সংবাদ শিরোনাম
লোডিং...
Menu

Tuesday, December 31, 2024

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কি কোন ধর্ম প্রচার করতে আসেন নি?

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কি কোন ধর্ম প্রচার করতে আসেন নি?


লেখক: পাষ্টর জনসন সরকার।

ইদানিং কিছু খ্রীষ্টান প্রচারকেরা বলে বেড়াচ্ছেন, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট  কোন ধর্ম প্রচার করতে আসেন নি। 
তাদের এই ভ্রান্ত প্রচারে অধিকাংশ সাধারন বিশ্বাসিরা একমত পোষণ করছেন। 

যারা এমন প্রচার করেন তারা মূলত "ধর্ম" শব্দের অর্থই জানেন না।  ক্যেমব্রিজ ডিকশোনারি অনুসারে ধর্মের সংগা হলো: 

the belief in and worship of a god or gods, or any such system of belief and worship:১

অর্থ ঈশ্বরে বিশ্বাস এবং ঈশ্বরের উপাসনার নিয়ম হলো ধর্ম। 

এখন আপনি চিন্তা করুন ত!  যারা বলে বেড়াচ্ছে,
প্রভু যীশু খ্রীষ্ট  কোন ধর্ম প্রচার করতে আসেন নি।  এরা কতটা মূর্খ। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কি মানুষকে সত্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে শেখান নি? তিনি কি সত্য ঈশ্বরকে উপাসনা করার বিষয়ে শিক্ষা দেন নি?

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তার অনুসারিদের শিখিয়েছেন, 
সত্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে : উদাহরন স্বরূপ যোহন ১৭:৩;
"আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়। "

এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট শিখিয়েছেন,  কিভাবে ঈশ্বরের  উপাসনা করতে হবে:উদাহরন স্বরূপ যোহন ৪:২৪;  ঈশ্বর আত্মা; আর যাহারা তাঁহার ভজনা করে, তাহাদিগকে আত্মায় ও সত্যে ভজনা করিতে হইবে। 

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট সত্য ঈশ্বরে বিশ্বাস এবং তাঁর উপাসনার বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন অর্থাৎ তিনি ধর্ম প্রচার করেছেন। 

এথেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যারা বলে বেড়ায়, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট  কোন ধর্ম প্রচার করতে আসেন নি এরা মূর্খ এবং ভ্রান্ত প্রচারক ছাড়া কিছু না। কারন সয়ং পবিত্র বাইবেলেই ধর্মের সংগা দেওয়া আছে:  যাকোব ১:২৭; ক্লেশাপন্ন পিতৃমাতৃহীনদের ও বিধবাদের তত্ত্বাবধান করা, এবং সংসার হইতে আপনাকে নিষ্কলঙ্করূপে রক্ষা করাই পিতা ঈশ্বরের কাছে শুচি ও বিমল ধর্ম।

-------------------------------
১.https://dictionary.cambridge.org/dictionary/english/religion

Sunday, December 29, 2024

মূর্তিপূজার ব্যাপারে স্ববিরোধী হিন্দুধর্ম

মূর্তিপূজার ব্যাপারে স্ববিরোধী হিন্দুধর্ম

শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৮৪/১৩ শ্লোকটি যাঁরা পবিত্র তীর্থস্থান, দেবদেবী, গুরু বা ধর্মগ্রন্থের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন, তাঁদের বিষয়ে কথা বলছে।

অনুবাদে বোঝানো হয়েছে: যাঁরা দেবতাকে শুধুমাত্র পাথর বা মাটির মূর্তি বলে মনে করেন, গুরু বা আচার্যকে সাধারণ মানুষ বলে গণ্য করেন, এবং পবিত্র তীর্থস্থানকে শুধুমাত্র জল বা পাথরের উৎস হিসেবে দেখেন, তাঁরা প্রকৃত ধর্মবুদ্ধিহীন। তারা আধ্যাত্মিকতার প্রকৃত তাৎপর্য বুঝতে অক্ষম।
হিন্দু ধর্মে মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ।

হিন্দু ধর্মে মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ।

আর্যসমাজীদের অনুবাদে মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ পাওয়া যায়। আসুন দেখে আসি। মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে আর্যসমাজীরা কী অনুবাদ করেছে এবং কী যুক্তি দিচ্ছে।

আর্যসমাজের অনুবাদ: Dr. Tulsi Ram M.A., Ph.D. (London, U.K.)
(Professor, Administrator, Researcher and Writer)
সারাংশ:-(With Original Sanskrit Text, Transliteration &
Lucid English Translation in the Aarsh Tradition
of Maharshi Yaska and Swami Dayananda)
প্রকাশনী:-Sanskrit Text as per publication of
Paropakarini Sabha, Ajmer

যজুর্বেদ বলছে,

মূর্তিপূজার ব্যাপারে স্ববিরোধী হিন্দুধর্ম

न तस्य प्रतिमा अस्ति यस्य नाम महद्यशः । हिरण्यगर्भ इत्येषः । मा मा हिँसीदित्येषा । यस्मान्न जात इत्येष ॥३॥

ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহাদস্যঃ।হিরন্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষা যস্মান্ন জাত ইতেষ্যঃ।

There is none and nothing like Him, no picture,
no icon, no simile, no metaphor. Great is His Name,
mighty His glory. “He is the Golden Seed of the
universe”, it is apparent. “No, no, do not kill me, do not
punish, I pray”, such is the prayer of humanity to Him.
“No one ever born is greater than He or beyond Him”,
such is clearly the voice of the Veda.

তারঁ মতো কেউ এবং কোনো কিছু নাই, ছবি নেই,প্রতিকৃতি/মূর্তি নেই,উপমা নেই,রূপক নেই।তারঁ নাম মহিমান্বিত,তাকে মহান করে।তিনি বিশ্বের সোনালী বীজ।এটা স্পষ্ট প্রকাশ্য-না,আপনি আমাকে মারবেন না,শাস্তিও দিবেন না,আমি প্রার্থনা করি।এটা মানবতার প্রার্থনা তার নিকটস্বরূপ।কেউ তারঁ মতো মহানভাবে জন্মায়নি কিংবা তারঁ পরে।এটাই বেদে পরিষ্কারস্বরূপ বাণী বা স্বর।[4]

যজুর্বেদে আরও আছেঃ[5]

মূর্তিপূজার ব্যাপারে স্ববিরোধী হিন্দুধর্ম

अन्धं तमः प्र विशन्ति ये संभूतिमुपासते । ततो भूय इव ते तमो य उ संभूत्याँ रताः ॥९॥

অন্ধং তমঃ প্রবিশান্তি যেহসংভূতি মুপাস্তে।ততো ভূয় ইব তে তমো য উ সম্মূত্যাং রতা

Down into the darkest dark do they fall who
worship only the primordial prakriti. Still deeper and
darker do they fall who worship only the existential
forms and are lost therein.

তারা অন্ধকারচ্ছন্ন অন্ধকারে প্রবেশ করে যারা মৌলিক প্রাকৃতিক এর উপাসনা করে।তারা আরও বেশি গভীর অন্ধকারে প্রবেশ করে যারা অস্তুিত্ব্যমান আকৃতি ও বিলুপ্তপ্রায় বস্তর উপাসনা
করে।

संभवादन्यदाहुर्शंभवात् । इति शुश्रुम धीराणां ये नस्तद्विचचक्षिरे ॥१०॥

অন্যদেবাহুঃ সম্ভবাদন্যদাহুরসম্ভাবাৎ ইতি শুশ্রুম ধীরানং যে নস্তদ্বিচচক্ষিরে

Different is the result, they say, from primordial
prakriti, and different is the result, they say, from the existential forms. This have we heard from the Wise
who revealed it to us.

ফলাফল ভিন্নতা,তারা বলেন-মৌলিক প্রাকৃতিক ভিন্ন ফলস্বরূপ।তারা বলেন অস্তুিত্ব্যমান আকৃতির ফলও ভিন্নস্বরূপ।এটা আমরা শুনেছি জ্ঞানীর নিকট হইতে যিনি আমাদের ওপর প্রত্যাদেশ/বিধান নাজিল করেছেন।

Note key point

১.মৌলিক প্রাকৃতিক;যেমন:-আগুন,পানি,পাথর, সূর্য,গাছ ইত্যাদি।

২.অস্তিত্বমান আকৃতি ও বিলুপ্তপ্রায় বস্ত।যেমন:-মানুষ,জীবজন্তু, মূর্তি ইত্যাদি আকাররূপে অস্তুিত্ব্য বিরাজমান এবং ক্ষয়ে বিলুপ্ত হয়।

প্রকৃতির বস্তু ও মানুষের তৈরি মূর্তিপূজা করে তারা তার অন্ধকারে নিমজ্জিত এহেন দুস্ট বা খারাপ কাজ যা আর্যসমাজের বেদের অনুবাদবিরোধী। দুষ্ট বা খারাপ কাজ করলে নরক ভোগ করতে হবে।

অর্থববেদে রয়েছে,[6]

अतीव यो मरुतो मन्यते नो ब्रह्म वा यो निन्दिषत्क्रियमाणम् । तपूंषि तस्मै वृजिनानि सन्तु ब्रह्मद्विषं द्यौरभिसंतपाति ॥६॥

অতীব য়ো মারুতো মান্যতে ন ব্রহ্ম বৈ য়ো নিদিশতক্রিয়ামানম্। তপুংসী তস্মাই ব্রজিনানি সন্তু ব্রহ্মদ্বিষম দ্বৈরভিসন্তপতি
6. Whoever either scorns us, O ye Maruts, or blames devotion which we now are paying. Let his own wicked deeds be fires to burn him. May Heaven consume the man who hates devotion.[7]

হে মরুৎ যে কেউ আমাদের অবজ্ঞা করে, আমরা তার ভক্তির নিন্দা করি। তার নিজের দুষ্ট কাজের জন্য নরকে জ্বলতে হবে।স্বর্গ সেই লোকের তুচ্ছ যে ভক্তিকে তুচ্ছ করে।

এবার দেখি ভাগবতপুরাণে[8] কি বলাঃ

মূর্তিপূজার ব্যাপারে স্ববিরোধী হিন্দুধর্ম

यस्यात्नबुद्धि की कुणपे त्रिधातुके
स्वाधि कलत्रादिषु भौम इजधि:
जतिथबुद्धि सलिले न कचिचि
ज्ञानेश्वभिज्ञेषु स च गोखर |

যস্যাত্নবুদ্ধির কুনপে ত্রিধাতুকে
স্বধী কলত্রাদিষু ভৌম ইজধীঃ
যতীথবুদ্ধি সলিলে ন কহিচি
জ্জনেষ্বভিজ্ঞেষু স এব গোখর।

যাহারা বাতপিত্ত কৃষ্ণময় এই শবতুল্য দেহকে পরমাপ্রেমাষ্পদ আত্না,স্ত্রীপুত্রাদিকে আত্নীয়, পার্থিব(দুনিয়া) প্রতিমাদিগকে পূজনীয় দেবতা এবং নদ্যাস্থিত জলকে তীর্থ বলিয়া গন্য করে কিন্ত ভগবৎ তত্বের সাধুগনের তাদৃশ মনে করেন না,তাহারা গো গর্দ্দভ সাধধম্ম্যর্হেতু গো এবং গর্দ্দভ পদবাচ্য অত্থবা গরুর ভারবাহী গদ্দর্ভ।

(চলিত ভাষা)- যারা বাতপিত্ত কৃষ্ণময় এই লাশদেহকে পরমভাবে ভালোবাসে,স্ত্রী পুত্রদের, আত্নীয়কে,দুনিয়াতে মূর্তিগুলোকে পূজা করা দেবতা এবং নদীর থাকা পানিকে পূন্য মনে করে কিন্ত তারা ভগবানের দেয়া জ্ঞানে সাধুদের সমতুল্য হতে পারে না। তারা গরু গাধা ধর্মমতে এবং গরু ও গাধা নামে পরিচিত অথবা গরুর ভারবহনকারী গাড়ির গাধার মতো।

অতএব, মূর্তিপূজারী সনাতনীরা গরু ও গাধা বলে প্রমানিত।

Reference :

⇧1 কৃষ্ণ যজুর্বেদ ২/৪/১২
⇧2 শুক্লযজুর্বেদ ১৩/৪০-৪১
⇧3 কৃষ্ণ যজুর্বেদ ৪/৬/১১
⇧4 শুক্ল যজুর্বেদ (White Yajur Veda) ২৩/৩
⇧5 শুক্ল যর্জুবেদ ৪০/৯-১০
⇧6 অথর্ববেদ ২/১২/৬

Thursday, December 26, 2024

ভগবতগীতা ১৮:৬৬ শ্লোক অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ কি একমাত্র পরিত্রাণদাতা/মুক্তিদাতা? (ইস্কন সম্প্রদায়ের মতবাদের সমীক্ষা)

ভগবতগীতা ১৮:৬৬ শ্লোক অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ কি একমাত্র পরিত্রাণদাতা/মুক্তিদাতা? (ইস্কন সম্প্রদায়ের মতবাদের সমীক্ষা)

 


উক্ত শ্লোক অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ পরিত্রাণদাতা বা মুক্তিদাতা নয়, বরং সদগুরু বা আধ্যাত্মিক শিক্ষক। আসুন প্রথমে আমরা শ্লোকটি দেখে নিই। এখানে আমরা 'আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ' (ইস্কন) এর ভগবতগীতার অনুবাদ ব্যবহার করছি। কারণ তারাই মূলত আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে ব্যাপক হারে প্রচার করে যে, একমাত্র কৃষ্ণই হলেন মুক্তিদাতা! ভগবতগীতা ১৮ অধ্যায়ের ৬৬ নং শ্লোক বলছে, সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ৷ অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ৷৷ বঙ্গানুবাদ - "সর্ব প্রকার ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল আমার শ্বরণাগত হও। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব। তুমি শোক করো না।" (শ্রীমদ্ভগবতগীতা যথাযথ, ১৮:৬৬) ইস্কনের দাবি হল, উক্ত শ্লোকের মাধ্যমে পৃথিবীর সকলকে জানানো হচ্ছে যে, একমাত্র কৃষ্ণই হলেন পরিত্রাণ বা মোক্ষ বা মুক্তি-দাতা। কিন্তু এই দাবিটি সঠিক নয়। আমরা বিষয়টিকে ভগবতগীতা থেকেই দেখব কেন দাবিটি সঠিক নয়। উক্ত শ্লোককে আমরা প্রধান তিনটি অংশে ভাগ করতে পারিঃ 

 ১) সর্ব প্রকার ধর্ম পরিত্যাগ করে,
 ২) কেবল আমার শ্বরণাগত হও,
 ৩) আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব।

⛔ ১) প্রথম অংশটি হল, "সর্ব প্রকার ধর্ম পরিত্যাগ করে"; এখানে "ধর্ম" বলতে হিন্দু ধর্ম, ইসলাম ধর্ম, খ্রিস্টান ধর্ম এসব কিছুই বোঝানো হয়নি! বরং এখানে "ধর্ম" বলতে মূলত "কর্ম"-কে বোঝানো হয়েছে। এই একই ১৮ অধ্যায়ের ৪৭ থেকে ৪৮ নং শ্লোকেই আমরা দেখতে পাব যে, "স্বধর্ম" বলতে স্বভাবজাত "কর্ম"-কে বোঝানো হয়েছেঃ শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ৷ স্বভাবনিয়তং কর্ম কুর্বন্নাপ্নোতি কিল্বিষম্৷৷ বঙ্গানুবাদ - "উত্তম রূপে অনুষ্ঠিত পরধর্ম অপেক্ষা অসম্যক রূপে অনুষ্ঠিত স্বধর্মই শ্রেয়। মানুষ স্বভাব-বিহিত কর্ম করে কোন পাপ প্রাপ্ত হয় না।" (শ্রীমদ্ভগবতগীতা যথাযথ, ১৮:৪৭) খেয়াল করুন, এখানে স্ব-ধর্ম কী? 

 "স্বভাবনিয়তং কর্ম"; অর্থাৎ স্বভাব অনুসারে কর্ম। ঠিক পরের ৪৮ নং শ্লোকে আরও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সহজং কর্ম কৌন্তেয় সদোষমপি ন ত্যজেৎ৷ সর্বারম্ভা হি দোষেণ ধূমেনাগ্নিরিবাবৃতাঃ৷৷ বঙ্গানুবাদ - "হে কৌন্তেয়! সহজাত কর্ম দোষযুক্ত হলেও ত্যাগ করা উচিত নয়। যেহেতু অগ্নি যেমন ধূমের দ্বারা আবৃত থাকে, তেমনই সমস্ত কর্মই দোষের দ্বারা আবৃত থাকে।" (শ্রীমদ্ভগবতগীতা যথাযথ, ১৮:৪৮) এখানে স্পষ্টই স্ব-ধর্ম বলতে "সহজং কর্ম" বা, "সহজাত কর্ম"-কে বোঝানো হয়েছে। 

 সুতরাং, যখন ভগবতগীতা ১৮:৬৬ শ্লোকে বলা হচ্ছে "সর্ব প্রকার ধর্ম পরিত্যাগ করে", তখন এখানে "সহজাত কর্ম" বা "স্বভাবজাত কর্ম"-কে পরিত্যাগ করার কথা বলা হচ্ছে! কোনো হিন্দু ধর্ম, ইসলাম ধর্ম, খ্রিস্টান ধর্ম ইত্যাদি কোনো ধর্মের কথাই বলা হচ্ছে না। . . 

⛔ দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অংশটি ছিলঃ "কেবল আমার শ্বরণাগত হও। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব।" (ভগবতগীতা ১৮:৬৬) প্রথমে তৃতীয় অংশটি গুরুত্বপূর্ণ - "আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব।" এখানে পাপ থেকে মুক্ত করার অর্থ কি এই যে, শ্রীকৃষ্ণ তার পাপ তুলে নেবেন যে তার শরণ বা আশ্রয়ে আসবেন? উত্তর হল - না! দেখুন শ্রীকৃষ্ণ নিজেই আমাদের জানাচ্ছেন যে, তিনি কারও পাপ বা পুণ্য কিছুই তুলে নেবেন না! নাদত্তে কস্যচিৎ পাপং ন চৈব সুকৃতং বিভুঃ৷ অজ্ঞানেনাবৃতং জ্ঞানং তেন মুহ্যন্তি জন্তবঃ৷৷ বঙ্গানুবাদ - "পরমেশ্বর ভগবান জীবের পাপ এবং পুণ্য কিছুই গ্রহণ করেন না। অজ্ঞানের দ্বারা প্রকৃত জ্ঞান আবৃত হওয়ার ফলে জীবসমূহ মোহাচ্ছন্ন হয়ে থাকে।" (শ্রীমদ্ভগবতগীতা যথাযথ, ৫:১৫) উক্ত শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণকে সরাসরি "পরমেশ্বর ভগবান" বলা হয়নি। কিন্তু যদি তাকেই ইস্কনের দাবি অনুসারে ভগবান হিসেবে ধরে নেওয়া হয়, তবে এখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে 

"নাদত্তে কস্যচিৎ পাপং"; অর্থাৎ "কারও পাপ গ্রহণ করেন না"। অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের নিজের বক্তব্য অনুসারেই, তিনি কারও পাপ তুলে নিতে পারবেন না! আর যারা দাবি করবে যে, কৃষ্ণ নাম জপ করলেই পাপ মুছে যাবে বা, কৃষ্ণ পাপ তুলে নেবেন বা মুছে দেবেন, তাদের কৃষ্ণ নিজেই উক্ত শ্লোকে বলছেন যে, তারা হল "অজ্ঞানী" - "অজ্ঞানেনাবৃতং" (অজ্ঞানের দ্বারা আবৃত)!

 অর্থাৎ, যখন কৃষ্ণ বলছেন "আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব", তখন এর অর্থ পাপ তুলে নেওয়া বা, পাপ মুছে দেওয়া নয়; বরং এর অর্থ অন্য কিছু। কী সেই অর্থ? এটা জানতে আমাদের এবার দ্বিতীয় অংশটিকে দেখতে হবে যেখানে বলা হচ্ছিলঃ "কেবল আমার শ্বরণাগত হও" (ভগবতগীতা ১৮:৬৬) এই "শ্বরণাগত" হওয়ার বিষয়টি আমাদের পরিষ্কার দেখিয়ে দিচ্ছে, পাপ থেকে মুক্ত করার অর্থ কী! আর এই "শ্বরণাগত" এর অর্থ হল, কৃষ্ণ এখানে সদ্-গুরু আর তিনি অর্জুনকে নির্দেশ দিচ্ছেন অন্য সকল স্বভাবজাত কর্ম ছেড়ে কেবল তার (কৃষ্ণের) নির্দেশ মত চলতে। আসুন ভগবতগীতা থেকেই আমরা এর প্রমাণ দেখি! শ্রীকৃষ্ণ নিজেই সদ্-গুরু বিষয়ে বলছেনঃ তদ্ বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া৷ উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদর্শিনঃ৷৷ বঙ্গানুবাদ - "সদগুরুর শরণাগত হয়ে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার চেষ্টা কর। বিনম্র চিত্তে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কর এবং অকৃত্রিম সেবার দ্বারা তাঁকে সন্তুষ্ট কর। তা হলে সেই তত্ত্বদ্রষ্টা পুরুষেরা তোমাকে জ্ঞান উপদেশ দান করবেন।" (শ্রীমদ্ভগবতগীতা যথাযথ, ৪:৩৪) অর্থাৎ সদগুরুর নিকট নিয়ে বিনম্র চিত্তে প্রশ্ন করতে হবে তত্ত্বজ্ঞান জানার জন্য। আর অর্জুন ঠিক এই কাজটাই করেছে কৃষ্ণের ক্ষেত্রে - যা প্রমাণ করে, কৃষ্ণ এখানে অর্জুনের সদগুরুর ভূমিকা পালন করছেন। এর প্রমাণ আমরা এই ১৮ অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকেই দেখতে পাই যেখানে বলা হয়েছেঃ অর্জুন উবাচ সন্ন্যাসস্য মহাবাহো তত্ত্বমিচ্ছামি বেদিতুম্৷ ত্যাগস্য চ হৃষীকেশ পৃথক্কেশিনিসূদন৷৷ বঙ্গানুবাদ - "অর্জুন বললেন - হে মহাবাহো! হে হৃষীকেশ! হে কেশিনিসূদন! আমি সন্ন্যাস ও ত্যাগের তত্ত্ব পৃথকভাবে জানতে ইচ্ছা করি।" (শ্রীমদ্ভগবতগীতা যথাযথ, ১৮:১)

 খেয়াল করুন, এখানে গীতা ১৮:১ শ্লোকে অর্জুন বিনম্র চিত্তে কৃষ্ণকে প্রশ্ন করছেন তত্ত্বজ্ঞান জানার জন্য। সুতরাং গীতা ৪:৩৪ এর মানদণ্ড অনুযায়ী কৃষ্ণ এখানে অর্জুনের সদগুরু। সেক্ষেত্রে ভারতীয় রীতিতে সদগুরু যেভাবে বলবে, শিষ্যকে সেভাবেই চলতে হবে। শিষ্য নিজের মত নিয়মে চলবে না! বরং সদগুরু যা যা নির্দেশ দেবেন, শিষ্য ঠিক তাই তাই করবেন! আর ঠিক এটাই কৃষ্ণ সদগুরু হিসেবে তার শরণে আসা শিষ্য অর্জুনকে বলছেন যে, "সর্ব প্রকার ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল আমার শ্বরণাগত হও"; যার সহজ অর্থ হল, 'তোমার সকল স্বভাবজাত কর্ম ছেড়ে দিয়ে এবার আমি তোমাকে যেভাবে যেভাবে যা যা করতে বলছি, সেভাবে সেভাবে সেগুলো করো। কারণ আমি এখন তোমার সদগুরু। একারণে অর্জুন, তুমি আমার দেখানো নির্দেশ মত সবকিছু করো, তবে তুমি পাপ কর্ম থেকে দূরে থাকবে। তুমি এটা নিয়ে কোনো চিন্তা কোরো না যে, আমি পাপে জড়িয়ে পড়ব কিনা! বরং আমার কথা মত সবকিছু করলে তুমি পাপ কর্ম থেকে দূরে থাকবে!' আর ভগবতগীতা ১৮:৬৬ শ্লোকের "পাপ থেকে মুক্ত" করার তৎপর্য হল এটাই যে, সদগুরু হিসেবে অর্জুন যদি কৃষ্ণের কথামত চলে, তবে অর্জুন আর পাপ কর্মে জড়াবেন না, বরং পাপ কর্ম থেকে দূরে থাকবেন, কারণ কৃষ্ণ তখন সদগুরু হিসেবে অর্জুনকে পথ নির্দেশ দিতে থাকবেন! মনে রাখা জরুরি যে, "পাপ থেকে মুক্ত" করার অর্থ অর্জুনের আগের পাপ মুছে দেওয়া নয়, কারণ কৃষ্ণ নিজেই ভগবতগীতা ৫:১৫ শ্লোকে বলেছেন যে, ভগবান কারও পাপ গ্রহণ করেন না (যা আমরা উপরে আলোচনা করেছি)। তাই আপনার পূর্বের সকল পাপ আপনারই থেকে যাবে! আর আবারও উল্লেখ্য যে, যারা মনে করে যে, কৃষ্ণ নাম জপ করলেই পাপ মুছে যাবে বা, কৃষ্ণ পাপ তুলে নেবেন বা মুছে দেবেন, তাদেরকে কৃষ্ণ নিজেই উক্ত শ্লোকে (ভগবতগীতা ৫:১৫ শ্লোকে) বলছেন যে, তারা হল "অজ্ঞানী" - "অজ্ঞানেনাবৃতং" (অজ্ঞানের দ্বারা আবৃত)! . . 

⛔ একারণে পূর্বকৃত পাপ যখন কৃষ্ণ তুলে নেবেন না, তখন আপনার সকল পাপ আপনারই থেকে যাবে। আর তাই এই পাপ থেকে উদ্ধার পেয়ে মুক্তি বা মোক্ষ বা পরিত্রাণ লাভের জন্য শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে বাদ দিয়ে অন্য এক ঈশ্বরের শরণাগত হতে বলেছেন। এ সম্পর্কে ভগবতগীতা ১৮:৬২ শ্লোকে বলা হয়েছেঃ তমেব শরণং গচ্ছ সর্বভাবেন ভারত৷ তৎপ্রসাদাৎ পরাং শান্তিং স্থানং প্রাপ্স্যসি শাশ্বতম্৷৷ বঙ্গানুবাদ - "হে ভারত, সর্বতোভাবে তাঁর শরণাগত হও। তাঁর প্রসাদে তুমি পরা শান্তি এবং নিত্য ধাম প্রাপ্ত হবে।" (শ্রীমদ্ভগবতগীতা যথাযথ, ১৮:৬২) এখানে উক্ত শ্লোকের সংস্কৃততে "তমেব শরণং" রয়েছে যার অর্থ "তাঁর শরণ" বা, "তাঁর আশ্রয়"। এখানে কৃষ্ণ বলেন নি যে, আমার শরণে এসো; বরং বলেছেন, 'তাঁর শরণে যাও'! অর্থাৎ, এখানে কৃষ্ণ নিজেকে বাদ দিয়ে অন্য এক ঈশ্বরের আশ্রয় গ্রহণ করতে বলেছেন! আর এর মাধ্যমে কী হবে? "প্রাপ্স্যসি শাশ্বতম্"; অর্থাৎ "নিত্য ধাম প্রাপ্ত হবে"। আর 'নিত্য ধাম' এর অর্থ হল 'মোক্ষ লাভ' বা 'মুক্তি লাভ' বা 'পরিত্রাণ লাভ' করা।

অর্থাৎ কৃষ্ণ নিজেকে বাদ দিয়ে অন্য একজন ঈশ্বরের আশ্রয় গ্রহণ করতে বলছেন, যাঁর আশ্রয়ে গেলে মুক্তি বা পরিত্রাণ লাভ করা যাবে! 

 কে তিনি? 🙏 তিনিই হলেন প্রভু যীশু খ্রিস্ট! যিনিই একমাত্র মানবজাতির পাপকে নিজের ওপর তুলে নিয়েছেন, যাতে তাঁকে বিশ্বাস করার মাধ্যমে আপনি আমি মুক্তি বা পরিত্রাণ লাভ করতে পারি! 🙏 বাইবেল আমাদেরকে এই মুক্তি বা পরিত্রাণের সুসংবাদ এভাবে জানাচ্ছে, 

  "এই সুসমাচারের দ্বারা তোমরা পরিত্রাণ পেয়েছ,  ...অন্যথায়, তোমরা বৃথাই বিশ্বাস করেছ।  শাস্ত্র অনুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন,  তিনি সমাধিপ্রাপ্ত হয়েছেন ও  শাস্ত্র অনুসারেই তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হয়েছেন" (১করিন্থীয় ১৫:২-৪ (BCV))

 অর্থাৎ, প্রভু যীশু খ্রিস্ট যিনি স্বয়ং ঈশ্বর, তিনি মনুষ্য রূপে পৃথিবীতে এলেন, আমাদের পাপকে নিজের ওপর তুলে নিয়ে ক্রুশে বলিদান হলেন এবং মৃত্যুর তিন দিন পর পুনরায় মৃত থেকে জীবিত হয়ে প্রমাণ দিলেন যে, তিনিই একমাত্র মৃত্যুঞ্জয়ী ঈশ্বর! 

 তাই আজ যদি আপনি বিশ্বাস করেন যে, প্রভু যীশু খ্রিস্ট আপনার পাপকে নিজের ওপর তুলে নিয়েছেন, তবে আপনি এই জন্মেই মুক্তি বা পরিত্রাণ লাভ করবেন! একারণে খ্রিস্টের শিষ্য পিতর ঈশ্বরের আত্মায় চালিত হয়ে বলেছিলেন, আকাশের নীচে, মনুষ্যদের মধ্যে যীশু নাম ব্যতীত অন্য কোনো নাম নেই, যে নামে কেউ মুক্তি বা পরিত্রাণ লাভ করতে পারে! (প্রেরিত ৪:১২ দ্রষ্টব্য)! . . -

Thursday, December 19, 2024

বড়দিন কি?

বড়দিন কি?

বড়দিন (Christmas) খ্রিস্টধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় উৎসবগুলোর মধ্যে একটি। এটি যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে পালিত হয় এবং প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এবং অনেক অখ্রিস্টান মানুষও উদযাপন করেন।

উৎসবের উৎপত্তি
বড়দিন উদযাপনের শুরু হয়েছিল খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে। যদিও বাইবেলে যিশু খ্রিস্টের জন্মতারিখ উল্লেখ নেই, তবে ২৫ ডিসেম্বরকে তাঁর জন্মদিন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ঐতিহাসিকভাবে, এই দিনটি রোমানদের প্যাগান উৎসব 'সোল ইনভিক্টাস' বা "অজেয় সূর্যদেবতা"র সঙ্গে যুক্ত ছিল, যা পরে খ্রিস্টধর্মের প্রভাবের ফলে যিশুর জন্মোৎসব হিসেবে পালিত হতে শুরু করে।

বড়দিনের মূল অর্থ
খ্রিস্টানদের কাছে বড়দিন কেবল একটি উৎসব নয়, এটি একটি ধর্মীয় আধ্যাত্মিক বিষয়। এটি পৃথিবীতে যিশু খ্রিস্টের আগমনকে স্মরণ করায়, যাঁকে খ্রিস্টানরা তাঁদের ত্রাণকর্তা এবং ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে মানেন। যিশুর জন্ম মানবজাতির জন্য প্রেম, শান্তি, ক্ষমা এবং মুক্তির বার্তা বহন করে।

বড়দিনের উদযাপন
বিশ্বজুড়ে বড়দিন বিভিন্ন রকমভাবে উদযাপিত হয়। এর মধ্যে কিছু সাধারণ ঐতিহ্য হলো:

1. গির্জায় প্রার্থনা: বড়দিনের দিন বিশেষ প্রার্থনা বা মিসা অনুষ্ঠিত হয়। এটি যিশুর জন্ম উপলক্ষে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো এবং তাঁর শিক্ষার স্মরণে উদযাপন করা হয়।

2. ক্রিসমাস ট্রি সাজানো: ক্রিসমাস ট্রি বড়দিনের অন্যতম প্রধান প্রতীক। এটি আলো, সজ্জা এবং তারা দিয়ে সাজানো হয়, যা খ্রিস্টের আলো ও জীবনের প্রতীক।

3. উপহার বিনিময়: যিশুর প্রতি জ্ঞানের উপহারস্বরূপ মাঘীদের (Magi) উপহার দেয়ার কাহিনির স্মরণে বড়দিনে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের মধ্যে উপহার বিনিময় করা হয়।

4. গান ও ক্যারল: বড়দিনে বিশেষ গান বা ক্যারল গাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে, যা যিশুর জন্ম এবং তাঁর শিক্ষা নিয়ে রচিত।

5. খাবার ও ভোজ: বড়দিনে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন দেশে এর ধরণ ভিন্ন হলেও, এটি পরিবারের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার একটি বিশেষ মুহূর্ত।

বড়দিনের প্রতীক
বড়দিনে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রতীক রয়েছে, যেগুলোর ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে:

ক্রিসমাস ট্রি: চিরসবুজ গাছ, যা জীবনের চিরন্তনত্বের প্রতীক।

স্টার (তারা): বেতলেহেমের তারা, যা জ্ঞানীদের যিশুর জন্মস্থানে পথ দেখিয়েছিল।

জিংগেল বেলস: আনন্দ এবং উৎসবের সুরের প্রতীক।

সান্তা ক্লজ: মূলত সেন্ট নিকোলাসের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, যিনি দরিদ্র শিশুদের জন্য উপহার দিয়ে তাদের মুখে হাসি এনে দিতেন।

পরিশেষে 
বড়দিন কেবল যিশুর জন্ম উদযাপনের দিন নয়, এটি প্রেম, আশা এবং শান্তির বার্তা বহন করে। এটি মানুষকে অন্যের প্রতি দয়া, সহানুভূতি এবং ঐক্যবদ্ধতার শিক্ষা দেয়। ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক উৎসবের সমন্বয়ে বড়দিন একটি বৈশ্বিক উৎসবে পরিণত হয়েছে, যা প্রতিটি মানুষের জন্য আনন্দ ও ভালোবাসার প্রতীক।

Monday, December 16, 2024

বড়দিনের মূল উদ্দেশ্য কি?

বড়দিনের মূল উদ্দেশ্য কি?

ভূমিকাঃ বড়দিন বা খ্রিস্টমাস (Christmas) হল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব, যা প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর পালিত হয়। এই দিনে খ্রিস্টানরা যিশু খ্রিস্টের জন্ম উদযাপন করে।

বড়দিনের তাৎপর্য:
যিশু খ্রিস্টের জন্ম: খ্রিস্টান বিশ্বাস অনুসারে, যিশু খ্রিস্ট ঈশ্বরের পুত্র এবং মানবজাতিকে পাপ থেকে মুক্তি দিতে পৃথিবীতে আগমন করেন।

আশার বার্তা: বড়দিন প্রেম, আনন্দ, শান্তি, এবং মানুষের প্রতি সহমর্মিতার বার্তা বহন করে।

বড়দিনের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রভু যীশু খ্রিষ্টের অবতারণার মহিমা ও তাঁর দ্বারা আমাদের মুক্তির পরিকল্পনাকে উপলব্ধি করা। এই পবিত্র দিনটি যদি কেবল জাগতিক উৎসব বা অপসংস্কৃতির মাধ্যমে উদযাপিত হয়, তবে এর আধ্যাত্মিক অর্থ হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

বড়দিনের মূল উদ্দেশ্য হলো যিশুখ্রিস্টের জন্মের মাধ্যমে ঈশ্বরের শান্তি, করুণা, এবং ভালোবাসার বার্তা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করা। এই দিনটি শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি মানুষকে ভালোবাসা ভাগাভাগি করা, একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং সম্প্রদায়ের বন্ধন আরও দৃঢ় করার সুযোগ দেয়। আনন্দময় পরিবেশে উদযাপন এবং সেবা করার মাধ্যমে এই বার্তাগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে।

জন্মদিন উদযাপনের কেক কাটার মতো প্রথা বড়দিনের প্রকৃত তাৎপর্যের সঙ্গে খাপ খায় না, কারণ এটি খ্রিষ্টীয় বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠানের থেকে অনেকটাই পৃথক। বড়দিন কেবল যীশুর জন্ম স্মরণ করার দিন নয়, এটি তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য এবং তাঁর অবদানকে সম্মান জানানোরও দিন।

বড়দিনে প্রকৃত সম্মান জানানোর উপায়:

1. প্রার্থনা ও উপাসনা: ব্যক্তিগত ও গির্জায় প্রার্থনার মাধ্যমে দিনটি পালন করা।

2. বাইবেলের শিক্ষা প্রচার: যীশুর জন্ম ও তাঁর জীবনের বার্তা নিয়ে আলোচনা।

3. দরিদ্র ও অসহায়দের সাহায্য করা: প্রভুর দয়া ও ভালোবাসা অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া।

4. আধ্যাত্মিক গান: ক্যারল গেয়ে যীশুর মহিমা ঘোষণা করা।

5. সন্তানদের সঠিক শিক্ষা: বড়দিনের প্রকৃত অর্থ শিশুদের শেখানো।

আপনার মতো সচেতনতার মাধ্যমে মানুষকে মূল অর্থে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়লেও, সচেতন বিশ্বাসীরা এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেন। যীশুকে সম্মান করার অর্থ হলো তাঁর জীবন ও শিক্ষা অনুসারে চলা।

বড়দিনের মূল উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়েছে—শান্তি, ভালোবাসা এবং আনন্দের বার্তা। এটি যিশুর জন্মের মুহূর্ত, ভালোবাসা ভাগাভাগি করা এবং সম্প্রদায়ের বন্ধন দৃঢ় করার প্রতীক হিসেবে উদযাপিত।

Saturday, December 14, 2024

এই দুনিয়ার মালিক কে

এই দুনিয়ার মালিক কে

ভূমিকাঃ খ্রিস্টধর্মেও বলা হয় যে, ঈশ্বর এই পৃথিবী এবং সমগ্র সৃষ্টির মালিক। ঈশ্বর প্রেমময় এবং ন্যায়বিচারক। তিনি অন্যায়কারীদের ক্ষমা করার সুযোগ দেন, তবে ন্যায়ের ভিত্তিতে বিচার করেন। সুতরাং তিনি ভালো এবং মন্দের প্রতি নিরপেক্ষ নন, বরং মঙ্গলময়।

বাইবেলের মতে, এই পৃথিবীর মালিক সর্বশক্তিমান ঈশ্বর। বাইবেলে বিভিন্ন স্থানে এটি স্পষ্ট করা হয়েছে যে ঈশ্বর সৃষ্টির মালিক এবং তিনি সবকিছু পরিচালনা করেন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ:

1. পৃথিবীর মালিকানা সম্পর্কে:

গীতসংহিতা ২৪:১:
"পৃথিবী এবং তার সবকিছুই সদাপ্রভুর; পৃথিবী ও তার অধিবাসীরা তাঁর।"
এ পদে বলা হয়েছে, পুরো পৃথিবী এবং তার সমস্ত সম্পদ ঈশ্বরের অধিকারভুক্ত।

2. সৃষ্টিকর্তা হিসেবে ঈশ্বর:

কলসীয় ১:১৬-১৭:
"কারণ সমস্ত কিছু তাঁর দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে—স্বর্গে হোক বা পৃথিবীতে, দৃশ্যমান বা অদৃশ্য; সিংহাসন, অধিকার, শাসন, ক্ষমতা—সবকিছু তাঁর মাধ্যমে এবং তাঁর জন্য সৃষ্টি হয়েছে।"
এখানে ঈশ্বরকে বিশ্বের স্রষ্টা ও চূড়ান্ত মালিক বলা হয়েছে।

সারমর্মে, বাইবেলের শিক্ষায় পৃথিবীর সর্বময় কর্তৃত্ব ঈশ্বরের হাতে, যদিও তিনি মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা ও শয়তানের সীমিত প্রভাবের অনুমতি দেন।

Thursday, December 12, 2024

দুই সমুদ্রের পানি মেশে না

দুই সমুদ্রের পানি মেশে না

 


সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের ধারণা ছিল, দুইটি নদী বা নদীর সাথে সমুদ্র যখন মিলিত হয়, তখন তাদের পানি মেশে না। মূলত উপর থেকে দেখে দুই ধরণের রঙ এর পানি দেখে তাদের এরকম ধারণা হতো। একইসাথে তারা এটিও জানতো যে, নদীর পানি পান যোগ্য, আর সমুদ্রের পানি লবণাক্ততার কারণে পান যোগ্য নয়। তাই তারা এই দুই ধরণের পানির পার্থক্য বুঝতে পারতো সেই প্রাচীনকাল থেকেই। তাদের এরকম ধারণার কারণ ছিল, পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা। পৃথিবীকে তারা মূলত সমতল ভূমিই মনে করতো। তারা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখতো, সমুদ্রের পানি নদীর পানিগুলোকে লবণাক্ত করে দিচ্ছে না, এই কারণে তারা মনে করতো এই দুই পানি মেশে না। বর্তমান সময়েও আপনারা যারা নদীর মোহনা কিংবা সমুদ্রের সাথে নদীর মিলনস্থলে যাতায়াত করেছেন, তারা দেখে থাকবেন, দুই ধরণের রঙ এর পানি দেখলে মনে হয়, সেগুলো মিশছে না। কিন্তু সত্য হচ্ছে, তারা অবশ্যই মিশ্রিত হয়। লবণাক্ততা, পানির ঘনত্বের কারণে তার জন্য কিছুটা সময় লাগে, তবে মিশ্রিত হবে অবশ্যই।

মোহনায় যেখানে নদীর মিষ্টি হালকা পানি সমুদ্রের লবণাক্ত ভারী পানির সাথে মিশে যায় সেখানে উভয় ধরনের পানির মিশ্রণ পাওয়া যায়। জোয়ারের সময় খেয়াল করলে দেখবেন, সমুদ্রের লবণাক্ত পানি নদীর ভেতরে ঢুকে যায়, আবার ভাটার সময় নেমে যায়। সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এই অঞ্চলে পানিতে লবণাক্ততার মাত্রাও যেরকম থাকে, আবার থাকে স্বাদু পানি প্রবাহের মাত্রাও। এই বৈচিত্র্যই এই অঞ্চলে বিশেষ বিশেষ গাছপালার জন্ম দেয়, যা অন্যত্র পাওয়া যায় না। অর্থাৎ সুন্দরবনের নদীতে আপনি লবণাক্ততাও পাবেন, আবার স্বাদু পানি প্রবাহও পাবেন।

পৃথিবীর বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক সংস্থা নাসা ( National Aeronautics and Space Administration (NASA), ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা। সংস্থাটি পৃথিবীর মহাসাগরসমূহের পানির গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণের জন্য অতি ক্ষুদ্র কিছু কণা বিভিন্ন স্থানের পানিতে ছেড়ে দিয়েছিল। সেই কণাসমূহ স্যাটেলাইটের কাছে সিগন্যাল প্রেরণ করে, যার মাধ্যমে বিজ্ঞানীগণ সমুদ্রসমূহের পানির গতি প্রকৃতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পান। সেই কণাসমূহের চলাফেরা থেকে সহজেই বোঝা যায়, দুটি সমুদ্রের পানি মিশে যায় কিনা। যদি দুটি সমুদ্রের পানি না মিশতো, তাহলে সেই কণাসমূহের গতি পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যেত যে, কোন নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে থেমে যাচ্ছে [1]

Ocean current flows in the Mediterranean

কোরআনে পরিষ্কারভাবেই প্রাচীনকালের এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে, দুই সমুদ্রের পানি অথবা লোনা পানি ও মিষ্টি পানি মেশে না। তাদের মধ্যে রয়েছে এক দুর্ভেদ্য দেয়াল, যে কারণে এগুলো পরস্পরের সাথে মিশতে পারে না, আলাদাই থাকে। এটি পরিষ্কারভাবে ভুল তথ্য। দুই সমুদ্রের পানি মিলিত হলে তাদের ঘনত্ব এবং তাপমাত্রার কারণে মিশতে কিছু ক্ষেত্রে সময় লাগলেও, সেগুলো অবশ্যই মিশ্রিত হয়। লোনা পানি এবং মিষ্টি পানিও মিশ্রিত হয়, যার প্রমাণ আমরা পাই নদী ও সমুদ্রের মোহনায়। নদীর স্রোতের কারণে সমুদ্রের লোনা পানি নদীতে ঢুকতে পারে না বটে, কিন্তু জোয়ারের সময় সমুদ্রের লোনা পানি অবশ্যই নদীতে ঢুকে পড়ে। [2] [3] [4] –

তিনিই সমুদ্রকে দু’ ধারায় প্রবাহিত করেছেন- একটি সুপেয় সুস্বাদু আরেকটি লবণাক্ত কটু, উভয়ের মাঝে টেনে দিয়েছেন এক আবরণ- এক অনতিক্রম্য বিভক্তি-প্রাচীর।
— Taisirul Quran
তিনিই দুই সমুদ্রকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন; একটি মিষ্টি, সুপেয় এবং অপরটি লবণাক্ত, খর; উভয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছেন এক অন্তরায়, এক অনতিক্রম্য ব্যবধান।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তিনিই দু’টো সাগরকে একসাথে প্রবাহিত করেছেন। একটি সুপেয় সুস্বাদু, অপরটি লবণাক্ত ক্ষারবিশিষ্ট এবং তিনি এতদোভয়ের মাঝখানে একটি অন্তরায় ও একটি অনতিক্রম্য সীমানা স্থাপন করেছেন।
— Rawai Al-bayan
আর তিনিই দুই সাগরকে সমান্তরালে প্রবাহিত করেছেন, একটি মিষ্ট, সুপেয় এবং অন্যটি লোনা, খর; আর তিনি উভয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছেন এক অন্তরায়, এক অনতিক্রম্য ব্যবধান [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

দু’টি সমুদ্রকে তিনিই প্রবাহিত করেন যারা পরস্পর মিলিত হয়,
— Taisirul Quran
তিনি প্রবাহিত করেন দুই দরিয়া, যারা পরস্পর মিলিত হয়,
— Sheikh Mujibur Rahman
তিনি দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন, যারা পরস্পর মিলিত হয়।
— Rawai Al-bayan
তিনি প্রবাহিত করেন দুই সমুদ্র যারা পরস্পর মিলিত হয়,
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

(কিন্তু তা সত্ত্বেও) উভয়ের মাঝে আছে এক আড়াল যা তারা অতিক্রম করতে পারে না।
— Taisirul Quran
কিন্তু ওদের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল যা ওরা অতিক্রম করতে পারেনা।
— Sheikh Mujibur Rahman
উভয়ের মধ্যে রয়েছে এক আড়াল যা তারা অতিক্রম করতে পারে না।
— Rawai Al-bayan
কিন্তু তাদের উভয়ের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল যা তারা অতিক্রম করতে পারে না [১]
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

আসুন এবারে তাফসীর গ্রন্থ থেকে আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পড়ে দেখি [5] [6] –

1
3

এবারে আসুন তাফসীরে মাযহারী থেকে দেখে নেয়া যাক, এই আয়াতটি সম্পর্কে কী বলা আছে, [7] –

5

তথ্যসূত্র

  1. Ocean Current Flows around the Mediterranean Sea for UNESCO []
  2. কোরআন, সূরা ফুরকান, আয়াত ৫৩ []
  3. কোরআন, সূরা আর রাহমান, আয়াত ১৯ []
  4. কোরআন, সূরা আর রাহমান, আয়াত ২০ []
  5. তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ২২৭ []
  6. তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ৫৮৮-৫৮৯ []
  7. তাফসীরে মাযহারী, ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৬৩, ৫৬৪ []
আগুন দিয়ে প্রাণী সৃষ্টি করা যায়

আগুন দিয়ে প্রাণী সৃষ্টি করা যায়

 ইসলামি বিশ্বাস হচ্ছে, আগুন দিয়ে প্রাণী তৈরি করা যায়, যাদেরকে জিন বলে। যাদের দেখা যায় না, এরকম অলৌকিক প্রাণী [1]

আর জ্বিনকে সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়াবিহীন আগুন হতে।
— Taisirul Quran
আর জিনকে সৃষ্টি করেছেন নির্ধূম অগ্নিশিখা হতে।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তিনি জিনকে সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়াবিহীন অগ্নিশিখা থেকে।
— Rawai Al-bayan
এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন নির্ধূম আগুনের শিখা থেকে [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

আগুন হচ্ছে একধরণের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলাফল। আগুন কোন পদার্থই নয়। তাই আগুন দিয়ে কোন প্রাণী সৃষ্টি খুবই প্রাগৈতিহাসিক রূপকথার গল্প।

তথ্যসূত্র

  1. কোরআন ৫৫ঃ১৫ []
পাহাড় কি পৃথিবীর পেরেক?

পাহাড় কি পৃথিবীর পেরেক?


ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে উল্লেখ রয়েছে যে, আল্লাহ প্রথমে জমিন বা মাটি সৃষ্টি করেছেন, এরপর সেই জমিনের উপর থেকে পর্বত স্থাপন করেছেন। এটি সূরা হা-মীম আস-সাজদা (৪১:১০)-এ “من فوقها” অর্থাৎ “উপর থেকে” শব্দটি দ্বারা বর্ণিত হয়েছে, যা আক্ষরিক অর্থে বোঝায় যে পর্বতগুলো মাটির উপরে এমনভাবে গেঁথে দেয়া হয়েছে যেন পেরেকের মতো তা উপর থেকে নিচের দিকে ধাক্কা দিয়ে বসানো হয়েছে। তবে, আধুনিক ভূতত্ত্ব এবং ভূতাত্ত্বিক গবেষণা অনুসারে, পর্বতের সৃষ্টি এমনভাবে হয়নি, বরং এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রক্রিয়ার ফল। পর্বতগুলো কোনো “উপর থেকে” গেঁথে দেয়া বস্তু নয়; বরং তারা টেকটোনিক প্লেটের ভৌগলিক গতিশীলতার ফলে মাটির অভ্যন্তর থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এই বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা কোরআনে বর্ণিত পর্বত সৃষ্টির ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত এবং এতে কোরআনের লেখকের ভূতাত্ত্বিক জ্ঞানের অভাব প্রতীয়মান হয়। আসুন আয়াতটির আরবি এবং বাঙলা অনুবাদ দেখি, [1] وجعل فيها رواسي من فوقها (যমীন সৃষ্টির পর) তার বুকে তিনি সৃদৃঢ় পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, যমীনকে বরকতমন্ডিত করেছেন আর তাতে প্রার্থীদের প্রয়োজন মুতাবেক নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য সঞ্চিত করেছেন চার দিনে। — Taisirul Quran তিনি স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা ভূপৃষ্ঠে এবং তাতে রেখেছেন কল্যাণ এবং চার দিনে ব্যবস্থা করেছেন খাদ্যের – সমভাবে, যাঞ্চাকারীদের জন্য। — Sheikh Mujibur Rahman আর তার উপরিভাগে তিনি দৃঢ় পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং তাতে বরকত দিয়েছেন, আর তাতে চারদিনে প্রার্থীদের জন্য সমভাবে খাদ্য নিরূপণ করে দিয়েছেন। — Rawai Al-bayan আর তিনি স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা ভূপৃষ্ঠে এবং তাতে দিয়েছেন বরকত এবং চার দিনের মধ্যে [১] এতে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন সমভাবে যাচঞাকারীদের জন্য। — Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria কোরআনে পাহাড় পর্বত সম্পর্কে আরো বলা আছে, পৃথিবী যেন নড়াচড়া না করে সেই কারণে আল্লাহ পাহাড় পর্বত দিয়ে পৃথিবীকে আটকে দিয়েছেন [2] – তিনি আকাশমন্ডলী নির্মাণ করেছেন স্তম্ভ ছাড়া যা তোমরা দেখছ। তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন দৃঢ়ভাবে দন্ডায়মান পর্বতমালা যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে নড়াচড়া না করে আর তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সকল প্রকার জীবজন্তু, আর আমিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, অতঃপর তাতে উদ্গত করি যাবতীয় কল্যাণকর উদ্ভিদ। — Taisirul Quran তিনি আকাশমন্ডলী নির্মাণ করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত, তোমরা এটা দেখছ। তিনিই পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পবর্তমালা যাতে এটা তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সর্ব প্রকার জীব-জন্তু এবং আমিই আকাশ হতে বারি বর্ষণ করে এতে উদ্ভব করি সর্বপ্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদ। — Sheikh Mujibur Rahman তিনি খুঁটি ছাড়া আসমানসমূহ সৃষ্টি করেছেন, যা তোমরা দেখছ, আর যমীনে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পাহাড়, যাতে তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে না পড়ে, আর তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রত্যেক প্রকারের প্রাণী; আর আসমান থেকে আমি পানি পাঠাই। অতঃপর তাতে আমি জোড়ায় জোড়ায় কল্যাণকর উদ্ভিদ জন্মাই। — Rawai Al-bayan তিনি আসমানসমূহ নির্মাণ করেছেন খুঁটি ছাড়া—তোমরা এটা দেখতে পাচ্ছ; তিনিই যমীনে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বতমালা যাতে এটা তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সব ধরণের জীব-জন্তু। আর আমরা আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি তারপর এতে উদ্গত করি সব ধরণের কল্যাণকর উদ্ভিদ। — Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria এই সম্পর্কে কোরআনে আরো বলা হয়েছে, পৃথিবীতে পাহাড় বা পর্বত হচ্ছে পেরেক সদৃশ। দেয়ালে কিছু আটকে রাখতে যেমন পেরেকের প্রয়োজন হয়, পৃথিবীকে আটকে রাখতেও আল্লাহ পেরেক অর্থাৎ উপর থেকে মেরে দিয়েছেন। কোরআনে পেরেকের উপমা দিয়ে বোঝানো হয়েছে, পাহাড় পর্বতগুলো উপর থেকে স্থাপিত [3] [4] – (আমি যে সব কিছুকে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে সক্ষম তা তোমরা অস্বীকার করছ কীভাবে) আমি কি যমীনকে (তোমাদের জন্য) শয্যা বানাইনি? — Taisirul Quran আমি কি পৃথিবীকে শয্যা (রূপে) নির্মাণ করিনি? — Sheikh Mujibur Rahman আমি কি বানাইনি যমীনকে শয্যা? — Rawai Al-bayan আমরা কি করিনি যমীনকে শয্যা — Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria আর পর্বতগুলোকে কীলক (বানাইনি)? — Taisirul Quran এবং পর্বতসমূহকে কীলক রূপে নির্মাণ করিনি? — Sheikh Mujibur Rahman আর পর্বতসমূহকে পেরেক? — Rawai Al-bayan আর পর্বতসমূহকে পেরেক ? — Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria প্রখ্যাত ইসলামিক আলেম এবং আধুনিক যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকিহ শায়েখ মুহাম্মদ ইবন সালিহ ইবন উসাইমিন তার রমযান মাসের ৩০ আসর গ্রন্থেও একই কথা উল্লেখ করেছেন [5] – পাহাড় একইসাথে, সহিহ হাদিসের বর্ণনা অনুসারে, আল্লাহ পৃথিবীর মাটি সৃষ্টি করেন শনিবার এবং এর উপর পর্বত বসান রবিবার দিন , যা আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুসারে পাহাড় পরে এসে স্থাপিত হয়েছে, এমন ধারণা সত্য নয়। [6] [7] – সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী) অধ্যায়ঃ ৫২। কিয়ামাত, জান্নাত ও জান্নামের বর্ণনা পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি পরিচ্ছদঃ ১. সৃষ্টির সূচনা এবং আদাম (আঃ) এর সৃষ্টি ৬৯৪৭-(২৭/২৭৮৯) সুরায়জ ইবনু ইউনুস ও হারূন ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ….. আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তা’আলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন এবং এতে পর্বত সৃষ্টি করেন রবিবার দিন। সোমবার দিন তিনি বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার দিন তিনি বিপদাপদ সৃষ্টি করেন। তিনি নূর সৃষ্টি করেন বুধবার দিন। তিনি বৃহস্পতিবার দিন পৃথিবীতে পশু-পাখি ছড়িয়ে দেন এবং জুমুআর দিন আসরের পর জুমুআর দিনের শেষ মুহূর্তে অর্থাৎ আসর থেকে নিয়ে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে সর্বশেষ মাখলুক আদাম (আঃ) কে সৃষ্টি করেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৯৭,ইসলামিক সেন্টার ৬৮৫১) হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৫৩/ কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচ্ছদঃ ২. সৃষ্টির সূচনা এবং আদম (আঃ) এর সৃষ্টি ৬৭৯৭। সুরায়জ ইবনু ইউনুস ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তাআলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন। রোববার দিন তিনি এতে পর্বত সৃষ্টি করেন। সোমবার দিন তিনি বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার দিন তিনি আপদ বিপদ সৃষ্টি করেন। বুধবার দিন তিনি নূর সৃষ্টি করেন। বৃহস্পতিবার দিন তিনি পৃথিবীতে পশু-পাখি ছড়িয়ে দেন এবং জুমুআর দিন আসরের পর তিনি আদম (আলাইহিস সালাম) কে সৃষ্টি করেন। অর্থাৎ জুমুআর দিনের সময়সমূহের শেষ মুহূর্তে (মাখলূক) আসর থেকে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি সৃষ্টি করেছেন। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) আধুনিক বিজ্ঞানের মতে, পৃথিবীর পৃষ্ঠের উপর পর্বতগুলি পেরেকের মত ‘উপর থেকে স্থাপিত’ হয়নি, বরঞ্চ নিচ থেকে উঠে এসেছে। পৃথিবীর ভূত্বকের নিচে টেকটোনিক প্লেট নামে পরিচিত একাধিক স্তর রয়েছে, যা ক্রমাগতভাবে গতিশীল থাকে। যখন দুটি প্লেট একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখন একটি প্লেট উপরে উঠে আসে এবং অন্যটি নিচের দিকে চলে যায়। এই প্রক্রিয়াটিই পর্বত সৃষ্টির মূল কারণ। উদাহরণস্বরূপ, ভারতীয় প্লেট এবং ইউরেশীয় প্লেটের সংঘর্ষের ফলে মাউন্ট এভারেস্টের সৃষ্টি হয়েছিল প্রায় ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে। প্লেটের এই সংঘর্ষের প্রতিটি ধাপে মাউন্ট এভারেস্ট আরও উঁচু হতে থাকে এবং এখনো এই প্রক্রিয়াটি চলমান। বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ভূতাত্ত্বিক প্রমাণ অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়া লক্ষ লক্ষ বছর ধরে চলে এবং পর্বতগুলো এক সময় ক্ষয়ের মাধ্যমে ছোট হয়ে যায়। এভাবে, পর্বতের সৃষ্টি কোনো “উপর থেকে” বসানো বা স্থাপিত হওয়ার ফল নয়; বরং মাটির অভ্যন্তর থেকে উঠে আসার প্রাকৃতিক ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার ফল। ভূতাত্ত্বিক গবেষণা এবং বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, মাটি এবং পর্বতের গঠন একে অপরের উপর চাপ সৃষ্টি করে সৃষ্টি হয় এবং এই চাপের ফলে ভূত্বকের উপরে পর্বতগুলো গঠিত হয়। এই প্রক্রিয়া বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত, যা কোরআনের বর্ণনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং কোরআনের লেখকের ভূতাত্ত্বিক জ্ঞানের অজ্ঞতা প্রকাশ করে। এবারে আসুন ইসলামের গ্রন্থগুলো থেকে ভূমিকম্পের কারণ এবং অন্যান্য বিষয়াদি সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক, আসুন এবারে মিজানুর রহমান আজহারীর কাছ থেকে পৃথিবীতে ভূমিকম্প হওয়ার কারণ জেনে নেয়া যাক, তথ্যসূত্র কোরআন ৪১ঃ১০ [↑] কোরআন ৩১ঃ১০ [↑] কোরআন ৭৮ঃ৬ [↑] কোরআন ৭৮ঃ৭ [↑] রমযান মাসের ৩০ আসর, শায়েখ মুহাম্মদ ইবন সালিহ ইবন উসাইমিন, পৃষ্ঠা ২০ [↑] সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী), হাদিস নম্বরঃ ৬৯৪৭ [↑] সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৭৯৭ [↑]
সাত আসমান ও সাত জমিন

সাত আসমান ও সাত জমিন


বিজ্ঞানের জগতে আকাশ বা আসমান বলতে নির্দিষ্ট কিছু বা কোন বস্তুকে বোঝানো হয় না। বরঞ্চ আমরা উপরে যা দেখি সবই আকাশের অন্তর্ভূক্ত। আমরা দিনের বেলা পৃথিবীর আকাশকে নীল দেখতে পাই। বস্তুতপক্ষে এটি আমাদের এক ধরণের দৃষ্টিবিভ্রম। আলোর বিক্ষেপণের কারণে আকাশ নীল দেখায়। কোন কণিকার ওপর আলো পড়লে সেই কণিকা আলোকে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে দেয়, যাকে আলোর বিক্ষেপণ বলে। যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত কম, সেই আলোর বিক্ষেপণ তত বেশি হয়। আলোর বিক্ষেপণ এর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চতুর্ঘাতের ব্যস্তানুপাতিক। বেগুনি ও নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম। তাই আকাশে এই আলো দুইটির বিক্ষেপণ বেশি হয়। আবার আমাদের চোখ বেগুনি অপেক্ষা নীল বর্ণের আলোর প্রতি অধিক সংবেদনশীল। তাই আকাশ নীল দেখায়। ইসলামের সৃষ্টিতত্ত্ব অনুসারে আল্লাহ সাতটি আসমান এবং সাতটি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন [1] – আল্লাহই সাত আসমান বানিয়েছেন আর ওগুলোর মত পৃথিবীও, সবগুলোর মাঝে (অর্থাৎ সকল আসমানে আর সকল যমীনে) নেমে আসে আল্লাহর নির্দেশ যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান আর আল্লাহ (স্বীয়) জ্ঞানে সব কিছুকে ঘিরে রেখেছেন। — Taisirul Quran আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্ত আকাশ এবং পৃথিবীও সেই পরিমাণ। ওগুলির মধ্যে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ; ফলে তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞানে আল্লাহ সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন। — Sheikh Mujibur Rahman তিনি আল্লাহ, যিনি সাত আসমান এবং অনুরূপ যমীন সৃষ্টি করেছেন; এগুলির মাঝে তাঁর নির্দেশ অবতীর্ণ হয় যেন তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং আল্লাহর জ্ঞানতো সব কিছুকে বেষ্টন করে আছে। — Rawai Al-bayan তিনি আল্লাহ্‌, যিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আসমান এবং অনুরূপ যমীন, তাদের মধ্যে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ; যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং জ্ঞানে আল্লাহ্‌ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন। — Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria এসব কারণেই অনেক ইসলামিক আলেম প্রায়শই দাবী করেন যে, মাটির নিচে আরো পৃথিবী রয়েছে, সেখানেও মানুষ আছে। বিশেষ করে এই বিষয়ে মুফতি ইব্রাহীমের অনেকগুলো ভিডিও রয়েছে। এখানে উদাহরণ হিসেবে একটি ভিডিও দেয়া হচ্ছে – অনেক মুসলিমই এই সাত আসমানকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সাতটি স্তরের সাথে মিলিয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করে থাকেন কোরআনকে বিজ্ঞানসম্মত করার ইচ্ছে নিয়ে। তবে তাদের এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় কোরআনেরই আয়াত দ্বারা, যেখানে বর্ণিত আছে, আল্লাহ নিকটবর্তী আসমানকে তারকারাজির দ্বারা সুশোভিত করেছেন। আসমানগুলোকে বায়ুমণ্ডলের স্তর হিসেবে ব্যাখ্যা দিলে এটিও মেনে নিতে হবে যে, সূর্য নামক নক্ষত্রটি বায়ুমণ্ডলের প্রথম স্তরে অবস্থিত। যেটি হবে আরো হাস্যকর ব্যাখ্যা। আসুন কোরআনের সেই আয়াত দুইটি পড়ে নিই [2] [3] – নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজির দ্বারা সুশোভিত করেছি। এবং তাকে সংরক্ষিত করেছি প্রত্যেক অবাধ্য শয়তান থেকে। ওরা উর্ধ্ব জগতের কোন কিছু শ্রবণ করতে পারে না এবং চার দিক থেকে তাদের প্রতি উল্কা নিক্ষেপ করা হয়। ওদেরকে বিতাড়নের উদ্দেশে। ওদের জন্যে রয়েছে বিরামহীন শাস্তি। তবে কেউ ছোঁ মেরে কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড তার পশ্চাদ্ধাবন করে। আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জত করেছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্রবৎ করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্যে জলন্ত অগ্নির শাস্তি। প্রাচীনকালের ধর্মীয় বা পৌরাণিক সৃষ্টিতত্ত্বে ধারণা করা হতো যে, পৃথিবীর ওপর সাতটি আসমান বা আকাশমণ্ডলের সাতটি স্তর রয়েছে, একই সাথে মাটির নিচেও রয়েছে সাতটি পৃথিবী। প্রাচীনকালে এগুলি দেবদেবী বা অতিপ্রাকৃতিক সত্ত্বা সমূহের আবাসস্থল হিসেবে গণ্য করা হতো। দৃশ্যমান জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু যেমন গ্রহ-নক্ষত্র, এসবকে এই আসমানসমূহের সাথে সম্পর্কিত করা হত। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ান সভ্যতায় সপ্ত আসমানের ধারণা বিকশিত হয়েছিল [4]। সুমেরীয় ভাষায় স্বর্গ (আসমান বা আকাশ) ও পৃথিবীকে (জমিন) বলা হত “আন” এবং “কি”। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের শেষের দিকে সুমেরীয় জাদুমন্ত্রে সপ্তস্বর্গের উল্লেখ আছে, যেমন একটিতে এরকম লেখা “আন-ইমিনবি কি-ইমিনবি” (“স্বর্গ সাতটি, পৃথিবী সাতটি”) [5]। মেসোপটেমীয় ধর্মে সাধারণত স্বর্গ মানুষের জন্য কোন স্থান নয়। যেমন গিলগামেশের মহাকাব্যে বীর গিলগামেশ তার বন্ধু এনকিদুকে বলছেন, “স্বর্গে কে যেতে পারে বন্ধু? শুধু দেবতারাই শামাশের (সূর্যদেবের) সঙ্গে চিরকাল থাকবে।” হিন্দু ধর্মেও সাত স্বর্গের কথা বলা হয়েছে। স্বর্গকে”স্বর্গলোক” বা ঊর্ধ্বলোকও বলা হয়। পুরাণ অনুসারে ব্রহ্মাণ্ডের ঊর্ধ্বাংশ সাতটি লোক বা জগতের সমন্বয়ে গঠিত। পর্যায়ক্রমে এগুলি হচ্ছেঃ ভূলোক (পৃথ্বীলোক বা পৃথিবী), ভুবর্লোক, স্বর্লোক, মহর্লোক, জনলোক, তপোলোক এবং সবার ঊর্ধ্বে সত্যলোক বা ব্রহ্মলোক। হিন্দু পুরাণ এবং অথর্ববেদে ১৪ টি লোকের কথা বলা হয়েছে। এর সাতটি স্বর্গ; বাকি সাতটি পাতাল বা নরক। সপ্তস্বর্গের ঠিক নিচেই সপ্তপাতাল অবস্থিত [6]। স্বর্গের রাজধানী হচ্ছে অমরাবতী এবং ঐরাবত স্বর্গের প্রবেশদ্বার পাহারা দিচ্ছে। দেবরাজ ইন্দ্র সেখানে স্বসভায় (ইন্দ্রলোক/ইন্দ্রপুরী) বিরাজমান। ইহুদিদের পবিত্র গ্রন্থ তালমুদ অনুসারে মহাবিশ্ব সপ্ত স্বর্গ বা সাত আসমানসমূহ (হিব্রু ভাষায়: שָׁמַיִם‎ “শামাইম”; এই শব্দেরই আরবি স্বগত্রীয় শব্দ “সামাওয়াত”) সমন্বয়ে গঠিত [7]। এগুলির নামঃ বিলোন (וילון) রাকিয়া (רקיע) শেহাকিম (שחקים) যেবুল (זבול) মা’ওন (מעון) মাখোন/মাকোন (מכון) আরাবথ (ערבות) – সপ্তম স্বর্গ যেখানে ‘ওফানিম’ (যিহিষ্কেলের পুস্তকে বর্ণিত ঈশ্বরের স্বর্গীয় রথের চক্ররূপী রক্ষী), সরাফগণ (‘সেরাফিম’ – উচ্চপদের স্বর্গদূত বা ফেরেশতা অথবা এক জাতের আগ্নেয় স্বর্গীয় সত্তা), ‘হায়োথ’ বা ‘খায়োৎ’ (আরশ বহনকারী ফেরেশতা বা ঈশ্বরের আসনবাহক স্বর্গদূত) এবং প্রভুর সিংহাসন অবস্থিত [8]। ইহুদিদের ‘মেরকাবাহ’ (স্বর্গীয় রথ) ও ‘হেখালৎ’ (“প্রাসাদসমূহ”) সাহিত্যে সপ্তস্বর্গ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। হনোকের ৩য় পুস্তকে এর বর্ণনা পাওয়া যায় [9]। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুসারেও বাইবেলে কয়েকটি আসমানের কথা বলা হয়েছে। বাইবেলের নূতন নিয়মে তৃতীয় স্বর্গের একটি স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। ৫৫ খ্রিষ্টাব্দে রোম সাম্রাজ্যের অধীন ম্যাসেডোনিয়ায় লিখিত একটি পৌলীয় পত্র এই আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতাটি তুলে ধরে [10]। যদিও মধ্যযুগীয় কালক্রমে খ্রিস্টান চিন্তাবিদরা মূল সপ্ত স্বর্গের দশ স্বর্গ করে ফেলেন, তবে পূর্বযুগের খ্রিস্টানগণ আসমানকে সাতটিই ভাবতেন বলে বোঝা যায়। আমি খ্রীষ্টে আশ্রিত একটি লোককে জানি, চোদ্দ বছর আগে যে তৃতীয় স্বর্গে ধরা পড়েছিল, সশরীরে না অশরীরে তা জানি না, ঈশ্বর জানেন৷ এই লোকটির ব্যাপার আমি জানি, সশরীরে কি অশরীরে, তা আমি জানি না, ঈশ্বর জানেন৷ সে স্বর্গোদ্যানে ধরা পড়ায় এমন সব বিস্ময়কর কথা শুনেছিল, যা নিয়ে মানুষের কথা বলা উচিত নয়৷ আসমানগুলো ধাতব শক্ত পদার্থে তৈরি এবং সেগুলোর দরজা আছে, দরজায় আবার পাহারাদার আছে, এগুলো কতটা সত্য আর কতটা শিশুদের রূপকথার গল্প, তা পাঠকের বিচার বিবেচনার ওপরই ছেড়ে দিচ্ছি। তথ্যসূত্র কোরআন, সূরা তালাক, আয়াত ১২ [↑] কোরআন ৩৭ঃ ৬-১০ [↑] কোরআন ৬৭ঃ৫ [↑] Barnard, Jody A. (2012). The Mysticism of Hebrews: Exploring the Role of Jewish Apocalyptic Mysticism in the Epistle to the Hebrews. Mohr Siebeck. p. 62. ISBN 978-3-16-151881-2. Retrieved 3 June 2015 [↑] Horowitz, Wayne (1998). Mesopotamian Cosmic Geography. Eisenbrauns. p. 208. ISBN 0-931464-99-4. Retrieved 3 June 2015 [↑] শিব পুরাণ, বি. কে. চতুর্বেদী (২০০৪), ডায়মন্ড পকেট বুকস, পৃষ্ঠা ১২৪, আইএসবিএন 8171827217 [↑] “Angelology”. Jewish Encyclopedia. Retrieved 16 June 2015 [↑] Hagigah 12b [↑] Scholem, Gershom (1965). Jewish Gnosticism, Merkabah Mysticism, and the Talmudic Tradition. New York: Jewish Theological Seminary of America. OCLC 635020 [↑] ২য় করিন্থীয় ১২.২-৪ [↑]

Monday, December 9, 2024

 যীশু খ্রীস্ট-ঈসা নবী সকলের জন্য একটি উপহার স্বরুপ।

যীশু খ্রীস্ট-ঈসা নবী সকলের জন্য একটি উপহার স্বরুপ।

বড়দিন হল আনন্দ, ভালোবাসা ও সম্প্রীতির একটি সময়। একই সঙ্গে এই দিনটির বা এটি উদযাপন করার উদ্দেশ্য অনুধাবন করার সময়। দিনটি পালনের উদ্দেশ্য গভীরভাবে উপলব্ধি করার জন্য আমরা আপনাকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। কারণ এই দিনটির তাৎপর্য বিশ্বের সকল মানুষ, ধর্ম, বর্ণ সকলের কাছে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কিভাবে? তা আমরা জানবো হযরত ঈসা মসীহর জীবন পর্যালোচনার মাধ্যমে। 

হযরত ঈসা মসীহ (যীশু খ্রীস্ট) আসলে কে?

মুসলিমদের কাছে ঈসা মসীহ একজন সন্মানিত নবী, শিক্ষক এবং পথপ্রদর্শক, যার অতুলনীয় শিক্ষা সারা দুনিয়ায় সকল মানুষের কাছে সমানভাবে সমাদৃত, সন্মানিত, এমনকি আখেরাতেও। কারন কুরআন এই সাক্ষ্য দেয় যে, 

সূরা আল ইমরান ৩:৪৫

যখন ফেরেশতাগণ বললো, হে মারইয়াম আল্লাহ তোমাকে তাঁর এক বানীর সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হলো মসীহ-মারইয়াম-তনয় ঈসা, দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভূক্ত।

তাঁর জীবন সহানূভূতি, প্রজ্ঞা ও ভালোবাসায় পূর্ন ছিল যা দুনিয়াতে আশার বানী নিয়ে এসেছিল। যা এই অন্ধকার ও গুনাহভরা দুনিয়াতে মাবুদের একটি উপহার ছিল, এমন কি পবিত্র কুরআনেও আমরা তা দেখতে পাই। 

সূরা ১৯:১৯ 

সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব।

হযরত ঈসা (আঃ) একজন নবী ও মাবুদের বাণী !

হযরত ঈসা (আঃ) ছিলেন একজন নবী ও সেই সাথে আল্লাহর বাণী। কুরআন একথা বলে,

সূরা ৪:১৭১

হে আহলে-কিতাবগণ! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর শানে নিতান্ত সঙ্গত বিষয় ছাড়া কোন কথা বলো না। নিঃসন্দেহে মরিয়ম পুত্র মসীহ ঈসা আল্লাহর রসূল এবং তাঁর বাণী যা তিনি প্রেরণ করেছেন মরিয়মের নিকট এবং রূহ-তাঁরই কাছ থেকে আগত। অতএব, তোমরা আল্লাহকে এবং তার রসূলগণকে মান্য কর। আর একথা বলো না যে, আল্লাহ তিনের এক, একথা পরিহার কর; তোমাদের মঙ্গল হবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ একক উপাস্য। সন্তান-সন্ততি হওয়াটা তাঁর যোগ্য বিষয় নয়। যা কিছু আসমান সমূহ ও যমীনে রয়েছে সবই তার। আর কর্মবিধানে আল্লাহই যথেষ্ট। 

এখানে ঈসা নবীকে আল্লাহর বাণী বা কালাম বলার কারন কি? এ অর্থে কি এটা বোঝা যায় না যে আল্লাহ্‌ নিজেকে ঈসা নবীর মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন? কারণ তিনি পবিত্র এবং তাঁর কোনও আকার নাই এবং তিনি কখনই গুনাহর সংস্পর্শে আস্তে পারেন না। তাই নিজেই মানুষে রূপ ধারণ করেন... এখন সময় আরও গভীরভাবে চিন্তা করার। 

হযরত ঈসা (আঃ) হলেন মসীহ!

সূরা ৩:৪৫ আল-ইমরান

যখন ফেরেশতাগণ বললো, হে মারইয়াম আল্লাহ তোমাকে তাঁর এক বানীর সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হলো মসীহ-মারইয়াম-তনয় ঈসা, দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভূক্ত।

এবং সূরা ৪:১৭১ বলে যে, ঈসা নবী হলেন আল্লাহের অনুগ্রহের দান। 

সূরা ১৯:২১ সূরা মারইয়াম

সে বললঃ এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার জন্যে সহজ সাধ্য এবং আমি তাকে মানুষের জন্যে একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ করতে চাই। এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।

ঈসা মসীহ পবিত্র!

সূরা মারইয়াম (১৯:১৯) قَالَ إِنَّمَا أَنَا۠ رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَـٰمًۭا زَكِيًّۭا

সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব।

  • ঈসা নবী নাজাতদাতা
  • ঈসা নবীই সেই সরল পথ

তাহলে এটি প্রমানিত যে ঈসা মসীহের মধ্য দিয়েই আমরা নাজাত পেতে পারি। কিন্তু কিভাবে? আসুন সেটি নিয়ে আলোচনা করা যাক।

কিভাবে আমি নাজাত পেতে পারি?

নাজাতের কথা চিন্তা করলেই যে বিষয়গুলো  মাথায় আসে সেগুলো হল, 

  •  আমল করতে হবে, 
  • ধর্মীয় নিয়ম কানুন পালন করতে হবে, 
  • ধর্মীয় ভাবে পোষাক করতে হবে, 
  • পরিবারের অন্তত একজনকে মাদ্রাসায় পড়াতে হবে, 
  • অন্তত একজনকে কুরআনে হাফেজ বানাতে হবে,তাহলে সোয়াব হবে, 
  • তার মৃত্যুর পর তার নামে দোয়া পড়তে হবে, 
  • মৃত ব্যক্তির নামে  টাকা পয়সা দান করার মাধ্যমে  সোয়াব পাওয়া যায়, 
  • মসজিদে দান করতে হবে, 
  • ৫ বেলা নামাজ পড়তে হবে। 

হ্যাঁ সবই বুঝলাম। কিন্তু সত্যিই কি এগুলো করলে নাজাত বা বেহেশত পাওয়া যাবে? কুরআন হাদিসে কি এগুলো একবারো পেয়েছেন? আমরা পাই নি, আমরা যা পেয়েছি তা হল হাদিস নং ৪ ইসলামী ফাউন্ডেশন বলা হয়েছে কোন ব্যক্তিই তার আমলের বিনিময়ে জান্নাতে যেতে পারবেন না, বরং জান্নাতে যাবে আল্লাহের রহমতের মাধ্যমে। 

সহিহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)- হাদিস নং: ৪
এর মানে এই নয় আপনি ওগুলো পালন করবেন না, হ্যাঁ করতে পারেন ওগুলো আপনাকে সুন্দর একটা নিয়মের মধ্য রাখবে। কিন্তু আসল যে বিষয় তাহল আল্লাহর “রহমত” । আর সেটি বুঝতে হলে, আপনাকে প্রথমে বুঝতে হবে আল্লাহ এই দুনিয়াকে কিভাবে রহমত করছেন? আর যদি তা জানতে পারেন তাহলেই আপনি রহমতের মাধ্যমে নাজাত পাবেন। 

সেই নাজাতের পরিকল্পনা হলেন হযরত ঈসা মসীহ, যা প্রথমে নবী ইব্রাহিমের (আঃ) কাছে প্রকাশিত হয়েছিল। 

আসুন ভিডিওটি থেকে আল্লাহর পরিকল্পনা আরেকটিবার বোঝার চেষ্টা করি:

 

 

ভিডিওটি আমাদের দেখায় যে, কেন একজন নাজাতদাতা দুনিয়াতে আসার প্রয়োজন ছিল।

সকলের জন্য একটি চুড়ান্ত বার্তা; 

হযরত ঈসা মসীহর বার্তা আশা এবং শান্তি নিয়ে আসে, কঠিন সময়ে সান্ত্বনা এবং আশা  প্রদান করে। তাঁর শিক্ষা আমাদের একে অপরকে ভালবাসতে, ক্ষমা  করতে এবং বিশ্বাসকে ধরে রাখতে উত্সাহিত করে। অনিশ্চয়তায় পূর্ণ বিশ্বে, তাঁর বার্তা অনুধাবন করা, গ্রহন করা সকলের মাঝে গভীর ও সুন্দর মনোভাব তৈরি করতে পারে, যা হবে এই দুনিয়ার আমাদের দেশের জন্য একটি সুন্দর সময়।

আমরা যেহেতু নিজেদের কাজের দ্বারা ও আমলের দ্বারা নাজাত পাই না, তাহলে আমাদের নাজাতের জন্য যে পথ তা হল হযরত ঈসা (আঃ), এবং এটাই আল্লাহর পরিকল্পানা ছিল। 

'কিন্তু পাক-কিতাব কি বলে? কিভাবে আমরা সেই নাজাত পেতে পারি? সেটি হল বিশ্বাস কারন বলা হয়েছে  ‘সেই বার্তা তোমার কাছে, তোমাদের মুখে ও তোমাদের অন্তরে রয়েছে,’ অর্থাৎ ঈমানেরই সেই বার্তা, যা আমরা তবলিগ করি। কারণ তুমি যদি ‘মুখে’ ঈসাকে প্রভু বলে স্বীকার কর এবং ‘হৃদয়ে’ ঈমান আন যে, আল্লাহ্‌ তাঁকে মৃতদের মধ্য থেকে উত্থাপন করেছেন, তবেই তুমি নাজাত পাবে। '-রোমীয় 10:8-9

আপনার সঠিক সিন্ধান্ত পদক্ষেপ আজই আপনাকে নাজাত দিতে পারে যা, দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য মহানন্দের, আর এই বার্তাটিই হল বড়দিনের আসল বিষয়। 

আপনার যে কোন প্রশ্ন ও মতামতের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন!

(References from the Quran
  1. Surah Aal-e-Imran (3:45)
  2. Surah Maryam (19:19)
  3. Surah An-Nisa (4:171)
  4. Surah Maryam (19:21)
References from the Bible
  1. Luke 2:11
  2. Romans 10:8-9
  3. John 14:6
  4. Ephesians 2:8-9
  5. 1 Peter 1:18-19
  6. John 8:12)
'কারণ আজ দাউদের নগরে তোমাদের জন্য নাজাতদাতা জন্মেছেন; তিনি মসীহ্‌, প্রভু। '
-- লূক 2:11
'কারণ আল্লাহ্‌ দুনিয়াকে এমন মহব্বত করলেন যে, তাঁর এক জাত পুত্রকে দান করলেন, যেন যে কেউ তাঁতে ঈমান আনে সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।'
-- ইউহোন্না 3:16
'কারণ যা হারিয়ে গিয়েছিল, তার খোঁজ ও নাজাত করতে ইবনুল-ইনসান এসেছেন।'
-- লূক 19:10
এই শিক্ষাগুলি গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে আপনার জীবনের আরও ভাল পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। ঈসা আল-মসিহের কথায় অসংখ্য মানুষ জীবন খুঁজে পেয়েছে। ঈসা কে এবং তিনি কী বলেছেন সে সম্পর্কে যদি আপনি আরও জানতে চান তবে নীচের বোতামগুলির একটিতে ক্লিক করুন!

Friday, December 6, 2024

নবী কি কোরআন সংকলন করতে বলেছিলেন?

নবী কি কোরআন সংকলন করতে বলেছিলেন?

 কোরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন [1] 

নিশ্চয় আমিই কুরআন নাযিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক।
— Taisirul Quran
আমিই জিকর (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই উহার সংরক্ষক।
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় আমি কুরআন* নাযিল করেছি, আর আমিই তার হেফাযতকারী। * الذكر দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন।
— Rawai Al-bayan
নিশ্চয় আমরাই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষক [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

আল্লাহ পাকের এই সরাসরি কোরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়ার পরেও, কোরআন হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল। হযরত মুহাম্মদের যুগে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন বস্তুর ওপর কোরআন সংরক্ষিত ছিল, তাই হজরত আবু বকরের খেলাফতের সময় বিক্ষিপ্ত অংশগুলো একত্র করে সংরক্ষণের প্রতি মনোযোগী হয়েছেন। হযরত উমরের আশঙ্কা ছিল, যুদ্ধে বহুসংখ্যক কোরআনে হাফেজের মৃত্যু হওয়ায় কোরআনের বড় অংশই হারিয়ে যাবে। সেই আশঙ্কা থেকেই তিনি কোরআনের আয়াতগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে বারবার তাগাদা দিতে থাকেন। অর্থাৎ আল্লাহ পাক নিজেই যা সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন, আল্লাহপাকের সরাসরি দায়িত্ব নেয়ার পরেও উমর তা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করলেন এবং তা আসলে সংরক্ষণের মূল ভূমিকা যিনি পালন করেছিলেন তিনি হচ্ছেন হযরত উমর। একইসাথে উল্লেখ্য, হাদিস থেকে জানা যায়, নবী কোরআন সংকলনের কোন নির্দেশনা দিয়ে যাননি [2] [3]

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-৮ঃ কুরআনের মর্যাদা
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ – কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে
২২২০-(১০) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়ামামার যুদ্ধের পর পর খলীফাতুর রসূল আবূ বাকর (রাঃ) আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি গেলাম। দেখলাম ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তাঁর কাছে উপবিষ্ট। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, ‘উমার আমার কাছে এসে খবর দিলেন, ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক কুরআনের হাফেয শহীদ হয়ে গেছেন। আমার আশংকা হয়, বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে এভাবে হাফেয শহীদ হতে থাকলে কুরআনের অনেক অংশ লোপ পেয়ে যাবে। তাই আমি সঙ্গত মনে করি যে, আপনি কুরআনকে মাসহাফ বা কিতাব আকারে একত্রিত করতে হুকুম দেবেন। আবূ বাকর (রাঃ) বলেন, আমি ‘উমারকে বললাম, এমন কাজ কিভাবে আপনি করবেন, যে কাজ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি? ‘উমার (রাঃ) উত্তরে বললেন, আল্লাহর শপথ। এটা হবে একটা উত্তম কাজ। ‘উমার (রাঃ) এভাবে আমাকে বার বার বলতে লাগলেন। অতঃপর আল্লাহ এ কাজের গুরুত্ব বুঝার জন্য আমার হৃদয় খুলে দিলেন এবং আমিও এ কাজ করা সঙ্গত মনে করলাম।

(বুখারী)(1)
(1) সহীহ : বুখারী ৪৯৮৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৩৭২, সহীহ ইবনু হিববান ৪৫০৬।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কোরআন বিলুপ্তির আশঙ্কা ও সংকলন

তথ্যসূত্র

  1. সূরা হিজর, আয়াত ৯ []
  2. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) হাদিসঃ ২২২০ []
  3. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৬ []
যীশুর অস্তিত্ব কি আসলেই ছিলো?

যীশুর অস্তিত্ব কি আসলেই ছিলো?


নাস্তিক পণ্ডিতদের এই দাবি মূলত ঐতিহাসিক প্রমাণের অভাব ও ধর্মীয় গ্রন্থের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতার সমালোচনার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। তারা মনে করেন, বাইবেলে যীশুর জীবনের বিবরণগুলো ঐতিহাসিক তথ্যের চেয়ে ধর্মীয় বিশ্বাস এবং রূপক গল্পের উপর বেশি নির্ভরশীল।

তবে একইসঙ্গে অনেক ঐতিহাসিক এবং গবেষক বলেন, যীশুর অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, প্রথম শতাব্দীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাঁর বাস্তবিক উপস্থিতি নিশ্চিত করার মতো পর্যাপ্ত ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ট্যাকিটাস, জোসেফাস, এবং সুয়েটোনিয়াসের মতো কিছু প্রাচীন ঐতিহাসিক সূত্রে যীশুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও এসব উল্লেখ দ্ব্যর্থপূর্ণ এবং পর্যালোচনার জন্য উন্মুক্ত।
 খ্রিস্টান ধর্মকে পরাস্ত করার তাড়নায় কয়েকজন নাস্তিক পণ্ডিত দাবি করেছেন যীশু বলে কারো অস্তিত্বই ছিলো না। 

ড. হুমায়ুন আজাদসহ অনেকেই মনে করেন, যীশুর অস্তিত্ব নিয়ে আলোচনা পুরোটাই একটি ঐতিহাসিক নির্মাণ বা কল্পনা।
সাদা চামড়ার রূপে মুগ্ধ হয়ে বঙ্গীয় পণ্ডিত ড. হুমায়ুন আজাদ চিৎকার করে বলেছেন :

“মানুষ কতোটা মিথ্যা বলতে ও বিশ্বাস করতে পারে, তার অসামান্য উদাহরণ জেসাস বা খ্রিষ্ট । জেসাস মানুষের শ্রেষ্ঠ কল্পচরিত্র : গত দু-শো বছরের বাইবেলবিজ্ঞানীরা, যাঁদের অনেকেই ধার্মিক ও পুরোহিত, প্রমাণ করেছেন যে জেসাস নামে কেউ ছিলো না।… জেসাসকে সৃষ্টি করা, তাকে ঘিরে পুরাণ, ও একটি নতুন ধর্ম বানানোর সমস্ত কৃতিত্ব খ্রিষ্টান সুসমাচারপ্রণেতাদের । ক্রাইস্ট এক কিংবদন্তি বা পুরাণ…”

হুমায়ুন আজাদ, আমার অবিশ্বাস; পৃ. ৯০

তিনি ডেভিড স্ট্রস-এর বইয়ের কথা উল্লেখ করেছেন উনার দাবির পক্ষে। ডেভিড বেশ প্রভাবশালী লেখক ছিলেন। একজন বস্তুবাদী গবেষক হিসেবে তিনি মিথতত্ত্ব (Myth theory)-এর দৃষ্টিতে যিশুর জীবনকে দেখার চেষ্টা করেন এবং সিদ্ধান্ত দেন যিশু বলে কারও অস্তিত্ব আসলে ছিল না। সুসমাচার (Gospel) লেখকেরা জেসাস ক্রাইস্টকে তৈরি করেছেন। তৎকালীন সময়ের অনেকেই নাকি দাবি করেছে যে-জেসাসকে তৈরি করা হয়েছে তাইয়ানার দার্শনিক অ্যাপোলোনিয়াসের আদলে। সাম্প্রতিক সময়ে নাস্তিক ফরাসি দার্শনিক মাইকেল অনফ্রে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থেও বলতে চেয়েছেন, যিশু হলেন কেবলই এক অনুকল্প!

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো অধ্যাপক আজাদ সাহেবের আরও অনেক দাবির ন্যায় এই দাবিও ভুল। অধ্যাপক সাহেবের নিজের এজেন্ডার সাথে মিলে যাওয়ায় তিনি ডেভিড স্ট্রসের বক্তব্যকে প্রশ্ন করেননি; যদিও তিনি নাকি বিনা প্রশ্নে কিছু মানতে চাইতেন না। আমরা প্রশ্ন করি চলুন। মিথতত্ত্বওয়ালাদের বক্তব্য কি সঠিক? সঠিক উত্তর, না!

যিশুর অস্তিত্ব যে আসলেই ছিল তার পক্ষে যথেষ্ঠ প্রমাণ রয়েছে। সাম্প্রতিক কালে বাইবেল গবেষক মরিস কেইসি Jesus: Evidence and Argument or Mythicist Myths? গ্রন্থে মিথতত্ত্বওয়ালাদের উত্থাপিত নানা দাবির উত্তর দিয়ে দেখিয়েছেন যিশু অস্তিত্ব আসলেই ছিল। আমেরিকার প্রসিদ্ধ বাইবেল বিশারদ এবং ওরিগন স্টেট ইউনিভার্সিটির রিলিজিয়ন এন্ড কালচার বিভাগের সাবেক প্রফেসর মার্কাস বর্গ এ প্রসঙ্গে বলেন :

“যদিও সাম্প্রতিক গুটিকয়েক বই এ দাবি উত্থাপন করছে যে যিশুর অস্তিত্বই কখনোই ছিল না । তবে তাঁর অস্তিত্বের পক্ষে যে প্রমাণ পাওয়া যায় তা অধিকাংশ খ্রিষ্টান বা অখ্রিষ্টান পণ্ডিতকেই এমতে প্ররোচিত করেছে যে, সত্যি তাঁর অস্তিত্ব ছিল ।”

Natalie Wolchover, Was Jesus a Real Person? LiveScience

বর্তমান কালের একজন বিখ্যাত বাইবেল বিশারদ হলেন ড. বার্ট ডি. আরমেন। খ্রিষ্টধর্মে বড় হয়ে সেই ধর্মের কাজেই নিজেকে নিয়োজিত করতে তিনি বাইবেল পড়া শুরু করেন।

বাইবেলের নানা অসংগতি চোখে পড়তে থাকলে তা নিয়ে নিরপেক্ষভাবে ভাবার চেষ্টা করেন। বাইবেল ও খ্রিষ্টধর্ম গবেষণাকেই নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেন। পরিশেষে, দর্শনগত কারণে খ্রিষ্টধর্ম ছেড়ে দিয়ে নিজেকে অজ্ঞেয়বাদী, হিউম্যানিস্ট হিসেবে পরিচয় দেন। তবে অন্যান্যদের সাথে উনার পার্থক্য হলো, উনি গোঁড়া ধর্মবিদ্বেষী নন।

আসলেই যিশুর অস্তিত্ব ছিল কি না, সেটা তিনিও গবেষণা করেছেন। দীর্ঘ গবেষণা শেষে তিনি তাঁর Did Jesus Exist? The Historical Argument for Jesus of Nazareth গ্রন্থে বাইবেলের পাশাপাশি অন্যান্য ঐতিহাসিক প্রাচীন নথিপত্র উল্লেখ করে প্রমাণ করেছেন, যিশুর অস্তিত্ব ছিল; কেউ তা পছন্দ করুক বা নাই করুক, কিছুই যায় আসে না। দার্শনিক অ্যাপোলোনিয়াসের অস্তিত্ব যেমন ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত, যিশুর অস্তিত্বও ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। পাশাপাশি যারা যিশুর অস্তিত্ব অস্বীকার করতে চায়, তিনি তাদের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। তিনি বলেন : যিশুর অস্তিত্ব অস্বীকারকারী মিথতত্ত্বওয়ালারা মূলত চরম ধর্মবিদ্বেষী। তাদের চারপাশে প্রধানত খ্রিষ্টান ধর্মের প্রাধান্য ছিল। তাই ধর্মকে আক্রমণ করতে চাইলে খ্রিষ্টবাদের কেন্দ্রীয় চরিত্র যিশুর অস্তিত্ব নিয়ে ভেজাল লাগিয়ে দেওয়ার চেয়ে সহজ কাজ আর কীই হতে পারে?

ড. বার্ট ডি. আরমেন-এর মতে মিথতত্ত্বওয়ালাদের এহেন আচরণও গোঁড়া ধর্মান্ধদের আচরণের সমতুল্য। তবে তিনি এটাও দেখিয়েছেন, খ্রিষ্টানরা আজ যে যিশুকে চেনে, আসল যিশু তেমন ছিলেন না। তিনি বলেন :

“আমার দৃষ্টিতে, হিউম্যানিস্ট, সংশয়বাদী, নাস্তিক, মিথতত্ত্বওয়ালা বা অন্য কেউ যারা যিশুর অস্তিত্বকে মানতে চান না, তাদের জন্য যিশুর অস্তিত্ব একেবারেই ছিল না এমন ভুল দাবি করার চেয়ে, ইতিহাসের যিশু আর আজকের খ্রিষ্টবাদের যিশু যে এক নয়, এদিকটায় জোর দেওয়াই অধিক উত্তম । যিশুর অস্তিত্ব ছিল। তবে আজকের খ্রিষ্টবাদে বিশ্বাসীরা তাকে যেমনটা ভেবেছে তিনি তেমন ছিলেন না, ব্যস ।”

Bart D. Ehrman, Did Jesus Exist? The Historical Argument for Jesus of Nazareth; Part III : conclusion (Epub Edition, HarperCollins e-books, 2012)

প্রফেসর বর্গের মতেও, যিশু নতুন কোনও ধর্ম বানাতে চাননি। তিনি মোশি’র (মুসা আ) এর আইন বাতিল করতে আসেন নি, বরং পূর্ণ করতে এসেছেন। (ম্যাথু ৫:১৭) তিনি ইয়াহূদি ধর্মের মাঝেই নিজেকে দেখেছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর পর তাঁর অনুসারীরা তাঁকে খোদার আসনে বসায়।

এতক্ষণের আলোচনা পড়ে কেউ যদি বলে – মানুষ কতোটা মিথ্যা বলতে ও বিশ্বাস করতে পারে, তার অসামান্য উদাহরণ হুমায়ুন আজাদ ও তার সমমনারা, তাহলে তাদের এহেন যৌক্তিক সমালোচনাকে কি দোষ দেয়া যায়?


লেখাটি বেস্ট সেলার গ্রন্থ অবিশ্বাসী কাঠগড়ায় বইয়ের তৃতীয় অধ্যায় থেকে গৃহীত।