يَٰٓأَيُّهَا ٱلْمُدَّثِّرُ
(ইয়া আইয়ু হাল মুদ্দাসসির)
"হে বস্ত্রাচ্ছাদিত (নবী)!"
(কুরআন ৭৪:১, অনুবাদ: ফজলুর রহমান)
উক্ত আয়াতে يَٰٓأَيُّهَا (ইয়া আইয়ু হা) রয়েছে যা দিয়ে "O You" বোঝায়। বাংলা অনুবাদে "হে", "ওহে" বলে সম্বোধন করা যেতে পারে। আর এখানে يَٰٓأَيُّهَا (ইয়া আইয়ু হা) দিয়ে সরাসরি হযরত মুহাম্মাদকে সম্বোধন করা হচ্ছে যিনি ছিলেন বস্ত্রাচ্ছাদিত।
এখানে যদি আমরা এই আয়াতকে কুরআন ১১২:১ আয়াতের সাথে তুলনা করি, তবে একটি বিষয় দেখতে পাই। কুরআন ১১২:১ আয়াত বলছে,
قُلْ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ
(ক্বুলহু ওয়াল্লাহু আহাদ)
"বল, "আল্লাহ হলেন 'আহাদ'" (কুরআন ১১২:১)
এখানে কুরআন ১১২:১ আয়াতে قُلْ (ক্বুল) বা "বলো" শব্দ এসেছে যা দিয়ে বোঝায় যে, হযরত মুহাম্মাদকে ঘোষণা করতে বলা হচ্ছে যে, 'তুমি বলে দাও, আল্লাহ হলেন 'আহাদ''।
কিন্তু কুরআন ৭৪:১ আয়াতে قُلْ (ক্বুল) বা "বলো" জাতীয় কিছু নেই; বরং রয়েছে يَٰٓأَيُّهَا (ইয়া আইয়ু হা) যা দিয়ে সরাসরি মুহাম্মাদকে উদ্দেশ্যে করে বলা হচ্ছে 'ওহে (মুহাম্মাদ, তুমি শোনো)'!
একারণে কুরআন ৭৪:১, অর্থাৎ সূরা মুদ্দাসিসর এর শুরুই হচ্ছে মুহাম্মাদকে ব্যক্তিগতভাবে নির্দেশ দেওয়া এর মাধ্যমে; আর এই সূরারই ৫নং আয়াতে মুহাম্মাদকে নির্দেশ দিয়ে বলা হচ্ছে,
وَٱلرُّجْزَ فَٱهْجُرْ
(ওয়াররুজ্-যা ফাহ্-জুর)
"অপবিত্রতা (মূর্তিপূজা) পরিহার কর।"
(কুরআন ৭৪:৫, অনুবাদ: ফজলুর রহমান)
পুনরায় উল্লেখ্য যে, উক্ত আয়াতে হযরত মুহাম্মাদকে ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
উক্ত আয়াতে وَٱلرُّجْزَ (ওয়াররুজ্-যা) শব্দ রয়েছে যা মূলত الرجز (আর-রুজ্জ) এর কথা বলছে, এবং الرجز (আর-রুজ্জ) হল তৎকালীন (মুহাম্মাদের) সময়ের কিছু মূর্তি।
অর্থাৎ উক্ত কুরআন ৭৪:৫ আয়াতে মুহাম্মাদকে ব্যক্তিগত নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমে বলা হচ্ছে এসকল মূর্তি থেকে দূরে থাকার জন্য।
তাফসীর ইবনে কাসীর এই الرجز (আর-রুজ্জ) এর বিষয়ে আমাদের বলছে,
قال علي بن أبي طلحة ، عن ابن عباس : ( والرجز ) وهو الأصنام ، فاهجر . وكذا قال مجاهد ، وعكرمة ، وقتادة ، والزهري ، وابن زيد : إنها الأوثان
"ইবনে আব্বাস এর সূত্রে আলী ইবনে আবি তালহা বলেন: (والرجز) যা হল মূর্তি, তাই এগুলো পরিত্যাগ করো। একইভাবে মুজাহিদ, ইকরিমা, কাতাদাহ, আয-যুহরি এবং ইবনে যায়েদও বলেন: নিঃসন্দেহে তারা হল মূর্তি।"
(তাফসীর ইবনে কাসীর, কুরআন ৭৪:৫ আয়াতের তাফসীর হতে বিবৃত)
আরবি ইবারতের তথ্যসূত্র:
https://quran4all.net/ar/tafsir/3/74/5
অর্থাৎ, কুরআন ৭৪:৫ আয়াতে মুহাম্মাদকে ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি নির্দেশ দিয়ে বলা হচ্ছে মূর্তি ত্যাগ করার জন্য।
আরও উল্লেখ্য যে, সর্বপ্রাচীন লিখিত তাফসীর হল "তাফসীরে তাবারী" যা থেকে পরবর্তীকালের অন্যান্য তাফসীর লেখা হয়েছে। এই তাফসীরে তাবারীতে কুরআন ৭৪:৫ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,
معنى الكلام: والأوثان فاهجر عبادتها واترك خدمتها
(মা'আন আল কালাম ওয়াল আওছান ফাহ্জার ইবাদাতিহা ওয়াৎরুক খিদ্-মাতুহা)
"এই কালামের অর্থ: আর মূর্তিগুলোর ইবাদত পরিত্যাগ করো এবং তাদের সেবা ত্যাগ করো"
(তাফসীরে তাবারী, কুরআন ৭৪:৫ আয়াতের তাফসীর হতে বিবৃত)
আরবি ইবারতের তথ্যসূত্র:
https://quran.ksu.edu.sa/tafseer/tabary/sura74-aya5.html
খেয়াল করুন, তাবারী তার তাফসীরের মধ্যে কুরআন ৭৪:৫ আয়াতের ব্যাখ্যায় عبادتها (ইবাদাতিহা) শব্দ ব্যবহার করেছে যার আক্ষরিক অর্থ হল "তার ইবাদত"।
আর মূর্তির ইবাদত এর সোজাসুজি অর্থ হল মূর্তিপূজা করা। অর্থাৎ, মুহাম্মাদ সরাসরি মূর্তিপূজায় লিপ্ত ছিলেন এবং কুরআন ৭৪:৫ আয়াত তাই মুহাম্মাদকে ব্যক্তিগতভাবে এই মূর্তিপূজা পরিত্যাগের নির্দেশ দিচ্ছে!
এখানে একটি বিষয় আরও উল্লেখ্য যে, কুরআন ৭৪:৫ আয়াত যখন মুহাম্মাদকে মূর্তিপূজা থেকে বিরত হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে, তার পূর্বে আরও তিনটি সূরা মুহাম্মাদের ওপর নাযিল হয়, যেগুলো হল:
১) সূরা আলাক (কুরআনের ৯৬ নং সূরা),
২) সূরা কালাম (কুরআনের ৬৮ নং সূরা),
৩) সূরা মুজ্জাম্মিল (কুরআনের ৭৩ নং সূরা)।
তথ্যসূত্র - https://tanzil.net/docs/revelation_order
আর এই তিনটি সূরা নাযিল হওয়ার পরও মুহাম্মাদ মূর্তিপূজায় লিপ্ত ছিল! ফলে কুরআন ৭৪:৫ আয়াতে এসে মুহাম্মাদকে মূর্তিপূজা পরিত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়!
এক্ষেত্রে মুহাম্মাদের এই মূর্তি সংরক্ষণের বিষয়টি আমরা সহিহ হাদিস থেকেও পাই।
মুসলিম আলেমগণ ইচ্ছাকৃতভাবে এই হাদিসের বিকৃত অনুবাদ করে লোকদের চোখে ধুলো দিয়েছে!
আসুন প্রথমে তাদের অনুবাদটি আমরা দেখিঃ
"আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল আমার নিকট এসে বলেন, গত রাতে আমি আপনার কাছে এসেছিলাম, কিন্তু আমি প্রবেশ করিনি।
কারণ ঘরের দরজায় ছবি ছিলো।
ঘরের মধ্যে ছিলো ছবিযুক্ত পর্দা
এবং ঘরের ভিতরে ছিলো কুকুর।
সুতরাং আপনি ঘরে ঝুলানো ছবির মাথা কেটে দেয়ার আদেশ করুন, তাহলে তা গাছের আকৃতিতে পরিণত হবে। আর পর্দাটি কেটে দু’টি বালিশের ভিতরের কাপড় বানাতে আদেশ করুন এবং কুকুরটিকে বের করে দেয়ার হুকুম দিন...."
[গ্রন্থঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), অধ্যায়ঃ ২৭/পোশাক-পরিচ্ছদ, হাদিস নম্বরঃ ৪১৫৮, হাদিসের মান - সহিহ]
source - http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=61526
খেয়াল করুন, মুসলিমদের অনুবাদে দেখা যাচ্ছে যে, তিনটি জিনিস মুহাম্মাদের গৃহে ছিলঃ
১) ঘরের দরজায় ছবি,
২) ঘরের মধ্যে ছবিযুক্ত পর্দা,
৩) ঘরের ভিতর কুকুর।
এবার যদি আমরা আরবি ইবারতের দিকে লক্ষ্য করি, তবে দেখব যে, এখানে "ছবি" এর ক্ষেত্রে এই হাদিসে تَمَاثِيلُ (তামাছিলু) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যার সরাসরি অর্থ হল "মূর্তি"!
যেমন উক্ত হাদিসের আরবি ইবারতের এক স্থানে বলছে,
كَانَ عَلَى الْبَابِ تَمَاثِيلُ
(কা-না আ'লাল বাবি তামাছিলু)
"দরজায় মূর্তি ছিল"
وَكَانَ فِي الْبَيْتِ قِرَامُ سِتْرٍ فِيهِ تَمَاثِيلُ
(ওয়া কা-না ফিল বাইতি ক্বিরামু সিৎরিন ফিহী তামাছিলু)
"আর সেই বাড়িতেই মূর্তি দিয়ে ঘেরা একটি পর্দা ছিল।"
হাদিসের আরবি ইবারত চেক করুন এই লিঙ্ক থেকে:
http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=61526
অর্থাৎ আমরা স্পষ্ট দেখছি যে, উক্ত হাদিসের আরবি ইবারতে পরিষ্কারভাবে تَمَاثِيلُ (তামাছিলু) শব্দ রয়েছে - যার সোজাসুজি অর্থ হল "মূর্তি"; আর এজন্য উক্ত হাদিস অনুসারে হযরত মুহাম্মাদের ঘরে মূর্তি থাকায় জিব্রাইল তার গৃহে প্রবেশ করতে পারেনি!
অর্থাৎ, মুহাম্মাদ তার ঘরে মূর্তি রেখে দিব্যি মূর্তিপূজা চালিয়ে যাচ্ছিল! ফলে জিব্রাইলও এমনকি তার ঘরে প্রবেশ করতে পারেনি এবং এমনকি কুরআন ৭৪:৫ আয়াত পর্যন্ত তাকে (মুহাম্মাদকে) সতর্ক করতে বাধ্য হয় মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করার জন্য!
এথেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, কুরআনের কিছু সুরা নাজিলের পরেও মুহাম্মাদ ছিলেন একজন মূর্তিপূজারী মুশরিক - যিনি শির্ক এর মত গোনাহে লিপ্ত হয়েছেন - যেখানে ইসলাম অনুযায়ীই শির্ক হল সবচেয়ে জঘন্য অমার্জনীয় অপরাধ! বাইবেলের কোন নবীই মূর্তিপূজায় লিপ্ত ছিলেন না। কিন্তু মুসলিমরা যাকে নবী বলেই শুধুই না, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী বলে বিশ্বাস করে তিনিই মূর্তিপূজায় লিপ্ত ছিলেন। হযরত মুহাম্মাদকে নবী বলে বিশ্বাস করা আর " কিলিয়ে কাঠাল পাকানো" কি একই জিনিস নয়? এ প্রশ্ন আমাদের সন্মানিত মুসলিম ভাইদের প্রতি রইল।
0 coment rios: