষাপটে:


1. পুরাতন নিয়মে বৈথেল হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যেখানে যাকোব ঈশ্বরের দর্শন পেয়েছিলেন এবং সেখানে একটি বেদি তৈরি করেছিলেন (আদিপুস্তক ২৮:১৯)।



2. পরবর্তীতে, এটি ইস্রায়েলীয়দের উপাসনার স্থান হয়ে ওঠে, যদিও সেখানে মূর্তিপূজাও চালু হয় (১ রাজাবলি ১২:২৮-৩৩)



3. নবী হোসেয়া ও আমোস এই স্থানটির বিরুদ্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, কারণ লোকেরা সেখানে মূর্তিপূজার কারণে ঈশ্বরের প্রকৃত উপাসনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল (আমোস ৪:৪, ৫:৫-৬)


খ্রিস্টীয় দৃষ্টিকোণ থেকে: বৈথেলকে অনেক সময় আধ্যাত্মিকভাবে ঈশ্বরের উপস্থিতির স্থান বা খ্রিস্টীয় উপাসনা ও প্রার্থনার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।


৪র্থ দাবি হলো, গীতসংহিতা ৮৪:৫-৭ পদ নিয়ে তাদের দাবি হলো সকলে নাকি উপস্থিত হবে সেই কালো পাথরের সামনে মক্কার কালো পাথরকে ঘিরে প্রদক্ষিন করবে।


উক্ত উল্লেখিত পদে বাইবেল কি বলে দেখি,তোমার কাছ থেকে যারা শক্তি পায় তারা ধন্য। ধন্য তারা, যাদের অন্তরে সিয়োনে যাবার পথের চিন্তা রয়েছে। বাকা-উপত্যকার মধ্য দিয়ে যাবার সময় তারা জায়গাটাকে ফোয়ারার স্থান করে তোলে; প্রথম বর্ষার বৃষ্টি সেই জায়গাটাকে আশীর্বাদে ভরে দেয়। যাওয়ার পথে তারা শক্তির উপরে শক্তি পায়; তারা প্রত্যেকে সিয়োনে ঈশ্বরের সামনে গিয়ে উপস্থিত হয়। গীতসংহিতা ৮৪:৫-৭ এটা কি মক্কা বা জমজম কূপের সাথে জরিত?


উত্তর-না, গীতসংহিতা ৮৪:৫-৭ মক্কা বা জমজম কূপের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটি সম্পূর্ণরূপে ইস্রায়েলের প্রসঙ্গেই লেখা হয়েছে এবং বাইবেলের একটি অংশ, যা ঈশ্বরের মন্দিরে উপাসনা করতে যাওয়া তীর্থযাত্রীদের নিয়ে কথা বলে।


পশ্চিমা ও ইহুদি ব্যাখ্যা অনুযায়ী অর্থ:


এই পদগুলোর মূল প্রসঙ্গ হলো সিয়োন, যা বাইবেলে ঈশ্বরের শহর (যেরুজালেম) ও তাঁর মন্দিরের প্রতীক। তীর্থযাত্রীরা যখন ঈশ্বরের মন্দিরে পূজা করতে যায়, তখন তারা ঈশ্বর থেকে শক্তি পায়। "বাকা উপত্যকা" সম্ভবত প্রতীকীভাবে কষ্ট, শোক বা শুষ্কতা বোঝায়, যা ঈশ্বরের আশীর্বাদে পরিবর্তিত হয়।


ইসলামী প্রসঙ্গের সাথে কোনো সম্পর্ক আছে কি?


গীতসংহিতা মূলত খ্রিস্টান ও ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থের অংশ এবং এটি ইস্রায়েল ও ইহুদিদের তীর্থস্থান (যেরুজালেমের মন্দির) সম্পর্কিত। মক্কা বা জমজম কূপের বিষয়ে এখানে কিছুই বলা হয়নি। কিছু মানুষ মিল খোঁজার চেষ্টা করতে পারে, তবে ঐতিহাসিক ও ধর্মতাত্ত্বিকভাবে এই পদগুলো ইহুদি ও খ্রিস্টান বিশ্বাস অনুযায়ী যেরুজালেমকেন্দ্রিক।


গীতসংহিতা ৮৪:৫-৭ এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা


এই অংশটি তীর্থযাত্রার একটি চিত্র তুলে ধরে, যেখানে ঈশ্বরের মন্দিরে উপাসনা করতে যাওয়া ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা হয়েছে। এটি দাউদের বংশীয় বংশধরদের দ্বারা গাওয়া একটি স্তোত্র (Psalm) যা ঈশ্বরের উপস্থিতি কামনা করে।

---

পদ-by-পদ বিশ্লেষণ:


গীতসংহিতা ৮৪:৫


"তোমার কাছ থেকে যারা শক্তি পায় তারা ধন্য। ধন্য তারা, যাদের অন্তরে সিয়োনে যাবার পথের চিন্তা রয়েছে।"


"যারা তোমার কাছ থেকে শক্তি পায়" – এই বাক্যাংশটি সেই মানুষদের বোঝায় যারা তাদের শক্তির জন্য ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে। এখানে মানুষের আত্মিক দুর্বলতা ও ঈশ্বরের শক্তি প্রদান করার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।


"ধন্য তারা" – এখানে ‘ধন্য’ শব্দের অর্থ ঈশ্বরের কাছ থেকে আশীর্বাদ প্রাপ্ত হওয়া।


"সিয়োনে যাবার পথের চিন্তা" – সিয়োন বলতে যেরুজালেমের মন্দির বোঝানো হয়েছে, যেখানে ইহুদিরা ঈশ্বরের উপাসনার জন্য যেত। যারা অন্তর থেকে ঈশ্বরের নিকট যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা রাখে, তারা সত্যিকারের ধন্য।


গীতসংহিতা ৮৪:৬


"বাকা-উপত্যকার মধ্য দিয়ে যাবার সময় তারা জায়গাটাকে ফোয়ারার স্থান করে তোলে; প্রথম বর্ষার বৃষ্টি সেই জায়গাটাকে আশীর্বাদে ভরে দেয়।"


"বাকা-উপত্যকা" –


অনেকে মনে করেন, এটি একটি প্রতীকী উপমা যা দুঃখ, কষ্ট বা শুকনো ও অনুর্বর স্থানের প্রতিচ্ছবি। "বাকা" শব্দের অর্থ হতে পারে কান্না বা শোক।


কিছু পণ্ডিত মনে করেন, এটি কোনো প্রকৃত স্থানের নাম হতে পারে, তবে বাইবেলের অন্যান্য স্থানে এটির কোনো সরাসরি উল্লেখ নেই।


"তারা জায়গাটাকে ফোয়ারার স্থান করে তোলে" – যারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত, তারা কষ্টের মাঝেও আশীর্বাদ নিয়ে আসে। তাদের বিশ্বাস ও ঈশ্বরের উপস্থিতি শূন্যতা ও শুষ্কতা থেকে উর্বরতা ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।


"প্রথম বর্ষার বৃষ্টি আশীর্বাদে ভরে দেয়" – ঈশ্বরের অনুগ্রহ তীর্থযাত্রীদের ক্লান্তি ও কষ্ট দূর করে এবং তাদের পুনরুজ্জীবিত করে।


গীতসংহিতা ৮৪:৭


"যাওয়ার পথে তারা শক্তির উপরে শক্তি পায়; তারা প্রত্যেকে সিয়োনে ঈশ্বরের সামনে গিয়ে উপস্থিত হয়।"


"শক্তির উপরে শক্তি পায়" – যখন একজন বিশ্বাসী ঈশ্বরের পথে চলে, তখন তার বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়। প্রতিটি ধাপে সে ঈশ্বরের কাছ থেকে নতুন শক্তি পায়।


"তারা প্রত্যেকে সিয়োনে ঈশ্বরের সামনে গিয়ে উপস্থিত হয়" – এটি সেই প্রতিজ্ঞার ইঙ্গিত দেয় যে যারা ঈশ্বরের পথে চলে, তারা অবশেষে তাঁর উপস্থিতিতে পৌঁছাবে।

---


প্রসঙ্গ ও গুরুত্ব


এটি তীর্থযাত্রীদের গীত (Pilgrim Psalm) হিসেবে পরিচিত।


এটি ইস্রায়েলের মন্দিরে উপাসনা করতে যাওয়া তীর্থযাত্রীদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে।


বিশ্বাসীরা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও ঈশ্বরের প্রতি আস্থাশীল থাকলে, তাদের যাত্রা আশীর্বাদপূর্ণ হয়।


খ্রিস্টান ব্যাখ্যায় এটি আত্মিক যাত্রার প্রতীক, যেখানে বিশ্বাসী ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকট যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এগিয়ে চলে এবং প্রতিটি ধাপে ঈশ্বর তাকে শক্তি দেন।


---


এটি মক্কা বা জমজমের সাথে সম্পর্কিত নয় কেন?


1. সিয়োন ও বাকা উপত্যকা – "সিয়োন" বাইবেলে বরাবরই যেরুজালেম ও ঈশ্বরের শহর বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।


"বাকা উপত্যকা" কিছু পণ্ডিত প্রতীকীভাবে ব্যাখ্যা করেন, যা কান্না বা শোক বোঝায়।


ইসলামিক ঐতিহ্যে "বাকা" বলতে কেউ কেউ মক্কাকে বোঝাতে চাইলেও, বাইবেলের প্রসঙ্গে এটি যেরুজালেমের মন্দিরের যাত্রারই অংশ।


2. যাত্রার উদ্দেশ্য – মক্কায় হজ্ব মুসলমানদের জন্য একটি ধর্মীয় ফরজ, যেখানে কাবা তাওয়াফ করা হয়।


গীতসংহিতা ৮৪-তে ইহুদিদের উদ্দেশ্য হলো যেরুজালেমে ঈশ্বরের মন্দিরে উপাসনা করা।


3. ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় পার্থক্য – গীতসংহিতা খ্রিস্টান ও ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থের অংশ, যা মক্কা ও ইসলামের জন্মের অনেক আগের লেখা।


বাইবেল মক্কার প্রতি কোনো উল্লেখ করে না, বরং ঈশ্বরের মন্দিরের দিকে যাত্রা করাকে তুলে ধরে।


গীতসংহিতা ৮৪:৫-৭ একটি গভীর আত্মিক বার্তা বহন করে যা ঈশ্বরের প্রতি নির্ভরশীলতা, তীর্থযাত্রা ও আত্মিক শক্তির উপর জোর দেয়। এটি একেবারেই যেরুজালেমের প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে এবং মক্কা বা জমজম কূপের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।


বাইবেল মতে বাক্কা কি মক্কা ?


বাইবেলের কোথাও সরাসরি মক্কা (Mecca) বা বাক্কা (Bakkah) নামটি উল্লেখ করা হয়নি, তবে একটি সম্পর্কিত শব্দ পাওয়া যায়।


১. বাক্কা নামের উল্লেখ: সামসঙ্গীত ৮৪:৬ (Psalms 84:6)

"Who passing through the valley of Baca make it a well; the rain also filleth the pools." (KJV)

"তাঁরা বাক্কা উপত্যকা দিয়ে গেলে তা ঝর্ণার স্থানে পরিণত হয়; প্রথম বৃষ্টি এটিকে আশীর্বাদে পূর্ণ করে।"


এখানে "Valley of Baca" বলা হয়েছে, যা একটি নির্দিষ্ট স্থানের নাম। এটি সাধারণত দুঃখের বা শুষ্ক স্থানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।


২. বাক্কা ও মক্কার সম্পর্ক: ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে, সূরা আলে ইমরান ৩:৯৬-এ "বাক্কা" শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে এবং একে মক্কার আরেক নাম হিসেবে ধরা হয়।


সকল ব্যাখ্যাকার মনে করেন যে বাইবেলের "Baca" এবং কোরআনের "Bakkah" একই জায়গা নয়, অর্থাৎ মক্কা নয়।


৩. বাইবেল অনুসারে বাক্কা মক্কা নয়: বাইবেলের ভাষ্য অনুযায়ী, "Valley of Baca" সম্ভবত প্রতীকী বা ইসরায়েলের কোনো জায়গা বোঝায়।


এটি যেরুজালেমে ঈশ্বরের মন্দিরে তীর্থযাত্রার পথের অংশ হিসেবেও বোঝানো হতে পারে।


বাইবেল থেকে বাক্কা = মক্কা এমন সরাসরি কোনো প্রমাণ নেই। বাইবেলের Valley of Baca সাধারণত প্রতীকীভাবে ব্যবহৃত হয়, যা মুসলিম ব্যাখ্যায় মক্কার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, কিন্তু বাইবেলের মূল প্রসঙ্গে তা নিশ্চিত নয়।


৫ম দাবি হলো,যিশাইয় ১৯:১৯-২২ পদ নিয়ে বলে মিনা প্রান্তরের কথা বলে, কাবার সামনে কান্না-কাটি করবে। একটি বেদি নির্মান করবে সেটাই নাকি মক্কার কাবা। 


উক্ত উল্লেখিত পদে বাইবেল কি বলে দেখি, সেই দিন মিসর দেশের মধ্যে সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা বেদী আর তার সীমানায় একটা স্তম্ভ থাকবে। এই সব হবে মিসর দেশে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা চিহ্ন ও সাক্ষ্য। তাদের অত্যাচারীদের দরুন তারা যখন সদাপ্রভুর কাছে কাঁদবে তখন তিনি তাদের কাছে একজন উদ্ধারকর্তা ও রক্ষাকারীকে পাঠিয়ে দেবেন এবং তিনি তাদের উদ্ধার করবেন। এইভাবে সদাপ্রভু মিসরীয়দের কাছে নিজেকে প্রকাশ করবেন এবং সেই দিন তারা সদাপ্রভুকে স্বীকার করে নেবে। তারা পশু-উৎসর্গ ও শস্য-উৎসর্গ করে তাঁর উপাসনা করবে এবং সদাপ্রভুর কাছে মানত করে তা পূরণ করবে। সদাপ্রভু মিসরকে আঘাত করবেন; তিনি তাদের আঘাত করবেন এবং সুস্থও করবেন। তারা সদাপ্রভুর দিকে ফিরবে, আর তিনি তাদের মিনতিতে সাড়া দেবেন ও তাদের সুস্থ করবেন। যিশাইয় ১৯:১৯-২২ এটা মক্কার সাথে জড়িত ? 


উত্তর - না, যিশাইয় ১৯:১৯-২২ মক্কার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এই অধ্যায়টি মূলত মিসর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করছে। এখানে বলা হয়েছে, একদিন মিসর সদাপ্রভুকে চিনবে, তাঁর প্রতি ফিরে আসবে এবং তাঁকে উপাসনা করবে।


প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা


১. মিসরে বেদী ও স্তম্ভ – এটি সম্ভবত এমন একটি প্রতীক যে, একসময় মিসরের লোকেরা সত্য ঈশ্বরের দিকে ফিরবে এবং তাঁকে উপাসনা করবে।


2. উদ্ধারকর্তা ও রক্ষাকারী – ঈশ্বর মিসরের মানুষদের রক্ষা করবেন, যখন তারা তাঁর কাছে সাহায্যের জন্য ডাকবে।


3. ঈশ্বরের আঘাত ও সুস্থতা – এটি বোঝায় যে, ঈশ্বর প্রথমে শাস্তি দিতে পারেন, কিন্তু পরে যখন তারা তাঁর দিকে ফিরবে, তখন তিনি তাদের সুস্থ করবেন।


মক্কার সাথে সম্পর্ক নেই কেন?


এখানে মিসর স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, মক্কা বা আরব উপদ্বীপের কথা বলা হয়নি।


মিসরের ভবিষ্যৎ নিয়ে ইস্রায়েলের ঈশ্বরের একটি পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে, যা আরব সংস্কৃতির বা ইসলামের প্রেক্ষাপটে মানানসই নয়।


বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো নির্দিষ্ট দেশ বা জাতির জন্য প্রযোজ্য এবং প্রসঙ্গের বাইরে তা অন্য কিছুর সাথে সংযুক্ত করা ঠিক হবে না।


যিশাইয় ১৯:১৯-২২-এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা


এই অংশটি যিশাইয় ভবিষ্যদ্বক্তার এক বিশেষ ভবিষ্যদ্বাণী, যেখানে মিসরের জন্য ঈশ্বরের পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়েছে। এটি একটি ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক বার্তা বহন করে, যা সরাসরি কোনো নির্দিষ্ট আধুনিক শহর বা জাতির সঙ্গে যুক্ত নয়। এখন আমরা এই আয়াতগুলোর মূল বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করব।

---


১. "সেই দিন মিসর দেশের মধ্যে সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা বেদী আর তার সীমানায় একটা স্তম্ভ থাকবে।" (১৯:১৯)


"সেই দিন" – এটি বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীতে সাধারণত ঈশ্বরের হস্তক্ষেপের দিন বোঝায়।


"বেদী" – এটি ইঙ্গিত করতে পারে যে, মিসরের লোকেরা সত্য ঈশ্বরের দিকে ফিরে আসবে এবং তাঁকে উপাসনা করবে।


"সীমানায় স্তম্ভ" – প্রাচীনকালে বিজয়ী রাজারা বা দেবতাদের সম্মানে স্তম্ভ নির্মাণ করত। এখানে সম্ভবত বলা হচ্ছে, মিসর সদাপ্রভুর প্রতি সম্মান জানাবে।


👉 এর সাথে মক্কার কোনো সম্পর্ক নেই কারণ এখানে মিসরের কথাই স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।

---


২. "এই সব হবে মিসর দেশে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা চিহ্ন ও সাক্ষ্য।" (১৯:২০)


ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে মিসরে একটি বিশেষ চিহ্ন থাকবে, যা বোঝায় যে সেখানকার মানুষ সত্য ঈশ্বরের উপাসনা শুরু করবে।


"তাদের অত্যাচারীদের দরুন তারা যখন সদাপ্রভুর কাছে কাঁদবে..."


মিসরের জনগণ যখন কষ্ট পাবে, তখন তারা ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চাইবে।


তখন ঈশ্বর তাদের "উদ্ধারকর্তা ও রক্ষাকারী" পাঠাবেন।


অনেক ব্যাখ্যাকারী মনে করেন, এটি প্রথমত ইস্রায়েলিদের মিসরীয় দাসত্ব থেকে মুক্তির প্রতিচ্ছবি হতে পারে, আবার এটি ভবিষ্যতের কোনো ঘটনা সম্পর্কেও ইঙ্গিত করতে পারে।


👉 এটি মক্কার সঙ্গে যুক্ত নয় কারণ মিসরের মানুষেরই কথা বলা হচ্ছে, যারা ভবিষ্যতে ঈশ্বরের প্রতি ফিরে আসবে।

---


৩. "এইভাবে সদাপ্রভু মিসরীয়দের কাছে নিজেকে প্রকাশ করবেন এবং সেই দিন তারা সদাপ্রভুকে স্বীকার করে নেবে। তারা পশু-উৎসর্গ ও শস্য-উৎসর্গ করে তাঁর উপাসনা করবে এবং সদাপ্রভুর কাছে মানত করে তা পূরণ করবে।" (১৯:২১)


মিসরের লোকেরা ঈশ্বরকে চিনবে এবং তাঁকে মান্য করবে।


তারা পশু-উৎসর্গ ও শস্য-উৎসর্গ করবে, যা বাইবেলের উপাসনার একটি পুরনো পদ্ধতি ছিল।


👉 ইসলামে পশু-উৎসর্গ (কুরবানি) থাকলেও, বাইবেলের এই আয়াতে বলা উৎসর্গ সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। এটি মিসরের ঐতিহাসিক ও ভবিষ্যৎ আধ্যাত্মিক পরিবর্তনের কথা বলছে, মক্কা বা ইসলামের বিষয়ে নয়।

---


৪. "সদাপ্রভু মিসরকে আঘাত করবেন; তিনি তাদের আঘাত করবেন এবং সুস্থও করবেন। তারা সদাপ্রভুর দিকে ফিরবে, আর তিনি তাদের মিনতিতে সাড়া দেবেন ও তাদের সুস্থ করবেন।" (১৯:২২)


"সদাপ্রভু মিসরকে আঘাত করবেন" – এটি সম্ভবত ঈশ্বরের শাস্তি বোঝায়, যা তাদের শুদ্ধ করবে এবং তাদের সত্যের দিকে ফিরিয়ে আনবে।


"তিনি তাদের সুস্থ করবেন" – এটি মিসরের আধ্যাত্মিক ও জাতীয় পুনর্জাগরণের ইঙ্গিত।


👉 মক্কা বা আরব দেশ এখানে আলোচ্য নয়, বরং মিসরের উপর ঈশ্বরের পরিকল্পনা বোঝানো হয়েছে।

---


এই ভবিষ্যদ্বাণীর মূল শিক্ষা


এই ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা যায়—


1. সত্য ঈশ্বরের প্রতি প্রত্যাবর্তন – একসময় মিসর সত্য ঈশ্বরকে চিনবে এবং তাঁকে পূজা করবে।


2. ঈশ্বরের ন্যায়বিচার ও করুণা – তিনি প্রথমে শাস্তি দিতে পারেন, কিন্তু পরবর্তীতে ক্ষমা করে সুস্থও করেন।


3. ঈশ্বরের সর্বজনীনতা – শুধু ইস্রায়েলের জন্য নয়, বরং সমস্ত জাতির জন্যই ঈশ্বরের পরিকল্পনা রয়েছে।

---


উপসংহার: মক্কার সাথে সম্পর্ক নেই


এই ভবিষ্যদ্বাণী সরাসরি মিসর সম্পর্কে বলা হয়েছে, অন্য কোনো জায়গা বা জাতির কথা এখানে উল্লেখ নেই।


মক্কার সম্পর্কিত কোনো ঐতিহাসিক বা আধ্যাত্মিক সংযোগ এখানে নেই।


এটি বাইবেলের ঈশ্বরের একটি পরিকল্পনা, যা জাতি ও সময়ের সীমার বাইরে ঈশ্বরের সার্বভৌম কার্যক্রম বোঝায়।







শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: