সংবাদ শিরোনাম
লোডিং...
Menu

Sunday, April 6, 2025

প্রচলিত ধর্মমতের বিরুদ্ধমতে প্রচার নিষিদ্ধ

ভূমিকাঃ-খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের ইতিহাসে বারবার দেখা গেছে—যখন মণ্ডলী বিশুদ্ধ শিক্ষার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তখন আত্মিক দুর্বলতা, বিভেদ ও বিভ্রান্তি তার পরিণতি হয়েছে। তাই প্রেরিতগণ ও প্রাচীন খ্রিষ্টীয় মণ্ডলীর নেতারা সদা সচেষ্ট ছিলেন যেন মণ্ডলীর ভিত মজবুত থাকে প্রভুর সত্যবাক্যে।

বাইবেল আমাদের সতর্ক করে, এমন অনেকেই থাকবে যারা খ্রিষ্টীয় শিক্ষার নামে ভিন্ন মতবাদ প্রচার করবে, বিভ্রান্ত করবে এবং মণ্ডলীতে ফাটল ধরাবে। এই লেখায় আমরা দেখব, কীভাবে পবিত্র শাস্ত্রে এই ধরনের ভ্রান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কতা ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসাথে, আমরা শিখব প্রেরিতদের মনোভাব এবং কীভাবে তারা সত্য রক্ষার জন্য সাহসের সঙ্গে অবস্থান নিয়েছিলেন।

খ্রিষ্টীয় শিক্ষার বিশুদ্ধতা রক্ষা এবং ভ্রান্ত বা বিপথগামী মতবাদ থেকে মণ্ডলীকে সতর্ক রাখা। নিচে সংক্ষেপে প্রতিটি অংশের সারাংশ তুলে ধরা হলো:প্রচলিত ধর্মমতের বিরুদ্ধমত ও প্রাচীন খ্রিষ্টীয় দৃষ্টিভঙ্গি

খ্রিষ্টীয় বিশ্বাস শুরু থেকেই শিক্ষার বিশুদ্ধতা ও সত্যতা রক্ষার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। যিশুর প্রেরিতরা এবং প্রাচীন মণ্ডলীর নেতারা সতর্ক ছিলেন যেন ভ্রান্ত মতবাদ ও বিভেদ সৃষ্টিকারী শিক্ষকেরা মণ্ডলীতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে। এই বিষয়ের উপর বাইবেল সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

ভ্রান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে কড়াকড়ি

পুরাতন নিয়মেই আমরা দেখি যে ঈশ্বর অন্য দেবতার অনুসরণ বা মিথ্যা নবীর প্ররোচনাকে কঠোরভাবে দমন করার নির্দেশ দিয়েছেন।

“তুমি যদি শুনিতে পাও যে, তোমার মধ্যে কেহ উঠিয়া এমন কথা বলিতেছে যাহাতে তোমরা অন্য ঈশ্বরের অনুসরণ কর...” (দ্বিতীয় বিবরণী ১৩ অধ্যায়)

নতুন নিয়মে আমরা দেখি, প্রেরিতেরা স্পষ্টভাবে বলেন:

“একজন বিভেদ সৃষ্টিকারী লোককে এক-দুই বার সতর্ক করার পর তার থেকে দূরে থাকো।” (তীত ৩:১০)

“যদি কেহ তোমাদের মধ্যে এসে এই শিক্ষা না আনে, তবে তাকে গৃহে গ্রহণ করো না, এমনকি তাকে ‘স্বাগতম’ বলো না।” (২ যোহন ১০)

প্রাচীন খ্রিষ্টীয় মণ্ডলীতে ভ্রান্ত শিক্ষকেরা

প্রথম শতকের খ্রিষ্টীয় মণ্ডলীতে কিছু লোক এমন শিক্ষা প্রচার করছিল যা প্রেরিতদের শিক্ষা থেকে বিচ্যুত ছিল। তারা প্রেরিতদের নামে কথা বলত, অথচ সত্য প্রচার করত না।

“কিছু লোক আমাদের অনুমতি ছাড়া তোমাদের মধ্যে গিয়ে তোমাদের কথা বিঘ্নিত করেছে।” (প্রেরিত ১৫:২৪)

“তারা অন্য যীশুকে প্রচার করে, ভিন্ন আত্মাকে গ্রহণ করাও হয়, এমনকি অন্য সুসমাচারও।” (২ করিন্থীয় ১১:৪)

পিতর ও যিহূদা কড়াভাবে এদের সম্পর্কে সতর্ক করেন:

“মিথ্যা নবীরা তোমাদের মধ্যেও থাকবে, যারা ধ্বংসাত্মক মতবাদ গোপনে প্রবেশ করাবে।” (২ পিতর ২:১)

“তারা ঈশ্বরের অনুগ্রহকে অবাধ্যতার অজুহাত বানিয়ে দেয়।” (যিহূদা ৪)

সত্য প্রচারকারীদের উপর দোষারোপ

যারা খ্রিষ্টের সত্য প্রচার করছিলেন, যেমন প্রেরিত পৌল ও সীল, তাদেরও লোকেরা ভুলভাবে অভিযুক্ত করেছিল।

“এই লোকেরা আমাদের নগরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে… তারা এমন নিয়ম প্রচার করে যা রোমীয়দের মানা উচিত নয়।” (প্রেরিত ১৬:২০-২১)

তবে পৌল নিজেকে স্পষ্টভাবে নির্দোষ প্রমাণ করেন এবং বলেন:

“তারা আমাকে কোনো অপরাধে দোষী প্রমাণ করতে পারবে না… আমি যা বিশ্বাস করি, তা আইন ও নবীদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।” (প্রেরিত ২৪:১৩-১৬)

প্রচলিত মতবাদের বিরুদ্ধ মতকে শুধু সহ্য না করে, বরং যথাযথভাবে প্রতিরোধ করাই ছিল প্রাচীন খ্রিষ্টীয় মণ্ডলীর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সত্য ও বিশুদ্ধতা রক্ষায় তাঁরা আপোষ করেননি। আজও, এই শিক্ষা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে বিশ্বাসের জন্য "একবারেই যে বিশ্বাস সাধুদের কাছে অর্পিত হয়েছিল" — তার জন্য আমাদের দৃঢ়ভাবে সংগ্রাম করতে হবে (যিহূদা ৩)।

উপসংহারঃ-খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের ভিত্তি হচ্ছে সেই সত্য যা প্রেরিতদের মাধ্যমে একবারেই সাধুদের কাছে অর্পিত হয়েছিল। এই সত্যের বিপরীতে যেকোনো বিকৃত শিক্ষা বা বিভ্রান্তিমূলক মতবাদ মণ্ডলীর একতা, পবিত্রতা ও আত্মিক সুস্থতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

পবিত্র শাস্ত্র আমাদের আহ্বান জানায়— যেন আমরা এমন মতবাদ থেকে দূরে থাকি, বিভেদ সৃষ্টিকারীদের সতর্ক করি এবং প্রয়োজন হলে তাদের পরিহার করি। একইসাথে, যারা সত্য প্রচার করে, তাদেরকে ভুলভাবে অভিযুক্ত করা হলেও আমরা যেন সাহস ও নম্রতার সঙ্গে সত্যে অবিচল থাকি।

আজকের যুগেও মণ্ডলীর মধ্যে সত্য ও বিভ্রান্তির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য আত্মিক বিচক্ষণতা ও শাস্ত্রীয় ভিত্তি প্রয়োজন। আসুন, আমরা সেই প্রাচীন বিশ্বাসকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করি এবং ভ্রান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের বাক্যের আলোকে সতর্ক থাকি।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: